Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

সেলিম ভাই-শামীম ভাই-প্রশাসন সকলেই সহযোগিতা করছেন : মেয়র আইভী

Icon

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২০, ১১:০১ পিএম

সেলিম ভাই-শামীম ভাই-প্রশাসন সকলেই সহযোগিতা করছেন : মেয়র আইভী
Swapno

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : করোনা পরিস্থিতিতে লড়ছে পুরো দেশ, লড়ছে নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ জেলাকে ইতিমধ্যেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শনিবার পর্যন্ত জেলায় ৮৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৮ জন। এমন এক পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী শনিবার রাতে চ্যানেল আই’য়ের ‘মেট্রোসেম টু দ্য পয়েন্ট’ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন-

 

প্রশ্ন : নারায়ণগঞ্জকে বলা হচ্ছে এই মুহুর্ত্বে সারা বাংলাদেশের মধ্যে করোনার আতুঁরঘর, কারণ দেশের ৬টি জেলার মানুষ নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে আসা মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, সিভিল সার্জন যেভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে নারায়ণগঞ্জের কি করণীয় আছে এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি শ্রমিক অধুষ্যিত এলাকা। এখানে বিভিন্ন জেলার মানুষ বসবাস করেন। যেহুতু বাণিজ্যিক নগরী, শিল্প নগরী, অনেক ঘনবসতিপূর্ণ এখানে এটাই হওয়া স্বাভাবিক। শ্রমিকরা অনেকেই বাইরে চলে গেছেন। তাছাড়া দেশের বাইরে যারা ছিলেন ইটালি, ফ্রান্স বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটিতে তারা এসেছেন। হয়তো ঠিকভাবে খবরটি রাখা হয়নি। একারণে করোনা এতোটা ছড়িয়েছে।

 

প্রশ্ন : বলা হচ্ছে ৪ এপ্রিল ৪ লাখ শ্রমিক ঢুকেছে সেই শ্রমিক ঢুকার কারণেই কি করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জ হয়ে গেল? তারপরেও নারায়ণগঞ্জ লক ডাউন হয়ে গেলেও অনেক শ্রমিক রাতের আঁধারে পালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে লক ডাউন করে লাভটি কি হচ্ছে, কি সুফল পাওয়া যাচ্ছে? 

 

মেয়র আইভী বলেন, লকডাউন শব্দটি আমাদের দেশে নতুন। আমরা বাঙালিরা কারফিউ বলতেই বেশি পছন্দ করি। কিংবা ১৪৪ ধারাটি সবাই বোঝে কিংবা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মানুষ কিন্তু হাজার বার বললেও শোনেনা। মানুষ বাইরে বের হবেই। এখানে প্রশাসনকে আরো বেশি কড়াকড়ি হতে হবে। শ্রমিকতো ঢুকেছে। এটা তো একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছির। কিছুই বলা হলোনা, লক্ষ লক্ষ শ্রমিক গ্রাম থেকে চলে আসলো। আবার চলেও গেল এখান থেকে। লকডাউন হওয়ার কথা আমি বের হতেও পারবোনা আবার যেতেও পারবোনা। লকডাউন আসলে ঠিকভাবে হয়নি এটাই সত্য কথা। এখান যা হওয়ার তো হয়েছে। কিভাবে রক্ষা করা যায়। এখনো সময় আছে, আমরা আরো কঠিন হয়ে, আরো আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগ করে, আরো সচেতনতা তৈরি করে কিভাবে এই নারায়ণগঞ্জকে রক্ষা করা যায় সেটাই চিন্তা করতে হবে। যা হবার হয়েছে, দোষ দিয়ে লাভ নাই। সামনের দিকে তাকাতে হবে আমাদের।  

 

প্রশ্ন : সিটি করপোরেশন এলাকার দায়িত্বে তো শুধু সেলিনা হায়াৎ আইভী না, এখানে আরো অনেক জনপ্রতিনিধি আছে, প্রশাসন আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, এমপিরা আছেন, সেলিম ওসমান-শামীম ওসমান সাহেব আছেন, আরো কাউন্সিলররা আছেন সবকিছু মিলিয়ে সেলিম ওসমান-শামীম ওসমানের সহযোগিতাটা আপনি কতখানি পাচ্ছেন? নাকি বরাবরের মতো এবারো আপনি একা?

 

উত্তরে মেয়র আইভী বলেন, আসলে এমন একটা দুর্যোগে সকলেই সহযোগিতা করছেন। এভাবে বলা যাবেনা যে, আমি এখন একা। আমাদের সিটি করপোরেশনে একজন সুইপার থেকে সর্বোচ্চ ব্যক্তি সিও পর্যন্ত প্রত্যেকেই অসম্ভব পরিশ্রম করছেন। ২৭টি ওয়ার্ডের ৩৬ জন কাউন্সিলর দিনরাত পরিশ্রম করছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে, পানি দেওয়া, ঝাড়– দেওয়া, চাল-ডালের স্লিপ করে মাঠপর্যায়ে এগুলো বিতরণ করা এগুলো সারা বাংলাদেশের মতো আমাদের সিটি করপোরেশনেরই করতে হয়। সিভিল সার্জনকে সহযোগিতা করার জন্য কারণ তিনি অসুস্থ্য আছেন,   আমরা তিনটা মেডিকেল টিম করেছি সিটি করপোরেশন এলাকায় নিজেদের ডাক্তার দিয়ে, নিজেদের টেকনিশিয়ান দিয়ে স্যাম্পল কালেকশন করছি। আমরা সিভিল সার্জনকে হেল্প করতে চাচ্ছি। উনি প্রথম দিকে বলেছিলেন সিটি করপোরেশন এলাকার দায়িত্ব উনার নয়, উনি স্পষ্টভাবে বলেছেন সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব উনি নিতে পারবেননা। পরবর্তীতে আমরা উনার সাথে কথা বলে এখন একসাথেই কাজ করছি। উনার করোনা পজিটিভ এসেছে। উনার দায়িত্বে নতুন একজন ইকবাল বাহার চৌধুরী এসেছেন। আশা করি তার সাথে মিলে আমরা একসাথে কাজ করবো। অন্যান্য প্রশাসনের ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথম দিকে একটু ঢিলেঢালা ছিল কিন্ত এখন সকলেই সহযোগিতার করছেন। সকলের সহযোগিতার পাচ্ছি। র‌্যাব, পুলিশ, আর্মি, জেলা প্রশাসন সকলেই একত্রিতভাবে কাজ করছি। অবশ্যই এমপিরা। সেলিম ভাই কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করেছেন, শুনেছি শামীম ভাইও নাকি ১ কোটি টাকা দিয়েছেন। আমি জানিনা কাদের মাধ্যমে দিয়েছেন। তবে এই দুর্যোগ মুহুর্ত্বে শুধু একটা কথাই বলবো, এখানে কোন রাজনীতি না, আমরা একসাথেই কাজ করছি। যার যার অবস্থান থেকেই আমরা মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। 

 

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের যে কোন মুহুর্ত্বে ফাঁসির রায় কার্যকর হবে এতে আপনার অনুভূতি কি?

 

উত্তরে মেয়র আইভী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ধরা হয়েছে, এটা তো অবশ্যই খুশির বিষয় আমাদের জন্য। এখানে স্বস্তিরও। ৭৫ এ আমি অনেক ছোট ছিলাম। ১৫ আগষ্ট নৃশংস হত্যাকান্ডের পর এখন অবধি এই খুনিদের ব্যাপারে শুধু শুনেই এসেছিলাম। মাজেদ স্বঘোষিত একজন খুনি। তাকে ধরা হয়েছে এবং ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে, অবশ্যই আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে, আমার বাবা সারাটা জীবন এই দলের জন্য জীবনের শেষ মুহুর্ত্ব পর্যন্ত দলের জন্য কাজ করে গেছেন, তাই আমি তো অবশ্যই খুশি হবো, আমার স্বস্তি থাকবে, আমার জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। অবশ্যই আমার খুব ভালো লাগছে। 
প্রশ্ন: লকডাউন মানুষ মানবেনা, পেটে ক্ষুধা থাকলে, ত্রাণ দেবার ব্যাপারে, দুস্থ মানুষকে খাবার দেবার ব্যপারে আপনারা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? 

 

উত্তরে মেয়র আইভী বলেন, সরকার আমাদের যেই ত্রাণগুলো দিচ্ছে, আমরা প্রতিদিন কিংবা একদিন দুই দিন পরপরই পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ১৯০ মেট্রিকটনের মতো চাল পেয়েছি। ডাল পেয়েছি, টাকাও পেয়েছি। এগুলো আমরা কাউন্সিলরদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের লিস্ট অনুযায়ী দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এমন একটা অবস্থা হয়েছে, যে সবারই যেন ত্রাণ লাগবে। আমি অবাক হচ্ছি, যাদের অবস্থা ভালো আছে, তারাও ত্রাণ চায়। তাহলে নারায়ণগঞ্জের বাইরে যে বলা হচ্ছে এতো শ্রমিক চলে গেল, তাহলে কারা এই ত্রাণ খাচ্ছে? সবাই যদি গ্রামেই চলে গেছে, তাহলে এতো ত্রাণ কি দরকার? যে ত্রাণ দিচ্ছে সরকার সেটি যথেষ্ট। এরবাইরেও বহুলোক ত্রাণ দিচ্ছেন, এমপিরা দিচ্ছেন, সমাজপতিরা দিচ্ছেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে দেয়া হচ্ছে। কোথায় কি হচ্ছে জানিনা, তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে ত্রাণ দিচ্ছে, ছবিসহ প্রমাণপত্র রাখছি আমরা। যাতে কেউ বলতে না পারে ত্রাণ পায়নি। কিন্তু মানুষের নাই নাই অভ্যাসটি যাবেনা! আর বিরোধী দলতো বলবেই পায়নি? এগুলো বাদ দিয়ে আমি বলবো আসুন একসাথে কাজ করি, খাবার সবাই পাচ্ছে। আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ১৯৯১ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনমাস দেশ অচল ছিল, তখন কি মানুষ না খেয়ে মরে গিয়েছিল? এখন তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছে একটা রিক্সাচালকের ঘরেও ১৫ দিনের খাবার থাকে।  
 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন