যে কোন মূল্যে আইভীর সাথে ঐক্য চান দুই এমপি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:০০ পিএম

# সেলিম ওসমানের সাথে মঞ্চে উঠলেও নানা কারণে শামীম ওসমানের সাথে উঠতে নারাজ আইভী
# উন্নয়নে শামীম ও আইভী একতাবদ্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করেন অনেকে
বিএনপির নেতাকর্মীরা সহ আরো অনেকে মনে করেন যে যাই মনে করুক না কেনো বিগত পনেরো বছরের মধ্যে এবারই চরম বেকায়দায় পরেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই মুহুর্তে মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় চলছে। সরকারের মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে খোদ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এই ভিসা নীতি নিয়ে নানা রকম কথা বলছেন। তার কারণও রয়ছে। সরকার এই ভিসা নীতি নিয়ে যাই বলুক না কেনো বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ অর্থনীতি সহ আরো অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল।
বিশেষ করে বাংলাদেশের গার্মেন্ট পন্য রপ্তানীর এক নম্বর গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশেকে এক নম্বর সাহায্য দাতা দেশও যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া এ দেশের উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্ত শ্রেনীর গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র। তারা নিজেরা গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলিতে বসবাস করতে চান এবং সন্তানদের সেখানে স্থায়ী করতে চান। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে যেভাবে সরকারকে চেপে ধরেছে তাতে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
তাই এমতাবস্থায় নারায়ণগঞ্জের দুই এমপি হয়তো অনুধাবন করছেন যে এই মুহুর্তে নিজেদের মাঝে বিভেদ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান চান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে ঐক্য। তাই দুই এমপি তাদের এই আগ্রহের কথা নানা ভাবে মেয়র আইভীকে জানিয়েছেন।
কিন্তু আইভী সেলিম ওসমানের সাথে এক মঞ্চে বসতে চাইলেও তিনি শামীম ওসমানের সাথে এক মঞ্চে উঠতে চান না। কারণ শামীম ওসমান নানা ইস্যু তৈরী করে বিগত বছরগুলিতে আইভীর সাথে যে আচরন করেছেন তা তিনি ভুলতে পারছেন না বলে আইভীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলি জানায়। এটাও সত্য যে শামীম ওসমান এক সময় আইভীকে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করতে চেয়েছিলেন। তিনি এমন কোনো খারাপ আচরন নেই যা আইভীর সাথে করেননি।
তিনি বার বার আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন এবং এসব দুর্নীতির তদন্তও করিয়েছেন। নিজে সংসদে এবং দূদকে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমান হয়েছে আইভী কোনো রকম দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। এছাড়া শামীম ওসমান টানা দশ বছর আইভীর পেছনে লেগে ছিলেন। তিনি আইভীর উন্নয়ন কাজেও সরাসরি বাধার সৃষ্টি করেছেন। শেখ রাসেল পার্ক যাতে নির্মান করতে না পারেন তার জন্য এমন কোনো প্রচেষ্ঠা নেই যা কিনা শামীম ওসমান করেননি।
কিন্তু আইভী ছিলেন অনড় এবং অবিচল। তিনি যেকোনো মূল্যে শেখ রাসেল পার্ক নির্মানে বদ্ধপরিকর ছিলেন। এবং শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হয়েছেন। এছাড়া মেয়র আইভীকে উন্নয়ন কাজে বাধা দিতে গিয়ে শামীম ওসমানের ইশারায় সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা পর্যন্ত হয়েছিলো। আর আইভীর বিরুদ্ধে সারা নারায়ণগঞ্জ জেলায় অশ্লীল পোষ্টার দিয়ে ভরে ফেলা হয়েছিলো।
এছাড়া বছরের পর বছর চেষ্টা করেও আইভী নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত অবৈধ হকারদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে পারেন নাই। বরং ফুটপাত দখল করতে গিয়ে মেয়র আইভী শামীম ওসমানের ক্যাডার বাহিনী এবং হকারদের হাতে মার খেয়েছেন পর্যন্ত। ফলে এসব কারনে মেয়র আইভী শামীম ওসমানের সাথে এক মঞ্চে বসতে চান না।
তবে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের অনেকে মনে করেন মেয়র আইভী যেহেতু সাহসীকতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং শামীম ওসমান হাজার চেষ্টা করেও তার তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেন নাই, তাই তার উচিৎ জনগনের স্বার্থে ব্যক্তিগত ক্ষোভ এবং অভিমান ভুলে দুই এমপির সাথে বসা। কারণ শামীম ওসমান উন্নয়নে দক্ষ নন বলে মনে করেন তার ফতুল্লা এলাকার মানুষ। তাই আইভীর উচিৎ শামীম ওসমানকে উন্নয়নে সহায়তা করা।
কেনোনা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের চারপাশে যে সকল ইউনিয়ন রয়েছে এগুলো হলো শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা। আর আইভী এবং শামীম ওসমান যেহেতু একই দল করেন তাই তাদের উচিৎ এক সাথে উন্নয়ন করা। আইভীর এলাকার পানি নদীতে গিয়ে নামে কাশীপুর, এনায়েতনগর এবং ফতুল্লা ইউনিয়নের উপর দিয়ে। তাই এই ক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের একে অপরকে সহায়তা করা উচিৎ বলে দুই এলাকার জনগন মনে করেন।
এছাড়া ফুটপাত হকার মুক্ত করা, নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজট মুক্ত করা সহ আরো অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো আইভী ও শামীম ওসমান ঐক্যবদ্ধ হলে সহজে সমাধান করা সম্ভব। তাই এই মুহুর্তে আওয়ামী লীগের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাতে আইভী, শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমানের একতাবদ্ধ হওয়া জরুরী বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী সমর্থকরা। তাই আগামী দিনগুলিতে তাদেরকে এক মঞ্চে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। এস.এ/জেসি