Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

সোনারগাঁয়ে দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য প্রাচীন পুরাকীর্তির পানাম নগরী

Icon

আশরাফুল আলম

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০০ পিএম

সোনারগাঁয়ে দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য প্রাচীন পুরাকীর্তির পানাম নগরী
Swapno

 

প্রাচীন অসংখ্য পুরাকীর্তির ঐতিহ্যে ধারন করা পর্যটন নগরী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা। বিদ্যমান অসংখ্য পুরাকীর্তির মাঝে উল্লেখ যোগ্য হল উপজেলার সাচিলাপুর এলাকায় সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের সমাধি, ঐতিহাসিক পাঁচ পীরের সমাধি ও মসজিদ, মোগরাপাড়ায় দানেশ মান্দ ইব্রাহিম ও মুন্না শাহের সমাধি, গোয়ালদীতে আলাউদ্দিন হোসেন শাহী মসজিদ, দমদমা ও পানাম নগরীতে নীলকুঠি, টাকশাল বাড়ী, পানাম পঙ্খীরাজ খালের ওপর সেতু,  বারদীতে হিন্দুদের তৈরি অসংখ্য অট্টালিকা, মঠ, মন্দির, খাজাঞ্চি, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, ভোজনালয়, বিচারালয় ও প্রমোদালয় ইত্যাদি।

 

 



সুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহর সমাধিঃ উপজেলার শাচিলাপুর গ্রামের খালের পাড়ে কালো পাথরে নির্মিত যে মাজার তা সুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহর মাজার নামে পরিচিত। ১০ ফুট লম্বা, সাড়ে ৫ ফুট চওড়া ও ৩ ফুট উচু সমাধিটি সম্পুর্ন কালো কষ্টি পাথরে তৈরি।

 

 

কালো পাথর দিয়ে অর্ধবৃত্তাকারে নির্মিত মুল সমাধিটির কার্নিশের মধ্যে রয়েছে সূক্ষ অলংকরনের কারু কাজ। দুপাশে খুদিত রয়েছে তিনটি করে খাজ বিশিষ্ট খিলান প্রলম্বিত শিকল ও ঝুলন্ত ঘন্টার নকশা। জেমস ওয়াইজের মতে, এক সময় এটি ছিল বিশাল সৌধ। অধ্যাপক দানী, এই সমাধিকে বাংলাদেশের প্রাচীনতম মুসলিম কীর্তি বলে উল্লেখ করেছেন।

 

 



পাঁচ পীরের মাজার মসজিদঃ ভাগলপুর গ্রামে পাঁচ পীরের মাজার সংলগ্ন একটি মসজিদ দেখতে পাওয়া যায়। চুনসুড়কির গাঁথুনির এ মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এবং দেয়াল গুলো সাড়ে ৩ ফুট চওড়া। স্থানীয়দের মতে ৭০০ বছর আগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়। মসজিদের পাশে ৬০ ফুট লম্বা প্রাচীর বেষ্টিত এক সঙ্গে পাশাপাশি ৫টি কবর ও ইটের তৈরি একটি দোচালা (চেরাগদানী ঘর ) রয়েছে।

 

 

সৈয়দ মোহাম্মদ তাইফুরের মতে, মঘ জলদস্যুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রাক্কালে পাঁচ ভাই এক সাথে নিহত হলে, তাদেরকে এখানে সমাহিত করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। নির্মিত সমাধি ও প্রাচীর বেষ্টিত অঙ্গনটি দেখে অনুমান করা যায় তারা বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। স্বরূপ চন্দ্র রায় তার সূবর্ণ গ্রামের ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেন।

 

 

সোনারগাঁয়ে পাঁচপীর বা ফকিরের শ্রেণীবদ্ধ রূপে পাঁচটি মাজারের ভংগ্নাবশেষ আজও বিদ্যমান আছে। তাহার উপরে লেখা আছে গয়েসদি, সামসদি, সিকান্দর, গাজী ও কালু। গয়েসদি-বাদশাহ গয়েসউদ্দিন, সামসদি-পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গের স্বাধীন শাসনকর্তা সামসুদ্দিন। সিকান্দার-বাংলার প্রসিদ্ধ বাদশাহ, যাহার হাতে বাংলা জরিপ হয়েছিল। গাজী-ধর্মযুদ্ধে জয়ী হওয়া গাজী খাঁ, কালু-হিন্দু ফকির গাজীর মন্ত্রনদাতা ও অত্যন্ত প্রিয় সহচর।

 

 



দমদমা প্রাচীন পুরাকীর্তির বেশির ভাগই দমদমার অভ্যন্তরে অবস্থিত। সুলতান জালাল উদ্দিন ফতে শাহর মসজিদ, মুন্নাশাহ ও দানেশমান্দ ইব্রাহীমের মাজার সংলগ্ন নহবত খানা, টাকশাল সহ অসংখ্য প্রাচীন ইমারতের অনেক নির্দশনই দমদমা এলাকায়। এই দমদমাকে স্থানীয়রা বার আউলিয়ার এলাকা বলে থাকে।

 

 


আলাউদ্দিন হোসেন শাহী মসজিদঃ গোয়ালদীতে প্রায় সাড়ে চার শত বছরের পুরাতন একটি মসজিদ পরিলক্ষিত হয়। আলাউদ্দিন হোসেন শাহর রাজত্বকালে মোল্লা হায়বর খান ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে ১২টি আয়তাকার পোড়া মাটির কাঠামো নির্মিত ফলক সাদৃশ্য মসজিদটি নির্মাণ করেন। এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির চারদিকে ফুল পাতা এবং মাঝে ঝুলন্ত নকশা রয়েছে।

 


 
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও পানাম নগরীঃ সোনারগাঁ একটি অতি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জনপদ এর প্রাচীন নাম সূবর্ণ গ্রাম। চারশত বছরের পুরানো ইংরেজ আমলে তৈরি মঠবাড়ি, পোদ্দার বাড়ি, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নীলকুঠি, কাশিনাথের বাড়িসহ রয়েছে নানা প্রাচীন ভবন।

 

 

দুটি লাইনে সাড়ি বদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকা ইটের তৈরি দুতলা, তিনতলা বিশিষ্ট ইমারত গুলি সোনারগাঁয়ের প্রানকেন্দ্র ছিল। সে সময় গড়ে উঠা অধিকাংশ ভবনই এখন জীর্নদশা ও ভগ্নাবশেষ অবস্থায় দাড়িয়ে আছে।

 

 

তৎকালীন সময়ে সোনারগাঁ থেকে ঈসাখার রাজধানী স্থানান্তর হলেও আজও সর্বত্র পরিলক্ষিত হয় ইংরেজ আমলের তৈরি অসংখ্য ইমারত ও ইতিহাস ঐতিহ্য ধারন করে থাকা বাংলার প্রাচীন রাজধানী খ্যাত সূবর্ণ গ্রাম সোনারগাঁ।

 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন