সেলিম ওসমানকে সমর্থন দেয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৫১ পিএম

# কোন মূল্যায়ন না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন নেতা কর্মীগণ
# বিএনপিও আ. লীগকে ভোট দেয় কিন্তু জাতীয় পার্টি দেয় না
# নির্বাচিত হলে আমরা তার ধারে-কাছেও যেতে পারি না
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। তাই এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে খুবই কৌশলী হতে হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। সেই ধারাবাহিকতায়ই জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে একই দিনে ২৯৮টি আসনের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও ঘোষণা করা হয়নি ২টি আসনের প্রার্থীর নাম।
আর সেই দুটির একটি হলো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। আর এই আসন থেকেই নির্বাচন করছেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমান। আর যেহেতু জাতীয় পার্টি এবার আওয়ামী লীগের শরীক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তাই ঘোষণা দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানকে এই আসন ছেড়ে দেওয়া অশোভনীয়।
তাই আওয়ামী লীগ সেলিম ওসমানকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য এই আসনটি ফাঁকা রেখেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক ভক্ত। আর এবার সেলিম ওসমানকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে। যেখানে হাজারো কষ্ট বুকে চাপা রেখে শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে এই আয়োজন বলে ঘোষণা করছেন বন্দর উপজেলার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সমর্থকগণ।
এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীগণ তাদের মনের কষ্টের কথা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, বন্দরে কোন না কোন কারণে বিএনপির সমর্থকেরাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেন। কিন্তু যেই জাতীয় পার্টিকে এখানকার আওয়ামী লীগ দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচিত করেন সেখানে কোন জাতীয় পার্টির সমর্থক ভুলেও কোন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভুলেও ভোট প্রদান করেন না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে কাজ করা তো দূরের কথা।
নেতা কর্মীদের আরও অভিযোগ আওয়ামী লীগের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন নেতা কর্মীকে কখনও মূল্যায়ন করেন না সেলিম ওসমান। ইলেকশনের পর তিনি এখানে এসেও জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীদেরই খোঁজ করেন। হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া এখানকার কোন আওয়ামী লীগের নেতার সাথে দেখাও করেন না তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারে উন্নয়ন কিংবা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন নেতার সমস্যার বিষয়েও এমপি সাহেবের নাগাল পাওয়া যায় না বলে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন প্রধানের উদ্যোগে আয়োজিত এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির নেতা, কর্মী ও সমর্থকগণ। এ সময় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী না থাকায় এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া ৫জন প্রার্থীর মধ্যে সেলিম ওসমানের জন্য কাজ করার বিষয়ে কাজিম উদ্দিন প্রধান প্রস্তাব দিলে দলীয় নির্দেশ মেনে তারা রাজী হলেও সেলিম ওসমানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেখানে উপস্থিত থাকা শত শত নেতা কর্মী।
কাজিম উদ্দিন প্রধান বলেন, এই আসনে এবার যারা নির্বাচনে আছেন আমরা এদের মধ্যে একমাত্র সেলিম ওসমানের সাথেই কাজ করে অভ্যস্ত। তাই যেহেতু এই আসনে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দেয়নি, তার মানে নেত্রী দেশের ও দলের কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই বিষয়ে নেত্রী আমাদের চেয়ে অনেক ভালো বুঝেন। তাই নেত্রী সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েই আমরা আপনাদের সকলে মতামত নিয়ে তার হয়ে কাজ করতে চাই। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এবং বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা আওয়ামী লীগের উপর অনেক নির্যাতন ও হয়রানি করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল্লাহ বাবু, সহ সভাপতি আক্তার হোসেন (বিএ), বন্দর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সালিমা হোসেন শান্তা, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম কাশেম, মুসাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, বন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. তাইজুল ইসলাম, মদনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন।
উল্লেখ্য দীর্ঘদিন যাবৎ এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির হাতে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার দাবি করা হচ্ছে। তাই এইবার এখানকার আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব রক্ষার্থে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করা হয়। এর ফলশ্রুতিতে এবার নৌকার প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে বলে প্রচার করা হয়। তাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় ও জমা দিয়েছেন ছয় জন।
তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জল ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল (ভিপি বাদল)। কিন্তু এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেননি। কিন্তু এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য দল থেকে উৎসাহিত করা হলেও এদের কেউই আর স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি।
তাই অনেকটা নির্ভার হয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন জাতীয় পার্টি সমর্থিত বর্তমান এমপি একেএম সেলিম ওসমান। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন এএমএম একরামুল হক (ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মোর্শেদ হাসান (জাকের পার্টি), মো. আব্দুল হামিদ ভাষানী ভূঁইয়া (তৃণমূল বিএনপি) ও ছামসুল ইসলাম (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি)। এস.এ/জেসি