১০ ডিসেম্বর পাল্টা কর্মসূচি দিতে হাইকমান্ডকে চাপ না.গঞ্জ বিএনপির

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৫৯ পিএম

# আবারো ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে আলোচনা
দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিতে চাওয়া দলগুলো নির্বাচনে আমেজ আনতে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে অপর দিকে বিএনপি-জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনসহ আরো দলগুলো বর্তমান সরকারের নির্বাচনকে অবৈধ নির্বাচন বলে এতে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে এবং চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। একদিকে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকরা নির্বাচন করতে উৎসাহী হয়ে উঠেছে।
অপর দিকে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমননা দলগুলো বলে যাচ্ছে যে কোন মূল্যে এবার এই নির্বাচন হতে দিবে না যাকে ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে জানা গেছে, মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আগামী ১০ই ডিসেম্বর বড় আকারের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে এ সমাবেশ করবে।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকায় এটি হবে আওয়ামী লীগের প্রথম সমাবেশ। গত বছরের এই দিনে রাজধানীতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মহাসমাবেশ করেছিল। এ কারণে ১০ ডিসেম্বর ঘিরে দেশের রাজনীতিতে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছে, কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের কোন দিক নির্দেশনা এখনো দেওয়া হয়নি। কিন্ত আমরা আশাবাদী নিশ্চিয়ই দল একটি কর্মসূচি ঘোষণা দিবেন।
তাদের আরো দাবি, বর্তমানে সরকার পতনের ১ দফা দাবি হিসেবে কঠোর আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। আমাদের নির্দেশনার কোন সময় লাগবে না ডাক দেওয়ার সাথে সাথে হাজারো নেতাকর্মী রাজপথে ঝাঁপিয়ে পরবে বলে দাবি জানিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের আরো দাবি, আওয়ামী লীগ যদি সেদিন আমাদের কোন প্রকারের কর্মসূচি পালন করতে না দেয়। তখন আমাদের নেতাকর্মীরা এটার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবে ও বলে দাবি জানিয়েছে অনেকেই। যার কারণে বলা চলে আবারো টার্গেট ১০ ডিসেম্বর।
সূত্র মতে জানা গেছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বরে ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টা সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিলো। যাকে ঘিরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিলা জনমনে। তা ছাড়া ও সেদিনকে ঘিরে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু সমাবেশে কোন প্রকারের সহিংসতা না হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় কিন্তু বর্তমানে নির্বাচনকে নিয়ে ইতিমধ্যে বিএনপি দফায় দফায় হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করে যাচ্ছে।
এমনকি রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই উত্তপ্ত যার কারণে এই পাল্টাপাল্টা সমাবেশকে ঘিরে আবারো আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে জনমনে। জানা গেছে, এতদিন বিএনপির ব্যানারে অবরোধ ও হরতালের বাইরে রাজপথে সমাবেশের মতো কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। তবে এবার গুম-খুনের শিকার এবং দলটির কারাবন্দি নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের ব্যানারে সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, গুম, খুন আর কারানির্যাতিত নেতাকর্মীর পরিবার নিয়ে রাজধানীতে সমাবেশ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় তারা। বিপরীতে হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের মানবেতর জীবন-যাপনের কথা তুলে ধরতে ও বিচারের দাবিতে ক্ষমতাসীনরা ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের এই সমাবেশকে সফল করতে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিতে চলেছে। এরই মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা সর্বাত্মক নির্বাচনী উৎসবে মেতে উঠলেও বায়তুল মোকাররমের সমাবেশকে ঘিরেও সর্বোচ্চ জমায়েতের প্রস্তুতি চলছে।
অপর দিকে বিএনপি যেহেতু বর্তমানে আন্দোলনেই রয়েছে তাদের আর প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই তারা প্রস্তত আছেই জানিয়েছে তারা। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি সংশয় রয়েছে যে তাদের মধ্যে যারা বেশি মামলার আসামী রয়েছে তারা হয়তো কর্মসূচিতে না ও আসতে পারে। তারা আরো বলেছে, যেহেতু ডিসেম্বর মাস নির্বাচনের পূর্বের মাস যার কারণে এই মাসের দিকে আমাদের নজর একটু বেশিই। এই মাসের সকল কর্মসূচি কঠোর হবে।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা রাজপথে আছি, আর যেহেতু আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস এই দিনকে ঘিরে আমাদের ব্যাপক আয়োজন থাকবে। এখনো দল আমাদের নির্দেশনা দেয়নি। আর আমরা বর্তমানে এই সরকার পতনের আন্দোলনে রয়েছি, আমরা রাজপথেই রয়েছি আমাদের পূর্ব নির্দেশনার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ঝাঁপিয়ে পরবো।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল তারা চায় শুধু কিভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাথে সহিংসতা করা যায়। তা নিয়েই তাদের কার্যক্রম তা না হলে বিগত দিনে ও কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনো মানবাধিকার দিবসে এমন বড় কর্মসূচি পাল করেনি। এবার কেন যদি আমাদের কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা আসে তাহলে আমরা রাজপথে সেটা পালন করবো আর যদি সেখানে কোন দল সহিংসতা করতে আসে তাহলে সেটার ও দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।
জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি, যে কোন মুহুর্তে আমরা এই সরকারের পতনের লক্ষে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পরবো। আর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে তখন আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করবো।
মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, এই স্বৈরাচারি সরকারের পতনের ঘন্টা বাজাতে আমরা রাজপথে প্রতিটি আন্দোলন পালন করে আসছি। আর আমরা বর্তমানে রাজপথেই রয়েছি যখনই দল কোন নির্দেশনা দিবে আমরা যেটা যথাযথভাবে পালন করবো। আর ১০ ডিসেম্বর যেহেতু আমাদের জাতীয় কর্মসূুিচ এই পালনে আমাদের লক্ষ্যে রয়েছে আমরা দলীয় নির্দেশনা পেলেই সর্বাত্মকভাবে পালন করবো।
জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, এই সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের উপরে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল নষ্ট হয়নি যার কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনো রাজপথে আছি। আর আমি আশা করবো আমাদের হাইকমান্ড আমাদের জোড়ালো কোন কর্মসূচি দিবে যা আমরা যথাযথভাবে পালন করবো।