Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

হত্যা করে অটোছিনতাই, জড়িত গ্যারেজ মালিক  

Icon

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২১, ০৬:৪২ পিএম

হত্যা করে অটোছিনতাই, জড়িত গ্যারেজ মালিক  
Swapno

শহর ও শহরতলীর আশপাশে অটোরিক্সা, মিশুক ও ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায় কয়েকগুণ। প্রতরকচক্রের সদস্যরা যাত্রী সেঁজে সহজ-সরল চালকদের বোকা বানিয়ে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ছোট্ট বাহনগুলো। অভিযোগ রয়েছে, ছিনতাইকারীদের বাধা দিলেই চালকদের হারাতে হয় প্রাণ। খুবই নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয় তাদের। ওই সব ছিনতাইকারীদের সাথে জড়িত রয়েছে অধিকাংশ গ্যারেজ মালিকরা।

 

সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে ফতুল্লা, বন্দর ও আড়াইহাজার এলাকায় যাত্রী সেজে পাঁচজন অটো চালককে নির্মমভাবে হত্যা করে তাদেরে অটো রিক্সা, মিশুক ও ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকরী চক্র। প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডই খুবই নির্মম। পুলিশ বলছে, প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের পর থানায় মামলা হয়েছে এবং আটক করা হয়েছে সন্দিগ্ধ ব্যক্তিকে। স্থনীয়রা বলছেন, পুলিশ কতিপয় ছিনতাইকারীকে আটক করলেও মূল হোতারা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। প্রশ্ন উঠেছে, আটকের পরও প্রশাসন ছিনতাই চক্রের নেটওয়ার্কটি বিরুদ্ধে আশানরূপ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি কেন?


 
সূত্র বলছে, নগরীতে চোরাই অটোরিকশা, মিশুক ও ইজিবাইক অল্প দামে কিনছে কতিপয় গ্যারেজ মালিকরা। চোরাই বাহনগুলো ক্রয় করে শুধু মাত্র ব্যাটারীগুলো সংরক্ষণ করছে তারা। অটোরিক্সাগুলো কেটে টুকরো করে ধ্বংস করে দেয়া হয়; যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারে। এছাড়া এক এলাকার অটোরিকশা অন্য এলাকায় বিক্রি করে তারা।


 
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্যারেজ মালিক জানান, শহরের অধিকাংশ গ্যারেজের মালিকরা জানেন চক্রটির সম্পর্কে। ছিনতাই কিংবার চুরির পর কাদের কাছে বিক্রি করা হয় সেই তথ্যও রয়েছে কতিপয় গ্যারেজ মালিকদের নিকট। সূত্রটির দাবী চোরাই বাহন বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছে একটি দালাল চক্র, যারা বিভিন্ন গ্যারেজ মারিকদের কাছে বাহনগুলো সরবরাহ করে থাকে। গ্যারেজ মালিকরা চাইলে চক্রটির সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারে। ছিনতাই চক্রের বিষয়ে নগরীর একাধিক গ্যারেজ মালিকের সাথে কথা বললে বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, ঈদের আগে বিভিন্ন প্রতারক ও ছিনতাইকারীরা ফোন করে ঈদের বখশিশ দাবী করে। নতুন গামছা, লুঙ্গীসহ ঈদের খরচ বিকাশে না পাঠালে অটোরিকশা চুরি করে নিয়ে যাবে এমন হুমকি প্রদান করে।


 
সূত্র জানিয়েছে, নগরীর চাঁনমারি, দেওভোগ মাদ্রাসা এলাকা, খিলমার্কেট ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকা রয়েছে বড় একটি ছিনতাইকারী চক্র। এছাড়া চাষাড়া রেলষ্টেশন উল্টো পাশে রয়েছে আরেকটি চোরের চক্র। এসব অপরাধীরা নানা কৌশলে ছিনিয়ে নেয় গ্রাম থেকে আসা মানুষের সর্বস্ব। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্যারেজগুলোতে চালকের সংকট থাকলেও প্রতিনিয়ত তাদের অটো রিক্সার সংখ্যা বাড়ছে যা আয়ের সাথে অসামঞ্জস্য।


 
গ্যারেজ মালিকদের সাথ কথা বলে জানা গেছে, নতুন একটি অটোরিক্সার দাম ৪০ হাজার টাকা, একটি মিশুক এক লাখ ১০ হাজার টাকা, ইজি বাইক দেড় লাখ টাকা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছিনতাই চক্রটি অটোরিক্সাগুলো আট থেকে দশ হাজার টাকায়, মিশুক পনের থেকে আঠার হাজার টাকা এবং ইজিবাইকগুলো ত্রিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকে।

   
 
এবিষয়ে নারায়ণগগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমরা অটো ছিনতাই চক্রের মূল হোতাকে ধরতে পেরেছি। সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অন্য যারা জড়িত, তাদেরকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে। এই অটোগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে ছিনতাই করে যেই গ্যারেজে বিক্রি করা হতো সেই গ্যারেজ মালিককে সনাক্ত করতে পেরেছি। আমরা খুব কাছাকাছি চলে আসছি, আশা করছি দ্রæতই তাকে গ্রেফতার করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘অটো চোর চক্রের সাথে যেই গ্যারেজ মালিক জড়িত বলে সনাক্ত করতে পেরেছি, সে এই সমাজে সবার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হয়তো অনেকেই জানতো না যে, সে এই কাজ করে। আমরা তাকে আইনের আওতায় এনে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে দিবো।’  


উল্লেখ্য, গত মাসের ২৮ জুন নগরীর ইসদাইর এলাকার পৌর ওসমানী স্টেডিয়ামের সামনে যাত্রী ভেসে চার জন ছিনতাইকারীর একটি চক্র চালক রাজুকে গলা কেটে হত্যা করে ছিনিয়ে নেয় তার মিশুকটি। এর আগে গত ১৭ জুন ফতুল্লার পিলকুনি এলাকায় রাত ১২টায় আনোয়ার হোসেন নামে এক অটোচালককে নির্মমভাবে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা একটি অটো ছিনিয়ে নিয়ে যায়।


 
গত  ১৮ ফেব্রুয়ারী বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বুরুন্দী কুড়িয়াভিটা এলাকায় মো. সাদেক মিয়া (৪৫) নামের এক অটো চালককে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর তার অটোরিকশাটি নিয়ে যায় যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা। গত ৯ মার্চ আড়াইহাজারে সবুজ (২৪) নামে এক যুবককে খুন করে তার অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ২০২০ সালের ৫ সেপ্টম্বর  রাতে ফতুল্লার দাপা বেপারিপাড়া থেকে যাত্রী সেজে মিশুক পরিবহনের চালক ওমর নামের এক ব্যাক্তির গাড়ীতে উঠেন।

 

এ সময় চালক অটোরিকশাটি চালিয়ে ফতুল্লার সেহাচর লালখাঁ স্কুলের সামনে পৌছামাত্রই আগে থেকে উৎপেতে থাকা অজ্ঞাত ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্যরা চালককে অস্ত্রেরমুখে জিম্মি করে মিশুকটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ১৬ সেপ্টম্বর সকালে ফতুল্লা বাজারের সামনে চালের বস্তা আনার জন্য ক্রেতা সেঁজে দুইজন ব্যক্তি ভাড়া নেন। চোরদের মধ্যে একজন রিক্সার বসা থেকে এবং অপরজন মিশুক পরিবহরের চালককে নিয়ে চালের বস্তা ক্রয় করার জন্য যান। মিশুক চালকের কাছে চালের বস্তা নিয়ে রাস্তায় এসে দেখে তার মিশুকটি চোরের নিয়ে গেছে।


 
১৩ আগস্ট ফতুল্লায় একটি রিকশার গ্যারেজ থেকে আব্দুল কাদের (৩৫) নামে গ্যারেজ ম্যানেজারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লামাপাড়া এলাকার নূর মোহাম্মদের রিকশার গ্যারেজ থেকে তার লাশ পাওয়া যায়। বিশিষ্টজনরা বলছেন, প্রশাসন নজদারীর অভাব ও অর্থলোভী গ্যারেজ মালিকদের মুনাফার কারণেই বছরের পর বছর রিক্সা ছিনতাই ও হত্যাকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের ভাষ্য, প্রশাসন বিষয়টিকে অবহলা নাকরে গুরুত্বসহকারে প্রত্যেকটি মামলা তদন্ত করলে এই চক্রের মূল হোতাদের শনাক্ত করে আইনে আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হতো।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন