Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

রাজাকার পুত্রের আমন্ত্রণে বন্দরে আসছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী!

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৩, ০৫:১৭ পিএম

রাজাকার পুত্রের আমন্ত্রণে বন্দরে আসছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী!
Swapno


নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ এলাকায় কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দাওয়াত কার্ডে দেখা যায় এই অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাজাকার পুত্র সেলিম রেজা।

 

 

নারায়ণগঞ্জের রাজাকার তালিকায় বন্দর উপজেলায় সেলিম রেজার পিতা এম ওহাবের নাম রয়েছে বলে জানাযায় তালিকা সূত্রে। লেখক মুনতাসির মামুনের বইয়েও তার নাম উল্লেখ রয়েছে। সেলিম রেজার ভাই শহিদ রেজাও বন্দরের চিহ্নিত রাজাকার পুত্র হিসেবে পরিচিত। তাঁদের বাবা এম ওহাব সদস্য ছিলেন শান্তি কমিটিতে।

 

 

এছাড়া রাজাকার পুত্র সেলিম রাজার আমন্ত্রনে এই অনুষ্ঠানে অথিতি হিসেবে বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযুদ্ধা এম এ রশিদের নাম রয়েছে। রাজাকার পুত্রদ্বয়ের আমন্ত্রনে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিরে উপস্থিতি হওয়ার বিষয়ে বন্দরের সচেতন মহলের মাঝে ব্যপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। সেই সাথে স্থানীয়রা নানা প্রশ্ন তুলছেন।

 

 

মুনতাসীর মামুনের লেখা 'শান্তি কমিটি ১৯৭১' বইয়ে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে এম ওহাবের নাম রয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন বইয়ে এই শহিদ রেজার পিতার অপকর্মের বর্ণনা রয়েছে। 

 

জানা যায়,  ২২ মার্চ বুধবার সকাল  সাড়ে ১০ টায় কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এস.এস.সি পরিক্ষার্থীদের বিদায় এবং কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। একই সাথে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরনী করা হবে।

 

 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে রয়েছেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণায়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নারায়ণগঞ্জ পাচঁ আসনের  মাননীয় সংসদ সদস্য বীর  মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সেলিম ওসমান।

 

 

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত থাকবেন বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশিদ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন  রাজাকার পুত্র শহিদ রেজার ভাই ও বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাজাকারপুত্র সেলিম রেজা। 

 

 

স্থানীয়রা জানান, বন্দরের কলাগাছিয়ার ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত আলবদর বাহিনীর সহযোগী ও  বি এন পির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একনিষ্ঠ সহচর এম এ ওহাব ছিলেন চিহ্নিত রাজাকার। তারই পুত্রদ্বয়  সেলিম রেজা ও  মো. শহিদ রেজা এলাকায় রাজাকার পুত্র হিসেবে পরিচিত।

 

 

তাদের আমন্ত্রণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আসছে তা নিয়ে বন্দর জুরে সমালোচনা বইছে। সেই সাথে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেন রাজাকার পুত্রের আমন্ত্রণে মন্ত্রী মহোদয়কে এনে তারা কী তাদের অপকর্মকে জায়েজ করে নিতে চায়। তাছাড়া ৮ মাস পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে দাওয়াত দিয়ে এনে তারা কী বুঝাতে যাচ্ছে তা নিয়ে চরছে চিরচেনা বিশ্লেষন।

 

 

তবে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে রাজাকার পুত্র শহিদ রেজা নারায়ণগঞ্জ এর ৫ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে। আর এ উদ্দেশ্য নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা। আর তাই ক্রমান্বয়ে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করতে আওয়ামী লীগ এবং  জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করার পায়তারা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

 

একই সাথে বিপরীতে বি.এন. পি জামাতকে সংঘটিত করে তার বলয়ে নেয়ার পায়তারা করছে। সেই লক্ষ্যে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রী এমপি দের ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করছেন এলাকাবাসির অভিযোগ। 

 

 

অপরদিকে স্থানীয়দের মাঝে বলাবলি হচ্ছে এই অনুষ্ঠানের সভাপতি রাজাকার পুত্র সেলিম রেজা ও তার ভাই  শহিদ রেজার উপস্থিতি নিয়ে তার পিতা মরহুম এম ওহাব এর বিতর্কিত আলবদর রাজাকার সদস্য দুর করার জন্যে এবং সরকার কে প্রশ্নবৃদ্ধ করার লক্ষ্যে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় এস এস সি পরীক্ষার্থি দের বিদায় ও কৃতি ছাত্র ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাজাকার পুত্রদয় আমন্ত্রণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি কে। যা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

 

 

একজন রাজাকার পুত্র যারা ছিল স্বাধীনতা বিপক্ষের শক্তি তাদের ই আমন্ত্রণ এ আসছে তাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। তা কিসের বার্তা করতে চলছে এনিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।  ঠিক এক ই মঞ্চে আরও দুইজন অতিথি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান  ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব এম এ রশিদ।

 

 

তাই বন্দরের সচেতন মহলের এবং মুক্তিযুদ্ধাদের মাঝে প্রশ্ন কিভাবে স্বাধীনতার পক্ষ এবং বিপক্ষ শক্তি একই মঞ্চে বসে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সাথে সমালোচনার ঝড় বইছে। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, রাজাকার পুত্র শহিদ রেজা ও সেলিম রেজার বিরুদ্ধে একছত্র প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ রয়েছে।

 

 

বিএনপি,  জাতীয় পার্টি, জামায়াত শিবির সহ অনেক সংগঠন চলে রাজাকার পুত্রদয়ের আংগুলের ইশারায়। অভিযোগ রয়েছে রাজাকার পুত্রদয়ের ইশারায় বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগেরে কমিটি থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিনকে রাখা হয় নাই। অথচ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বন্দরে উপজেলার আওয়ামী লীগের কমিটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন নিজাম উদ্দিন। এতে করে ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ রয়েছে। 

 

 

কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজাম উদ্দিনের অবদান রয়েছে। স্কুল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার দেয়া ৪৩ শতাংশ জায়গার উপর ভিত্তি করেই আজকের কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়টি। অথচ এখন কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিতে নিজাম সাহেবের এর মত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্থান নেই সেখানে কাজীম উদ্দিন প্রধান সাহেব রয়েছেন।

 

 

রাজাকার এম ওহাব এর জৈষ্ঠ পুত্র সেলিম রেজা এই স্কুল কমিটির  সভাপতি। নিজাম উদ্দিন রাজাকার পুত্র শহিদ রেজা আর সেলিম রেজার প্রতিহিংসার সিকার। মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক থেকে রোটারিয়ান গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীকে তাদের ইশারায় বাদ দেয়া হয় বলে অভিযোগ। 

 

 

স্থানীয় সরকার উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এনডিসির সাথে কথা বলতে বলেন। জেলা সহকারি কমিশনার নেজারত শাখা (এনডিসি) মোহম্মাদ রবিন মিয়া জানান, বন্দরের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক আসবে এবিষয়ে আমরা অবগত আছি।

 

 

কিন্তু কলাগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সেলিম  রেজার পিতা এম ওহাব যে রাজাকার তালিকায় আছেন তা আমাদের জানা নেই। বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেন নাই।  এন.হুসেইন/জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন