শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

শামীম ওসমান শঙ্কিত কেন

মাহফুজ সিহান

প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

 

# সস্তা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য তিনি এসব বলেন : আনোয়ার হোসেন
# এসব বক্তব্য ধর্তব্যের মধ্যে নেয়া যায়না : রফিউর রাব্বি
# উল্টো তার জন্য বিএনপি কর্মীরা আতঙ্কিত থাকে : এড. টিপু
# থানায় জিডি করুক, প্রশাসন বিষয়টি দেখবে : গোলাম ফারুক
# এটা এমপি সাহেবের মনের সন্দেহ : শওকত আলী
# যারা তাকে গডফাদার উপাধি দিয়েছে তারাই টার্গেট করতে পারে : মুজিবুর
# সাংসদের এই বক্তব্যে আমিও শঙ্কিত : এমএ রশীদ

 

 

প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান চলতি মাসে বড় চমকই দিলেন। সমাবেশের ডাক দিয়ে লোকে লোকারণ্য করে মহাসমাবেশ করে ফেললেন। যাতে স্বয়ং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

 

মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে শামীম ওসমানের দেয়া একটা তথ্য নানা মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনেই তিনি হাজার হাজার নেতাকর্মীর সামনে শামীম ওসমান বলেছেন, ‘গত তিন দিন ধরে শুনছি আবারো আমাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে’।

 

এই বক্তব্যে শামীম ওসমানের কর্মী সমর্থদেরও আতঙ্কিত করেছে, কেননা এর আগে ২০০১ সালের ১৬ জুন আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসে বোমা হামলায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে আওয়ামীলীগের আরেকটি অংশ মনে করেন, নিজের সস্তা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্যই শামীম ওসমান আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থকদের আতঙ্কিত করছেন।

 

শামীম ওসমানের এই বক্তব্য নিয়ে  মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এটা তিনি প্রায়ই বলেন, তাকে মেরে ফেলতে পারে। তাহলে উনি সাধারণ ডায়েরি কেন করছেন না। সাধারণ কর্মীরা তার এই ভয় পাবে। প্রকাশ্যে এমন কথা বললে নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়। সস্তা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য তিনি এসব কথা বলে বেড়ান।’

 

আনোয়ার হোসেনের মতো প্রায় একই মত দিয়েছেন  সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। তিনি যুুগের চিন্তাকে বলেন, ‘শামীম ওসমানের বক্তব্যকে ধর্তব্যের মধ্যে নেয়া যায়না। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনের আগে তিনি জঙ্গী হামলার আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। আমার প্রশ্ন, এতোগুলো বাহিনীর গোয়েন্দাবাহিনী থাকার পরেও তিনি কেমন করে এসব তথ্য পান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তারা তাহলে কি করেন।

 

আসলে এসব কথা বলে তিনি সস্তা জনপ্রিয়তা চান। এসব কথা ধরার মতো বিষয় না।’ সম্প্রতি শামীম ওসমানকে নিয়ে সম্প্রতি বক্তব্য দিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন। রফিউর রাব্বি এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘বাক স্বাধীনতা সবার রয়েছে।

 

সবাই তার বক্তব্য তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু তরিকুল সুজনের উপর যে ন্যাক্কার জনক হামলা ঘটেছে এটি স্পষ্ট যে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। যদি প্রশাসন নিরপেক্ষ হয়ে থাকে, কারো আজ্ঞাবহ না হয় তাহলে অবিলম্বে তরিকুল সুজনের উপর হামলা কারীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।’

 

তবে শামীম ওসমানের এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেবার মতো নয় বলে মত দিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘জঙ্গী, সরকারের শত্রুতা নির্বাচনের আগে তৎপর থাকে। তারাই এইসময় এসব হামলা চালাতে পারে। তবে শামীম ওসমান ভালো বলতে পারবেন, তিনি কোথা থেকে জেনে এই তথ্য দিয়েছেন।’

 

শামীম ওসমানের বন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘উনি যে কথাটি বলেছেন তার সূত্র উনিই ভালো বলতে পারবেন। নির্বাচন সামনে, এসময় বিভিন্ন অপশক্তি বিএনপি জামাত নানা অঘটন ঘটায়। দেশের আওয়ামীলীগ নেতাদের উপর হামলা চালায়। এই গোষ্ঠিটি এমন করতে পারে। তারা সরকার উৎখাতের চেষ্টা করে। শামীম ওসমান অনেক বড় নেতা। তার সোর্সও অনেক বেশি। তিনি সেসব সোর্স থেকে জেনেই হয়তো এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।’

 

এদিকে শামীম ওসমানের এই বক্তব্য বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনঠাসা করার চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এসব বক্তব্য শামীম ওসমানের রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি। বিএনপি এসব নিয়ে চিন্তা করে না। শামীম ওসমান গত কয়দিন যাবৎ বিএনপিকে নিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তো বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে আতঙ্কিত থাকে।

 

আসলে উনি মানুষের সহানুভূতি পেতে চান। আমরা বরং আশঙ্কা করছি, উনি জেলা ও মহানগরে যেসব নেতা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান তাদের ক্ষতি তিনি প্রশাসন, তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে করতে পারেন। রাজনৈতিক যেই সম্প্রীতি নারায়ণগঞ্জে আছে সেটি নষ্ট করতে চান তিনি। বিএনপির নেতাকর্মীদের তার ব্যাপারে আরো সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।’

 

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘তিনি যদি তার প্রাণনাশের আশঙ্কা করে থাকেন, তবে থানায় জিডি করুক, প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।’

 

জেলা বিএনপি নেতা মাশুকুল ইসলাম রাজিব যুুগের চিন্তাকে বলেন, ‘শামীম ওসমানের বক্তব্য রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া কিছু নয়। বিএনপি সবসময় শান্তিপ্রিয় আন্দোলনে বিশ্বাস করে। শামীম ওসমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে যে আশঙ্কার কথা বলেছেন, তা হয়তো তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে কিছু বিশেষ সুবিধা পাবার জন্যই বলেছেন। বিএনপিকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করার কিছু নেই তার জন্য।’

 

অপরদিকে শামীম ওসমানের আস্থাভাজনরাও নড়েচড়ে বসেছেন শামীম ওসমানের এমন আশঙ্কার কথা জেনে। জেলা আওয়ামীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার হাতকে দুর্বল করার জন্য শামীম ওসমানকে টার্গেট করা হতে পারে। তাকেই ১নং টার্গেট মনে করে বিরোধীরা। বাংলাদেশের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় তার উপর অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে এমনটা করতে পারে। তিনি প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন। স্বাধীনতা বিরোধীরাই তাকে টার্গেট বানাতে পারেন।’

 

ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এটা এমপি সাহেবের মনের সন্দেহ। তিনি আশঙ্কা করছেন তিনি প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন। তিনি সরাসরি কাউকে ইঙ্গিত না করলেও তিনি হয়তো জেনেই এই কথাটি বলেছেন।’

 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘যারা তাকে গডফাদার উপাধি দিয়েছেন, তারাই হয়তো আবার তাকে টার্গেট করতে পারেন।’

 

বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম. এ রশীদ যুগের চিন্তাক বলেন, ‘সাংসদের এই বক্তব্যে আমিও শঙ্কিত। তিনি নিশ্চয়ই কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জেনেই এমন কথা বলেছেন’। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর