হাই-বাদলের স্বেচ্ছাচারিতার মাসুল দিয়েছে আ.লীগ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৯ পিএম

কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে তাণ্ডব ঠেকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। এতোকাল আওয়ামী লীগের অন্যতম ঘাঁটি নারায়ণঞ্জে কখনোই আওয়ামী লীগ কার্যালয় পোড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর করে তছনছ করার ঘটনা ঘটেছে। এতে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাদেও দৈন্যতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কার্যালয় পরিদর্শনে আসলে সেসময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা কেউই উপস্থিত ছিলেননা। কেন নারায়ণগঞ্জের তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা এতো সহিংসতার মধ্যেও সাড়া দেয়নি। আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়ায়নি এর ব্যর্থতার দায়ভার কার এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদলের উপর অভিযোগের পাহাড়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় নতুন নয়। শত অভিযোগের মধ্যেও ২০২২ সালের অক্টোবরে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে আগের কমিটির সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলকে বহাল রাখা হয়। কিন্তু কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে তাদের দুইজনের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক বিরাজ করছিল। এমনকি দুইজনের জেলা আওয়ামীলীগের কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করতে দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের মনে শেষ কফিনটা তাদের এই বিরোধ নাটকেই ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এতো দীর্ঘ সময়েও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করিয়ে আনতে পারেনি। বরং স্বেচ্ছাচারি মনোভাব দেখিয়ে পৃথক কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। আর তৃনমূলের আপত্তির কারণে তাদের দেয়া কোন কমিটিই অনুমোদন পায়নি। দাবি উঠেছে, অবিলম্বে ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের দুজনকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের এই মুহুর্ত্বে সবচাইতে চর্চিত বিষয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পৃথকভাবে কেন্দ্রে জমা দেয়া জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ খসড়া তালিকা। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের জমা দেয়া কমিটিতে প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের ছায়া ছিল বড় আকারে। এছাড়া এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্টরা সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে। আর ভিপি বাদলের নিজের পছন্দের ব্যক্তিরাও বাদ পড়েনি। অপরদিকে আবদুল হাইয়ের জমা দেয়া জেলা আওয়ামীলীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট খসড়া কমিটিও যে তুখোড় হয়েছে এমনটি নয়। জেলার ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতাদের নাম বাদ পড়লেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনই একটি জায়গায় একই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন। সেটি হলো ভিপি বাদল যেখানে কমিটিতে তার স্ত্রী নাহিদা হাসনাতকে সদস্য পদে প্রস্তাব করেছেন, আবদুল হাই তার ছেলে মো. তানভীর হাইকেও সদস্য পদে প্রস্তাব করেছেন। খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে আওয়ামীলীগের তৃণমূলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
নারায়ণগঞ্জের প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল হাইয়ের প্রস্তাবিত ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়েও নানা আলোচনা ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে। আবদুল হাইয়ের কমিটিতে শামীম ওসমান ফলাও করে প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও এই কমিটিতে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির থাকা আর ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতাদের বাদ পড়ে যাওয়া নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয় তৃণমূলে।
আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতার অভিমত নিয়ে জানা গেছে, ভিপি বাদল যেখানে সহ-সভাপতি পদে বেশ কিছু ব্যক্তি যারা আওয়ামীলীগ থেকে দীর্ঘদিন দূরে আছেন, কিংবা সক্রিয় রাজনীতিতে নেই, প্রবাসী জীবন যাপন করছেন সেই ধরণের ব্যক্তিদের সহসভাপদি পদে আবদুল হাইয়ের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান দেয়া হয়নি। কিন্তু কিছু বিষয় আলোচনায় এসেছে, সাধারণত সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, সাবেক সাংসদদের নাম সদস্য পদে প্রস্তাব করা হয়। আবদুল হাইয়ের কমিটিতেও এমনটি হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু সাবেক সংরক্ষিত আসনের সাংসদ এড. হোসনে আরা বাবলির ক্ষেত্রে। ঠিক কী কারণে তাকে সহ-সভাপতি পদে আবদুল হাই কমিটিতে নাম প্রস্তাবনায় নিয়ে আসলেন সেটি পরিষ্কার বোধগম্য ছিলনা আওয়ামীলীগ নেতাদের কাছে। তারা বলছেন, সর্বশেষ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতেও হোসনে আরা বাবলী সদস্য পদে ছিলেন।
তবে মজার বিষয় , আবদুল হাই কিংবা ভিপি বাদলের দুইজনের কমিটিতে ঠাঁই হয়নি আওয়ামীলীগের দুর্দিনে লাগাতার সার্ভিস দেয়া দুই জাদরেল নেতার। বয়োজ্যষ্ঠ আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে আবদুল হাইয়ের কাছে প্রত্যাশাও বেশি করেন আওয়ামীগ নেতারা। জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে থাকা এড. আসাদুজ্জামান আসাদ এবং আরজু রহমান ভূঁইয়া কেন আবদুল হাই কিংবা ভিপি বাদলের খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা নিতে পারলোনা এটি নিয়ে বিস্ময়ের সাথে ক্ষোভের কমতি নেই তৃণমূলে।
আওয়ামীলীগ নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এড. আসাদুজ্জামান যিনি আওয়ামীলীগের সময়কালে পিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে আওয়ামীলীগের দুর্দিনে অর্থাৎ ৭৫ পরবর্তী সময়ে মহানগর আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার হোসেন যখন সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তৎকালীন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ। এছাড়ার এর দুই বছর পর সরকারি তোলারাম কলেজের ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হন আরজু রহমান ভূইয়া। তিনি বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। তাছাড়া এরশাদ আমলে তিনি আওয়ামীলীগের হয়ে উপজেলা নির্বাচনও করেছেন। জেলা আওয়ামীলীগের বিগত কমিটিতে সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আসাদুজ্জামান আসাদা পিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতিতে আওয়ামীলীগ প্যানেলের প্রার্থী হিসেবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুইজন ডাক সাইটের আওয়ামীলীগের নেতাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের প্রস্তাবিত দুই কমিটিতে কেন এড়িয়ে গেলেন এটি বোধগম্য নয় তৃণমূলে।
জেলা আওয়ামীলীগের গত কমিটিতে সদস্য পদে থাকা শামসুজ্জামান ভাষানীরও নাম প্রস্তাব করেননি সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক। অথচ আওয়ামীলীগের দুঃর্দিনে আন্দোলন সংগ্রামে লাগাতার ভূমিকা রেখেছেন ভাষানী। চিলেন নারায়ণগঞ্জ যুবলীগের সভাপতি। শুধু যে নারায়ণগঞ্জ। কেন্দ্রেও রেখেছেন পারফর্মেন্স। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে (শেখ সেলিম- এড. ইকবাল পরিষদ) তিনি সদস্য হিসেবে ছিলেন।
আবদুল হাইয়ের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নাম প্রস্তাব করা মুক্তিযোদ্ধা এড. মফিজউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নন।রাজনীতির চাইতে তিনি আইনপেশা নিয়েই স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। এছাড়া আবদুল হাইয়ের প্রস্তাবিত কমিটিতে কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো. সেলিম সম্পর্কে তৃনমূল নেতাকর্মীদের ধারণা নেই। তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তারের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কেও আওয়ামীলীগ নেতারাই মনে করতে পারছেননা। সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল পারভেজও বেশ কয়েকবছর যাবত নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। আবদুই হাইয়ের প্রস্তাবিত কমিটিতে থাকা ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এড. কবির হোসেন রূপগঞ্জে পরপর দুই বার আওয়ামীলীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধীতা করে নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি কী করে আবদুল হাইয়ের প্রস্তাবিত কমিটিতে আসলেন তাও বিরাট প্রশ্ন। এছাড়া ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবু দাইয়ান সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নন আওয়ামীলীগ নেতারা। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আবদুল হাইয়ের কমিটিতে এই পদে সালাউদ্দিন সিকদারের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ মাত্র কয়েকবছর আগেও সালাউদ্দিন শিকদার কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে ছিলেন। এত দ্রুত অটো প্রমোশন নিয়ে কী করে জেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে বিবেচনা করা হলো সেটিও নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রস্তাব করা রূপগঞ্জের আবদুল কাইউম খানও কখনো পদ-পদবি নিয়ে রাজনীতি করেছেন কেউ শোনেননি। এমনকি তাকে হাইব্রীড নেতা হিসেবেও আখ্যা দেন অনেকে। হাইয়ের কমিটেতে শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহ আলমকে চিনতে পারছেননা আওয়ামীগ কর্মীরা। এছাড়া সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রূপগঞ্জের মোতাহার হোসেন ভূইয়া নাদিম সম্পর্কেও জানাশোনা নেই তৃণমূলে। এছাড়া আবদুই হাইয়ের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে প্রস্তাবিত জসিমউদ্দিনের সাথে জাপা নেতা সাংসদ সেলিম ওসমানের সাথে দহরম-মহরম সম্পর্কের কথাও স্পষ্ট।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের স্বাক্ষরিত জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির প্রস্তাবনায় যাদের নাম দেওয়া হয় তারা হলেন, সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই, সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বাচ্চু, বীর মুক্তিযোদ্ধা খবির উদ্দিন, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. কাদির, এডভোকেট হোসনে আরা বাবলী (সাবেক এমপি), আদিনাথ বসু, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, খন্দকার আবুল বাসার টুকু, মো. ছানাউল্লাহ ও হাজী জসিমউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, আলহাজ্ব ইকবাল পারভেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মফিজউদ্দিন আহমেদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. মাসুদ-উর রউফ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো. সেলিম, তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এড. কবির হোসেন, দপ্তর সম্পাদক এমএ রাসেল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবু দাইয়ান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সালাউদ্দিন সিকদার, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাইউম খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. জালালউদ্দিন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মরিয়ম কল্পনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এড. নুরুল হুদা, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এরফান হোসেন দীপ, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোনতাজউদ্দিন মর্তুজা, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক উদ্দিন জার্জিস, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহ আলম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোতাহার হোসেন ভূইয়া নাদিম, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. নিজাম আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক সুন্দর আলী, আবু সুফিয়ান ও তাবিবুল কাদির তমাল, উপ দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুলহাস মিয়া, কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান (সাবেক চেয়ারম্যান)।
সদস্য পদে একেএম শামীম ওসমান (এমপি), গাজী গোলাম দস্তগীর (এমপি), নজরুল ইলাম বাবু (এমপি), আব্দুল্লাহ আল কায়সার (সাবেক এমপি), এনাজুর রহমান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা মহিউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন টুলু, এড. আনিসুর রহমান দিপু, এমএ সালাম (চেয়ারম্যান), আজিজুল হক আজিজ, মেজর (অবঃ) মশিহুর রহমান, মো. শাহজালাল মিয়া, মিয়া আলাউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. শামসুল ইসলাম ভূইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মাসুম রহমান, মাহফুজুর রহমান কালাম, কাওছার আহমেদ পলাশ, এড. সেলিনা আক্তার, মো. আবদুল মান্নান, ব্যারিস্টার খান মোহম্মদ শামীম আজিজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফাজ খান, হাজী আমজাদ হোসেন, মো. তানভীর হাই, মো. খোরশেদ আলম, আশরাফ আলম ফিরোজ, শাহজাহান ভূইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সাইফুল ইসলাম, মাহবুবুল ইসলাম রাজন, ডা. আউয়াল, হালিম সিকদার, এড. তায়েবুর রহমান, মতিউর রহমান, আলতাফ হোসেন, আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর মাস্টার চেয়ারম্যান, মো. শাহজাহান মিয়া।
অপরদিকে কেন্দ্রে জমা দেয়া আবু হাসনাত শহীদ বাদলের প্রস্তাবিত ৭৫ জনের কমিটিতে আগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সহসভাপতিদের আমলেই নেয়া হয়নি। এর মধ্যে সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নামের সাথে একই পদে চন্দনশীলের নাম প্রস্তাব করাটাকেও অনেকে আড় চোখে দেখছেন। জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে নাসিক মেয়র ডা. আইভী থাকবেন কিনা সেটি নিয়েও ভিপি বাদলের নাম প্রস্তাবে সন্দেহ তৈরি হয়েছি। এছাড়া মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে রয়েছে বাবু চন্দনশালী। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মহানগর আওয়ামীলীগেরই নাম প্রস্তাবে জাতীয় পরিষদের সদস্য। তাকেই ১নং সহসভাপতি হিসেবে আইভীর সাথে নাম প্রস্তাব করেছেন ভিপি বাদল।
ভিপি বাদলের জমা দেয়া কমিটিতে শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপের ছায়াই পরিলক্ষিত হয়েছে বেশি। কেননা, বাদলের প্রস্তাবিত কমিটিতে সহসভাপতি পদে ফয়েজউদ্দিন লাভলুর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। ফয়েজউদ্দিন লাভলু সম্পর্কে শামীম ওসমানের বেয়াই হন। তিনি সরাসরি আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সরব হতে দেখা যায়নি। তার বাবা খোকা মহিউদ্দিন আওয়ামীলীগের জাদরেল নেতা ছিলেন। যদিও তিনি পরবর্তীতে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং আমৃত্যু জাতীয় পার্টিতেই ছিলেন। ফয়েজউদ্দিন লাভলুর চাচা মেজবাহউদ্দিন দুলু জাতীয় পার্টি নেতা প্রয়াত সাবেক সাংসদ নাসিম ওসমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ট কর্মী ছিলেন। আমৃত্যু তিনি জাতীয় পার্টিতেই ছিলেন।
ভিপি বাদলের প্রস্তাবিত কমিটিতে সহসভাপতি পদেও মো. মনির হোসেনকে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামীলীগ নেতাদের দাবি, তিনি আওয়ামীলীগ ঘরানার লোক হলেও সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হননি কখনো। সহ-সভাপদি পদে শরফুদ্দিন আহমেদকেও নিয়েও নানা কথা আলোচনায় রয়েছে। শরফুদ্দিন আহম্মেদ সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদলের সম্বন্ধী। এছাড়া প্রয়াত জমির আহমেদ জমুর মেয়ের জামাই।
সহ-সভাপতি পদের সিরাজুল ইসলামকে নিয়েও কথা হচ্ছে।তিনি বন্দরের ধামগড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত। ৯০ এর দশকে এক যুবলীগ নেতা হত্যার আসামি করা হয় তাকে। এরপর তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।
সহ-সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব করা আবুল বাশার টুকুর বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার অভিযোগ উঠে। এমনকি তাকে শোকজ পর্যন্ত করা হয়। অদ্যবধি পর্যন্ত তিনি সেই শোকজের জবাব দেননি বলে জানান আওয়ামীলীগ নেতারা। এছাড়া সহসভাপতি পদের কাজী বেনজীর আহমেদ আড়াইহাজারে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা। জেলার আ.লীগ নেতারা তাকে তেমন চেনেননা বলে জানান। এছাড়া সহসভাপতি পদের অনুপ সাহা ৩৫ বছর আগে বাংলাদেশ ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। শামীম ওসমান ২০১৪ সালে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশে আসা-যাওয়া শুরু করেন। অনুপ কুমার সাহার দুই মেয়ে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কিছুদিন আগে তার এক মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শামীম ওসমান ও তার রাইফেল ক্লাবের বন্ধুরাও অংশগ্রহণ করেন।
সহসভাপতি পদের অনুপ সাহার মতোই মাসুদ চৌধুরী মজনুও ৩৫/৪০ বছর আগে দেশ ত্যাগ করে সুইডেনে বসবাস করেন। অনুপের মতো তিনিও ২০১৪ সালে শামীম ওসমান এমপি হওয়ার পর দেশের সাথে যোগাযোগ বাড়ান। মজনুও শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত বন্ধু। ভিপি বাদলের প্রস্তাবিত কমিটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মেজর মশিউর রহমান বাবুল আগের কমিটিতেও সদস্য পদে ছিলেন। তবে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন না। আওয়ামীলীগের নেতারা বলেন, মশিউর রহমান বাবুল প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এবং গত নির্বাচনের আগে রূপগঞ্জের বাড়িতে আথিতেয়তা গ্রহণ করেন। এরশাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে তাকে জানতেন সবাই।
এছাড়া ভিপি বাদলের প্রস্তাবিত কমিটিতে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদা আক্তার ফেনসি যিনি সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।তিনি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ জাপা নেতা লিয়াকত হোসেন খোকা এবং তার স্ত্রী ডালিয়া হোসেনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামীলীগের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে ১৪ বছরে তাকে দেখা না গেলেও বাদলের প্রস্তাবনায় রয়েছেন তিনি। এছাড়া ফেন্সির স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ক্যাডার নীরু ও বাবলুর সহযোগী ছিলেন বলে অভিযোগ আওয়ামীলীগ নেতাদের।
ভিপি বাদলের প্রস্তাবিত কমিটিতে কোষাধ্যক্ষ পদে কাজী সুমনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। কাজী সুমনের বিরুদ্ধে চোরাই তেলের ব্যবসা, মাদক ব্যবসার অভিযোগ তুলেছিলেন আওয়ামীলীগ নেতারা। আগের কমিটিতে ভিপি বাদল বার বার তার নাম প্রস্তাব করলেও কার্যকরী কমিটির আপত্তিতে তাকে জেলা আওয়ামীলীগের ঠাঁই দেয়া যায়নি।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদকের প্রস্তাবিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকা আজিজুল হক ভূঁইয়া বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টি নেতা আয়নাল হক ভূইয়ার ছেলে। আজিজুল হকের আরেক ভাই কামাল ভূঁইয়া আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়রম্যান হন। নির্বাচনের দিন আজিজুল হক ভূইয়া ও তার ভাই কামাল ভূঁইয়ার সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয় এবং এতে ডিবি পুলিশের দুই সদস্য গুরুতর আহত হন, যারা এখনো চিকিৎসাধীন আছেন। এব্যাপারে দুইজনকে আসামী করেই যে মামলা রয়েছে তা এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়া সদস্য হিসেবে থাকা আলী হোসেন হচ্ছেন সোনারগাঁয়ের সাদিপুরের আলী হোসেন। এলাকার ১০০ জন মানুষকে জিজ্ঞাসা করলেও তাকে বিএনপির আলী হোসেন বলেই পরিচিত করে দেয় এলাকাবাসী এমন অভিযোগ। এছাড়া ভিপি বাদলের প্রস্তাবিত কমিটিতে জেলার ত্যাগী নেতাদের চেয়ে নিজের পরিবারকে প্রাধান্য দেয়ার চিত্র উঠে এসেছে তার স্ত্রী নাহিদা হাসনাতের নাম সদস্য পদে থাকায়। নাহিদা হাসনাত মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও পদ রয়েছে। তাহলে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে আসাটা কেন জরুরি মনে করলেন ভিপি বাদল সেটিও নেতাকর্মীদের কাছে প্রশ্ন।
গতবছরের ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল (ভিপি বাদল) স্বাক্ষরিত জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির প্রস্তাবনায় যাদের নাম রাখা হয়েছে তারা হলেন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই, সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াত আইভী/বাবু চন্দন শীল, ফয়েজ আহমেদ উদ্দিন লাভলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনির হোসেন, শরফুদ্দিন আহমেদ, মো. সিরাজুল ইসলাম, খন্দকার আবুল বাশার টুকু, কাজী বেনজীর আহমেদ, মো. সানাউল্লাহ (খাদেম), অনুপ কুমার সাহা, মাসুদ চৌধুরী মজনু, সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, নাজমুল আলম সজল, মীর সোহেল, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. মাসুদ-উর রউফ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক দীপক কুমার বণিক দিপু, তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মোজাম্মেল হক জুয়েল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আলমাছ ভূইয়া, দপ্তর সম্পাদক এমএ রাসেল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সামসুদ্দিন খান আবু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন নাসির, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন পান্নু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মেজর মশিউর রহমান বাবুল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদা আক্তার ফেনসি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদনী টুলু, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মীর্জা সোহেল, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. হায়দার আলী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক আরমান হোসেন জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রোমান, জাহাঙ্গীর হোসেন ও আলহাজ্ব ফায়জুল ইসলাম, উপ দপ্তর সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম রাজন, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিল্লুর রহমান লিটন, কোষাধ্যক্ষ কাজী সুমন।
সদস্য পদে একেএম শামীম ওসমান (এমপি), নজরুল ইলাম বাবু (এমপি), গাজী গোলাম দস্তগীর (এমপি), বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. শামসুল ইসলাম ভূইয়া, আব্দুল্লাহ আল কায়সার (সাবেক এমপি), মো. শাহজাহান ভূইয়া, এমএ রশিদ, মো. সাইফুল্লাহ বাদল, মো. শওকত আলী, তোফাজ্জেল হোসেন মোল্লা, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, কাজিম উদ্দিন প্রধান, মানজারী আলম টুটুল, আজিজুল হক ভূইয়া, খোরশেদ আলম, মিয়া মো. আলাউদ্দিন, হালিম শিকদার, মনির শিকদার, এড. আবু তাহের ফজলে রাব্বী, মনিরুজ্জামান বুলবুল (পিপি), নাহিদা হাসনাত, প্রফেসর শিরিন বেগম, ফেরদাউসি নীলা, সীমা রানি পাল, এহসানুল হক নিপু, শাহাদাত হোসেন সাজনু, এড. হাসান ফেরদাউস জুয়েল, এড. মো. মোহসিন, সুন্দর আলী, নজরুল ইসলাম, আলী হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির উদ্দিন আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া, শেখ সাইফুল ইসলাম, মো. আলী হোসেন ও আবু মো. শরিফুল হক।