শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য রাজু আহমেদ বরখাস্ত

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৩ পিএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে ওয়ন ওসমানসহ তাঁদের ক্যাডারবাহিনী অস্ত্রসহ মহড়া দেয়। এই মহড়ার ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীকে গুলি চালাতে দেখা যায়। এর মধ্যে দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি ও ডিবিসি নিউজের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ও ডেইলি অবজারভারের প্রতিনিধি রাজু আহমেদকেও অস্ত্র চালাতে দেখা যায়। ভিডিও তার হাতেও ওসমান বাহিনীর সন্ত্রাসীদের সাথে অস্ত্র চালাতে দেখা যায়।
এছাড়া রাজু আহমেদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দেশ রূপান্তরের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ও বন্দরের একটি সাংবাদিক ক্লাবের দায়িত্বে থাকার কমল খানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। এদিকে গতকাল যুগান্তরের অনলাইনে জানানো হয় দৈনিক যুগান্তরের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রাজু আহমেদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পেশাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই আদেশ ২৪ আগস্ট-২০২৪ (শনিবার) থেকে কার্যকর করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সূত্র জানিয়েছে, ওসমান পরিবারের গত ১৫বছরের আজ্ঞাবহ ও সুবিধাভোগী সাংবাদিকরা ভোল পাল্টাতে শুরু করেছে। তারা কেউ কেউ ওসমানদের শেল্টারে ও আনুকূল্যে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের অনুকম্পা পাওয়ার আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একেকজন একেক ব্যানারে নানা প্রোগ্রামের আয়োজন করে নিজেদের পিঠ বাচানোর চেষ্টা করছেন। ওসমানদের অনুগত এসব সাংবাদিকদের সাথে এখনো ওসমানরা ঠিকই নারায়ণগঞ্জের সকল পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন।
কেউ নারায়ণগঞ্জের বিসিকের দায়িত্ব, কেউ জমির দালালির দায়িত্ব, কেউ ডায়িং, কেউ ইয়ার্ন মার্চেন্ট, কেউ হোসেয়ারি সমিতি, কেউ বা পরিবহন, কেউ কেউ হাট-ঘাট, স্ট্যান্ডের দায়িত্ব লোক পাল্টে ওসমানদের পক্ষ থেকে ইজারা দিচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, সাংবাদিক পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জের অর্ধশতের বেশি সুবিধাভোগী কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বর্তমানে নিজেদের অতীত ঢাকতে তারা নানা কৌশল করছেন। কেউ কেউ বিএনপির পদ নাই এমন নেতার পিছনে ঘুরছেন। কেউ বা ইসলামী দলগুলোর কয়েকজন নেতা যারা ওসমান ঘেষা ছিলেন (আইভী বিরোধী) তাদের আশ্রয়প্রশ্রয়ে যাচ্ছেন।
হকার ইস্যুতে আইভীর উপর হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি শামীম ওসমানের সাথে ট্রাকে সমাবেশ করা, দেবোত্তর সম্পত্তি ও কবরস্থান ইস্যু তৈরি করে ওসমানদের পক্ষে নামা রাজনীতিকদের টার্গেট করেই তারা এগোচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে যারা ওসমানদের ছত্রছায়ায় নানা সুবিধা নিয়েছেন তারা এই রাজু আহমেদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল এবং একটি চেইন মেইনটেইন করে চলতেন। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে জমিদখল, মামলা-মোকদ্দমা, ডিসব্যবসা, স্কুল ব্যবসা থেকে শুরু করে সকল ধরণের তদবির, দখল বাণিজ্যে নিয়োজিত ছিলেন এবং নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকতায় কালো মেঘের ছায়া তৈরি করে একটি বৃহৎ ওসমানীয় সাংবাদিকতার বলয় তৈরি করেছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে হুট করে শেখ হাসিনার বিদায়ের পর শামীম ওসমান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে যায় কিন্তু অবস্থা বুঝে না উঠতে পারায় শামীম ওসমানসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা আটকে পড়েছেন। এখন নানা উপায়ে দূর থেকে শামীম ওসমান ও তার বলয়ের নির্দেশনায় ভোল পাল্টে তাদের অতীত কর্তত্ব বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কেউবা নানা ছুতোয় নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন, কেউ কেউ দৌড়াচ্ছেন ওসমানদের ব্যবসা সামলানো ব্যবসায়ীদের পেছনে আবার কেউ কেউ ছুটছেন বিএনপি নেতাদের অনুকম্পার আশায়। বর্তমানে ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজের দাবি শুধু সাংবাদিক নয়, সকল শ্রেণিপেশার মানুষের গত ১৫ বছরের কর্মকাণ্ড ও অপকর্ম যাতে উদঘাটনে মাঠে নামে প্রশাসন।