
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের তাঁর রয়েছে দূর্দান্ত প্রভাব। ১৯৯৬ সালে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে গড ফাদার উপধিও তিনি পেয়েছেন। ওসমান পরিবারের এই ব্যাক্তি আর কেউ নন,তিনি হলেন একেএম শামীম ওসমান। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের মনোনীত প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সাথে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন কানাডা।
সেই সময় তিনি বোরকা পরে পালিয়েছিলেন বলেও একটি কথা দেশজুড়ে চাউর আছে। এবার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর শামীম ওসমান দ্বিতীয়বারের মতো পালিয়ে গেলেন। তবে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জেই ছিলেন। এবার নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে শামীম ওসমানের খুব বেগ পেতে হয়েছিলো। ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাচঁতে শামীম ওসমান রাইফলে ক্লাব থেকে বিকেল হওয়ার কিছুক্ষণ আগে বের হয়ে চাষাঢ়ায় একটি বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে বের হওয়ার জন্য সন্ধ্যা নাগাদ সব পথ তাঁর যখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তখন তিনি অসহায়ের মতো দলের মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতার আশ্রয় চেয়েছিলেন । যাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে অন্তত তাঁকে বের করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তার এ আকুলতায় মাত্র গুটি কয়েকজন মানুষের সহযোগীতা পেয়েছিলেন তিনি। এমন দাবী একাধিক সূত্রের। অবশেষে শামীম ওসমান ইন্ডিয়ার ব্রডার পার হতে সক্ষম হয়েছেন বলেও সূত্রের দাবী।
নারায়ণগঞ্জে অনেক আগে থেকেই সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ রয়েছে শামীম ওসমান ও তার অনুগতদের বিরুদ্ধে। নাারয়ণগঞ্জের এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে শামীম ওসমানের দোসরদের অর্থ লোপাটের অভিযোগ নেই। ঝুট,বালু মহাল,পরিবহন সেক্টরেও তিনি ও তাঁর ভাতিজার আজমেরী ওসমানের ছিলো একচ্ছত্র আধিপত্য। শুধু বিভিন্ন সেক্টরেই শামীম ওসমানের আধিপত্য ছিলো না, সেই সাথে জেলার বিভিন্ন থানা কমিটি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটিতেও তাঁর ছিলো আধিপত্য।
তাঁর স্ত্রী সালমা ওসমান লিপির সাথে,বিশেষ করে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের যোগাযোগ ছিলো বেশি। অনেকেই শামীম ওসমানকে ম্যানেজ করতে সালমা ওসমান লিপিকে বেশি ব্যবহার করতেন। লিপি ম্যানেজতো শামীম ওসমান ম্যানেজ। এই নীতি ব্যবহার করে অনেকে ফায়দা হাসিলও করতেন। বিশেষ করে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান,মেম্বার প্রার্থীরা লিপি ওসমানের গুড বুকে নাম লেখাতে পারলেই তার কপাল খুলে যেতো। অপরদিকে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের জেলা ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে নাম না থাকলেও,তিনি তাঁর ছেলেকে জেলা ছাত্রলীগের হর্তাকর্তা বানিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও অয়ন ওসমানের দ্বারা জেলায় নতুন কোনো ছাত্রলীগের কমিটির অগ্রগতি হয়নি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুটা ছিলো কোটা সংস্কারের আন্দোলন। কিন্তু এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যখন নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ গুলি ছোড়ে হত্যাযজ্ঞ চালায় তখনই পরিস্থিতি ভিন্নরুপ ধারণ করে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যখন পুরো দেশ উত্তাল তখনও শামীম ওসমানের ঘোর কাটেনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঠেকাতে শামীম ওসমানের নির্দেশে তার ছেলে অয়ন ওসমান নারায়ণগঞ্জে তার অনুসারীদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাঠে নামিয়ে ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নম পার্কে যখন আগুন জ¦লছিলো, তখন অয়ন ওসমানের গাড়ি বহর থেকে গুলি ছোঁড়া হয়েছিলো বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্র আন্দোলন যখন দিনের পর দিন উত্তাল হয়ে উঠেছিলো তখনও শামীম ওসমান ভাবতে পারেননি এবারও তার পালিয়ে যেতে হবে। গত ৪ আগষ্টের আগেই তিনি তাঁর স্ত্রী,পুত্র,ছেলের স্ত্রী ও নাতিকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ের্ছিলেন নিরাপদ স্থানে। কিন্তু তিনি সরকার পতনের দিনও নারায়ণগঞ্জেই অবস্থান করলিন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা আসার পর পরই শামীম ওসমান রাইফেল ক্লাব থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যান।
তবে বিকেলের পর থেকে যখন পরিস্থিতি সম্পূর্ন ভিন্নদিকে মোড় নিতে থাকে তখন ঘাবড়ে গিয়েছিলেন শামীম ওসমান। এ সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে বের হওয়ার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরেও তিনি ছিলেন বিচলিত। নিজ জেলা থেকে নিরাপদে বের হওয়ার জন্য তিনি তার বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে মোবাইলে ফোন করেছিলেন। কিন্তু তেমন কোনো সারা পাননি। পরবর্তীতে ৬ আগষ্ট ভোরে তিনি ভারতের ব্রডারের দিকে রওয়ানা হন।
আর সেখান থেকেই শামীম ওসমান নিরাপদে দেশের বাইরে অবস্থান করতে পেরেছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। যার ডাকে লাখো মানুষের ঢল নামে বলে যিনি বিভিন্ন বক্তব্যে জোর গলায় প্রচার করতেন,কিন্তু তাঁর দুঃসময়ে তিনি তার পাশে ২০ জনের বেশি লোক পাননি বলেও সূত্রের দাবী। আর এবার দেশ ছাড়তে গিয়ে শামীম ওসমান অনেকটা ভয় পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন সূত্রটি।