মঙ্গলবার   ১২ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ২৮ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের পেটে উন্নয়নের ফসল

ইউসুফ আলী এটম

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০২৩  

 

বাজার সিন্ডিকেট গিলে খাচ্ছে সরকারের যাবতীয় আকাশচুম্বী উন্নয়ন। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্নক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইতোপূর্বে কোন সরকারের আমলেই দৃশ্যমান এতো উন্নয়ন কাজ হয়নি। বিশেষ করে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী যে উন্নয়ন হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের জাতশত্রুরাও অস্বীকার করতে পারছেন না।

 

দেশী ও বিদেশী নানা ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে বিশ্বের দরবারে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নানা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।

 

ইতোমধ্যেই তিনি যেসব মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, ঢাকা-কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্প, পদ্মা সেতু রেল যোগাযোগ প্রকল্প ছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি ২৮ লাখ মানুষকে পুনর্বাসিত করেছেন। এ পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয়ণে ঘর পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে সরকারের এতো এতো অর্জন ম্লান হতে চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের পেটে চালান হয়ে যাচ্ছে সরকারের কষ্টের ফসল। নানামুখী উন্নয়নের সুফল ভোগ করলেও বাজারে গেলে সাধারণ মানুষ সব ভুলে সরকারকে প্রকাশ্যে গালমন্দ করেন। 

 

তাদের কথা একটাই-এতো যে উন্নয়ন উন্নয়ন করছেন সেটা তো ধনীদের জন্য। সেই উন্নয়নে তো আমাদের পেট ভরছে না। বাজারে গেলে হিসাব মিলাতে হিমশিম খেতে হয়। মাস শেষে যে টাকা হাতে পাই তা দিয়ে ঘর ভাড়া, আর ছেলে মেয়ের স্কুলের বেতন পরিশোধেই শেষ হয়ে যাওয়ার মতো দশা হয়। বাকি যা থাকে তা দিয়ে সারা মাস পেট চালানোটা দায় হয়ে যায়। 

 

বাজার শব্দটির সাথে সিন্ডিকেট শব্দটিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নেতিবাচক এ শব্দটি ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। এরা বাজারে প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের ইচ্ছেমতো পণ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দাম বাড়িয়ে অবৈধভাবে মুনাফা অর্জন করে। এ চক্রটি বাজারে জিনিসপত্র গুদামজাত করে নানা অজুহাত দেখিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে বেশি দামে বিক্রি করে। ফলে ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়তে বাধ্য হয়।

 

সবচেয়ে অবাক কান্ড হলো, সরকারের মন্ত্রীরা সিন্ডিকেটের কথা মুখে মুখে স্বীকার করলেও রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেন। এতে বুঝতে কষ্ট হয় না যে, সরকারের চেয়ে সিন্ডিকেট শক্তিশালী। সিন্ডিকেটকে পেছন থেকে শক্তি যোগাচ্ছে আমদানিকারক, শিল্পপতি আর আমলারা। মূলত ব্যবসায়ীদের কব্জাতেই দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি।

 

সামনেই নির্বাচন। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে সরকার হয়তো সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছেন। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে না পারলে নির্বাচনে সরকারকে চড়া মাশুল দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুযোগ এখনো হাতছাড়া হয়ে যায়নি। সরকার যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাকে সাথে নিয়ে পৃথকভাবে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালায় তবে তাৎক্ষণিক সুফল আসতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টমহল। এস.এ/জেসি