শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

শহরে যানজটের নেপথ্যে এমপির স্টিকার বললেন মেয়র আইভী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

 

# অটোরিক্সা থেকে টাকা পায় পুলিশ : সাংবাদিক পন্টি

 

 

আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন কারণে শহরমুখী হচ্ছে। জীবনের তাকিদে গ্রামের মানুষ গুলো শহরমুখী হন। শহরে চলাচল করতে গিয়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। নারায়ণগঞ্জ শহরেই ২০ লক্ষ জনসংখ্যার উপরে। 

 

আর অধিক জনসংখ্যা হিসেবে উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ শহর। নগরীর চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত এক কিলোমিটার জুড়ে বঙ্গবন্ধু সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। আর এতে করে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

 

এই ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ পুলিশ প্রশাসনের ট্রাফিক বিভাগের প্রতি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগরবাসী। গতকাল নাসিকের বাজেট অধিবেশনে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

এদিকে নাসিক বাজেট অধিবেশন থেকে অভিযোগ উঠেছে, শহরের ফুটপাত হকারদের দখলে। এখানে বিশাল অংকের টাকা চাদাঁবাজি হয়। শহরের প্রভাবশালী এসমপির লোকজন এই চাদাঁবাজিতে জড়িত বলে অভিযোগ তুলেন নগরবাসী।

 

চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে ফুটপাত দখল করে দোকান-পাট চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। আর মাঝে মধ্যে পুলিশ এলে তারা দোকান-পাট সরিয়ে নিচ্ছে, পরে আবার বসে যাচ্ছে। অনেক সময় পুলিশও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছে আর তার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

 

যানজটের কারণে চাকরিজীবী লোকেরা যথাযথ সময়ে তাদের অফিসে পৌঁছাতে পারে না, এবং যারা শিক্ষার্থী আছে তারা সঠিক সময়ে তাদের ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। এমনকি অনেক সময় তাদের পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও  যানজটের কারণে পরীক্ষার হলে সঠিক সময়ে বসতে পারে না।

 

প্রকৃতপক্ষে যে সমস্যাগুলোর কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো। ১) অপরিকল্পিত নগরায়ণ।৩) দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ আইনের অভাব। ৪) নিবন্ধনহীন যানবাহন। যত্রতত্র সিএনজি অটো স্ট্যান্ড। সড়কে অবৈধ পার্কিং ব্যবস্থা।

 

যানজট নিয়ে পুশিলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ফুটপাত ফ্রি রাখার দায়িত্ব পুলিশের। যানজট মুক্ত রাখার দায়িত্ব পুলিশের। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনার পরেও শহরে থেকে ট্রাক সরানো হয়।

 

অথচ যখন এমপি তা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিলেন তখন সরানো হলো। তাহলে আমরা হাইকোর্ট বাদ দিয়ে এমপি মানলেই পারি।

 

নারায়ণগঞ্জ শহরে কে চাঁদাবাজী করে এটা সবাই জানে। এমপির লোকজন শহরে অটো রিকশা ঢুকায়। অটো রিকশায় এমপি মহোদয়ের স্টিকার লাগানো থাকে। এই অটো রিকশা শহরকে যানজট করে তুলেছে। আর ফুটপাত তো আমরা বানিয়েছি মানুষজন চলাচল করার জন্য।

 

কিন্তু এ ফুটপাত হকারমুক্ত করতে গিয়ে আমাদের উপর হামলা হয়েছে। আমাদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে। তাহলে কেন আমি ফুটপাত দখলমুক্ত করতে যাবো। আমার পাশে তো তখন কেউ দাঁড়ায়নি। আমার তো পিস্তল নাই, কোন বাহিনী নাই। আমি অর্থ দিতে পারি না।

 

নারায়ণগঞ্জের ডিসি ও এসপি দুই এমপির কথায় চলে। আমাদের কথা নগরবাসীর কথা চিন্তা করে কম। যদি সব সময়ে এমনই হতে থাকে তাহলে তো আমার এমপিগিরি করতে হবে। প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন চাইবো।

 

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, সামাজিক আন্দোলন অবশ্যই আমরা করতে জানি। কতগুলি ট্রাফিক নারায়ণগঞ্জে কাজ করে। তারা একদিকে হাত তুলে বাকি দিকে জ্যাম লেগে যায় কোন খবর নেই।

 

মৌমিতা পরিবহনের অনুমোদন চাষাড়া পর্যন্ত। কিন্তু তারা বেআইনি ভাবে শহরের ভিতরে প্রবেশ করে। এগুলো ট্রাফিক বিভাগের নজর দেয়া দরকার। চাষাড়া ডাক বাংলো সরিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করনের জন্য নাগরিক আন্দোলন হয়েছিল। এখানে রাস্তা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সেখানে দোকান ভাড়া দিয়েছে।

 

পুলিশের কাজ দোকান ভাড়া দেয়া না। আমি পুলিশ সুপার মহোদয়কে আহ্বান জানাবো এই রাস্তার দোকান তুলে দেয়া হোক। সেই সাথে শহরের অটো প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হোক।

 

বাংলা ভিশন টেলিভিশনের প্রতিনিধি আফজাল হোসেন পন্টি বলেন, আমার জানামতে একমাত্র জনপ্রতিনিধি যিনি নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন। তাই নাগরকিদের সমস্যা নিয়ে ওয়াকিবহাল রয়েছেন। যানজট বর্তমানে আমাদের কাছে বিষফোড়ার কারন হয়ে দাড়িয়েছে।

 

বঙ্গবন্ধু সড়কে চাষাড়া শেখ রাসেল পর্যন্ত আসতে আমরা এখন যানজটের বিড়ম্বনায় পোহাতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সড়কে অটোর যন্ত্রনায় মানুষ। এই অটো থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ থেকে শুরু করে নামধারি সাংবাদিকও রয়েছে।

 

যানজট নিয়ন্ত্রন নিয়ে প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থা নেই। তারা এখানে ২ বছরের জন্য পকেট ভরে কামিয়ে চলে যায়। তাই বঙ্গবন্ধু সড়কের যানজট থেকে নগরবাসিকে বাঁচানোর আহ্বান জানান তিনি মেয়রের কাছে। এমনকি এই বিষয়ে সামাজিক আন্দোলনের ডাক দেয়ার প্রস্তাব জানান তিনি।

 

দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা ও যথাযথ আইনের অভাব :

 

ট্রাফিক পুলিশের কাজ সড়কে শান্তি-শৃংখলা নিশ্চিত করা যানজট দূরকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, শহরের বেশির ভাগ এলাকায় দেখাযায় রিকশাওয়ালা, সিএনজি বা লেগুনাচালকরা শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে ভাঙা, মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি হরদম পরিচালনা করছেন।

 

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা কিছু টাকার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রধান সড়কগুলোতে চলাচল করে। প্রতিযোগিতা দিয়ে সিন্ডিকেটের সহায়তায় টাকার বিনিময়ে অটো প্রবেশ করে।নি

 

বন্ধনহীন যানবাহন : সড়কের নৈরাজ্য ও যানযট ঠেকাতে সারা দেশে ফিটনেস, রুট পারমিট ও যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার কথা বলে আগের ডিসি চুপচাপ তেকে এখান থেকে বদলি হয়ে যান। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফিটনেস, রুট পারমিট কিংবা ইন্স্যুরেন্সবিহীন কোনো যান রাস্তায় কোনো ধরনের দুঘর্টনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেলেও এর নিবন্ধন নাম্বার শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট মালিক-চালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।

 

প্রয়োজনে দুঘর্টনা সংঘটনকারী গাড়িটি জব্দও করা যায়। অথচ নিবন্ধনহীন যানবাহন শনাক্ত করা যেমন দুস্কর, তেমনি ঘটনাস্থলে এ ধরনের যান আটক করা না গেলে সংঘটিত অপরাধ প্রমাণ করাও অসম্ভব।

 

এছাড়া সব বিষয়ে নগর মাতাদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে যানযট কখনো কমবে না। শহরবাসীর জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেন নাই। এস. এ /জেসি 

 

এই বিভাগের আরো খবর