-copy-68a84a749bd13.jpg)
৫৫ টাকা বাস ভাড়ায় সর্বমহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বন্ধন ও উৎসব বাসের ভাড়া ৫০ টাকা থেকে জেলা প্রশাসন ফের টিকেট প্রতি ভাড়া ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে জ্বালানির দাম কিংবা দূরত্ব না বাড়লেও ভাড়া বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নগরীর রাজনৈতিক, সামাজিক, নাগরিক ও পেশাজাবী সংগঠনের নেতারা। সকলেই বলছেন, জেলা প্রশাসকের এই সিদ্ধান্ত অযৌত্তিক যা নিয়ে ফের আন্দোলনের যাওয়ার হুঁশিয়ারী দিয়েছে নগরীর রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
এদিকে গত বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সভায় রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতাদের বিরোধীতার পরও বাসভাড়া ৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম। যা গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ রুটে বর্ধিত বাসভাড়া কার্যকর হতে শুরু করেছে। বর্তমানে নতুন বাস ভাড়া নিয়ে হতাশ যাত্রীরা। তা ছাড়া ইতিমধ্যে নতুন বাসা ভাড়া নিয়ে আজকে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর পরপরই আগামী শনিবার যাত্রী ফোরামের পক্ষ থেকে নতুন বাস ভাড়ার বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তা ছাড়া ৫ টাকা বাস ভাড়া বৃদ্ধিতে ছাত্রদল ইতিমধ্যে আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। এর বাহিরে ৫ টাকা বাস ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে সমালোচনা ঝড় উঠছে। ইতিমধ্যে ৫ টাকা বৃদ্ধিতে নারায়ণগঞ্জে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজমান রয়েছে।
তা ছাড়া গত বৃহস্পতিবারের সভায় নারায়ণগঞ্জ পরিবহন খাত থেকে ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টের আগে কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে বেড়াতো ওসমান পরিবার। তাঁর ভাগ আওয়ামী লীড়ের সড়ক ও সেতু পরিবহন মন্ত্রলায়ের পলাতক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পর্যন্ত পৌঁছাতো এমন গুঞ্জন রয়েছে। ২০০৮ সনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জের সকল পরিবহন নিয়ন্ত্রণে নেন। তাদের কথা যারা শুনেন নাই, তাদের পরিবহন বন্ধ করে দিতেও তারা কর্ণপাত করেন নাই বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের আগষ্টের পরে পরিবহন মালিকরাও অকপটে শিকার করেন তৎকালিন ডিসি মাহমুদুল হাসানের কাছে। যা গতকাল এক সভায় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল তা প্রকাশ করেন। সেই সাথে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন খাত থেকে কারা চাদাঁ নিচ্ছে তাদের যেন নাম প্রকাশ করা হয়। যদিও পরিবহন সেক্টরের মালিকরা তা প্রকাশ করেন নাই। তাছাড়া সভায় বাস ভাড়া বাড়ানো নিয়ে পরিবহন মালিকরা হৈ চৈ শুরু করেন। এমনকি তারা কথার প্রেক্ষিতে হরতাল ধর্মঘট দেয়ার হুমকি প্রদান করেন। তাছাড়া ওসমান পরিবারের জায়গাটা পরিবহন সেক্টরে কারা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তা নিয়ে আলোাচনা তৈরী হয়েছে।সেই সভায় নারায়ণগঞ্জে ২০২৪ সনের ৫ আগষ্টে আগে ওসমান পরিবার পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করেছে এক বৈঠকে পরিবহন মালিকারা জানা নেই বলে মন্তব্য করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, আগের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান যখন পরিবহন ভাড়া নিয়ে সকলের সাথে আলোচনায় বসেন তখন পরবিহন মালিকদের প্রতিনিধি রওশন আলী ওই সভায় বলেছেন তারা পরিবহন থেকে বড় একটি হিস্যা বা চাঁদার টাকা ওসমান পরিবারকে দিত। গত বছরের ৫ আগষ্টের পরে যেহেতু কাউকে চাঁদা দিতে হয় না তাহলে পরিবহনের ভাড়া কমাতে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। পরিবহন মালিকদের কয়েকজনও সেই সভায় বলেন এটা ৫ আগষ্টের আগে ছিল, এখন নেই। তাহলে নতুন চাঁদাবাজ কারা যাদের জন্য আবার ৫ টাকা টিকেট প্রতি বাড়ানো হচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার দাবি উঠলে তা নিয়ে কোন কর্ণপাত শোনা যায়নি।
অভিযোগ উঠেছে, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাস্তবতায় পরিবহন খাতে নতুন করে ‘চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে, নগরবাসী চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি থাকতে নারাজ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই অতিরিক্ত বাসভাড়ার বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যস্ত করেছেন অনেকে। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে ব্যাপক সমালোচনা। অনেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকেও বাসভাড়া বৃদ্ধির নেপথ্যের কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে বর্ধিত মূল্যে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। টিকেট কাউন্টারে গিয়ে হঠাৎ ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি জানতে পেরে সাধারণ যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই টিকেটের ছবি তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।গত বছর জুলাই আন্দোলনের পর নগরবাসীর ব্যাপক অংশগ্রহণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে। প্রধান দাবি ছিল, চাঁদাবাজদের চাঁদা না দিয়ে ভাড়া কমানো। ধারাবাহিক প্রতিবাদ ও কর্মসূচির ফলে গত বছরের নভেম্বর মাসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক টিকেট প্রতি ৫ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নির্ধারণ করেন। এ বিষয়ে সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছিল। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বুধবার এক সভা আহ্বান করে ৫ টাকা ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। সভায় রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়, কিন্তু প্রশাসন সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। এদিকে এক হিসেবে দেখা গেছে, ৫ টাকা বাসভাড়া বাড়ানোর ফলে মাসে অন্তত ৫৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হবে যাত্রীদের কাছ থেকে। তীব্র বিরোধীতার সত্ত্বেও ভাড়া বাড়ানোর পর অতিরিক্ত এই অর্ধকোটি টাকা কার পকেটে যাবে, এই প্রশ্ন সামনে এসেছে।
যাত্রী অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, জেলা প্রশাসকের যেই ভূমিকা তা আমরা ন্যাক্কারজনক মনে করি। আমরা কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছিলাম এসি বাসের ভাড়া কমানোর জন্য, যখন ভাড়া ৭০ থেকে ৮০ করল তখন। সে এটাকে কোনও গুরুত্ব দিল না, আর বাস মালিকরা যখন পরশুদিন তাঁকে চিঠি দিয়ে বললো ভাড়া বাড়াতে হবে, তিনি জরুরি ভিত্তিতে সবাইকে ডেকে নিয়ে ৫ টাকা ভাড়া বাড়ায় দিলো। এই ভূমিকটা জনবিরোধী এবং বাস মালিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। এ সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বাস ভাড়া বৃদ্ধি নারায়ণগঞ্জের মানুষকে হতাশ করেছে। এই অনৈতিক ভাড়া বৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, ক্রীড়া অনুরাগী ও ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, গত এক বছরে জ্বালানির দামও বাড়েনি। সুতরাং এই সময়ে ভাড়া বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং গণবিরোধী। যদি এর সঙ্গে কোনো চাঁদাবাজীর সংশ্লিষ্টতা থাকে তবে তা দ্রুত জনগণের কাছে প্রকাশ করার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, কোন কারন ছাড়াই ৫ টাকা বাস ভাড়া বৃদ্ধি মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।
জামায়াত ইসলামী মহানগর শাখার সভাপতি আব্দুর জব্বার যুগের চিন্তাকে বলেন, বাস মালিক ও যাত্রীদের আলোচনা সাপেক্ষে বাস ভাড়া বাড়াতে হবে বা কমাতে হবে। এখানে কাউকে ঠকানো যাবে না। তা ছাড়া বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সমালোচনা বৃদ্ধি হচ্ছে সেই ক্ষেত্রে ভাড়া একটু কমানো যায় কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তা ছাড়া প্রশাসনের হাতিয়ে দেকা উচিত বিগত দিনে শামীম ও সেলিম ওসমান যেভাবে পরিবহন সেক্টর থেকে চাঁদাবাজি করতেন বর্তমানে তেমন কেউ আছে নাকি।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা বলেন, বাস ভাড়া বাড়ানো জনগণের সঙ্গে অবিচার। এতে শ্রমজীবী, দিনমজুর, শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছাবে। বাস ভাড়া বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষকে নিত্যদিন অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। ইতোমধ্যে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা, এর সঙ্গে ভাড়া বৃদ্ধির বোঝা তাদের জীবনে নতুন সংকট ডেকে আনবে। পরিবহন মালিকেরা সবসময় সুযোগ পেলেই ভাড়া বাড়ায়, কিন্তু সেবার মান বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয় না। রাস্তায় ভাঙাচোরা গাড়ি, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, দুর্ঘটনা ও হয়রানি নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও বারবার সাধারণ মানুষকেই ভাড়া বৃদ্ধির শিকার হতে হচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানায় এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সূজন যুগের চিন্তাকে বলেন, পরিবহন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যাওয়ার ফলে পরিবহন খাত মাফিয়া ও সিন্ডিকেট মুক্ত হয়। সেই অবস্থায় জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব অনুযায়ী ৫০ টাকায় ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধি কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। এটি যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করবে এবং প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা কমাবে।
তিনি জেলা প্রশাসকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাস মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে কোন ধরনের সময় না নিয়ে, যথাযথ পর্যালোচনা ছাড়া এই বর্ধিত ভাড়া কার্যকর করা উচিত নয়। নগরবাসী ও যাত্রী সাধারণের অসন্তোষ বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে ৫ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। তা না হলে নারায়ণগঞ্জবাসী প্রশাসনের নিকট থেকে আস্থা হারাবে।
ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা গতকাল (বুধবার) মিটিং চলাকালীনও বাসভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে বিরোধীতা করেছি। আমরা বাসভাড়া বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখিনি। কিন্তু বিরোধীতা থাকা সত্ত্বেও একচেটিয়াভাবে বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাস-মালিকদের দাবি অনুযায়ী এখন যেহেতু কোনো চাঁদাবাজি হয় না, তাহলে বাসভাড়া বাড়ানোর তো কোনো কারণ নেই। আমরা বাসভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ জানাই। এবং একইসাথে এই ভাড়া প্রত্যাহারের জন্য পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি এক স্টাটাসে লিখেছেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাস ভাড়া সরল অংক। ন্যায্য ভাড়া ৫০ টাকা, চাঁদাবাজের ৫ টাকা, সমান ৫৫ টাকা। ৫ আগস্টের চাঁদাবাজ না থাকায় ভাড়া ছিল ৫০ টাকা। নতুন চাঁদাবাজের কারণে ভাড়া আবার ৫৫ টাকা। প্রকৃতি শূণ্যস্থান পছন্দ করেন না।