
অবৈধ স্ট্যান্ড শহরবাসীর মাথা ব্যথা
# বৈধ ছয়টি অবৈধ নয়টি
# বাড়ছে যানজট ও স্বেচ্ছাচারিতা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় একটি অবদান রাখছে শিল্প-বাণিজ্য অঞ্চল খ্যাত নারায়ণগঞ্জ শহর। যার ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ মানুষের বাস এখন নারায়ণগঞ্জ শহরে। এখানকার শিল্প-কারখানায় কমসংস্থানের কারণে বিভিন্ন জেলার মানুষও এসে ভিড় করছে এখানে। এর ফলে বাংলাদেশের ছোট্ট কিন্তু গরুত্বপূর্ণ এই শহরে এখন প্রায় ৪০ লাখ লোকের বাস। তাই এসব মানুষের নিত্য চলাচলের জন্য আছে বিভিন্ন ধরণের পরিবহনের ব্যবস্থা। এই হুজুগে কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব পরিবহনের স্ট্যান্ড। আর যানজট সমস্যার অন্যতম একটি কারণ হলো শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা বৈধ ও অবৈধ স্ট্যান্ড। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) অনুমোদিত ৮টি স্ট্যান্ডের ৫টির অবস্থানই হলো নারায়ণগঞ্জ শহরে। যেগুলো হলো- কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নিতাইগঞ্জ ও থানা পুকুরপাড়, ১ নং রেলগেইট সংলগ্ন সিএনজি স্ট্যান্ড, জীমখানা সড়ক সিএনজি স্ট্যান্ড, নিউমেট্রো সিনেমা হলের সম্মুখস্থ সড়ক বাস স্ট্যান্ড। বাকি তিনটির একটি পঞ্চবটি ট্রাক টার্মিনাল, বাকি দুটি বন্দর এলাকার নবীগঞ্জের কামাল উদ্দিনের মোড় এবং বন্দর ১ নং খেয়াঘাট রোড। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের অবস্থান নিয়েও রয়েছে সাধারণ জনগণের ক্ষোভ। সেখানে এসব বৈধ স্ট্যান্ডের বিপরীতেই আবার ব্যাঙের ছাতার মতো প্রায় দুই ডজনের মতো অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। যা নারায়ণগঞ্জবাসির দীর্ঘ দিনের দুঃসহ দুর্ভোগ হিসেবে পরিচিত যানজট বৃদ্ধিতে রাখছে বড় ধরণের ভূমিকা। সচেতন মহলের মতে এই অবৈধ স্ট্যান্ডগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে শহরের যানজট অনেকটাই কমে যাবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ জেলা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ শিল্প ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধ হলেও উন্নয়নে বেশ পিছিয়ে। আর বিভিন্ন শিল্পের অবস্থানের কারণে এই জেলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এখানে বসতি গড়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন। এর বাইরেও অস্থায়ীভাবে বাসা ভাড়া নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছেন একটি বিশাল জনসংখ্যা। তাইতো ছোট এই জেলা শহরের তুলনায় এখানে বসবাস করা জনসংখ্যা অনেক বেশি। সেই কারণেই এখানে এখানে পরিবহনের চাপও অনেক বেশি। এই ছোট্ট শহরের বিশাল জনসংখ্যার চাপ নিতে শহরের যানবাহনগুলো চলাচলের জন্য ব্যবহার করার মতো আছে মাত্র একটি প্রধান সড়ক (যা বঙ্গবন্ধু সড়ক হিসেবে পরিচিত)। এই সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কয়েকটি সিএনজি স্ট্যান্ড, অটো স্ট্যান্ড ও বাস স্ট্যান্ডে সড়কের উপর হ-য-ব-র-ল করে রাখা হচ্ছে এসব বাহন। কোন যাত্রী না থাকা সত্ত্বেও একজন দু’জন যাত্রীর অপেক্ষায় বিভিন্ন সিগন্যালে একাধিক পরিবহন দাঁড় করিয়ে ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি করছে যানজট। পেছনে থাকা কোন যাত্রী বা কোন গাড়ির চালক অনুরোধ করলেও তারাই শহরের রাজান এমন একটি ভাব নিয়ে বসে থাকে এসব যানবাহন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় লেখালেখি হলেও কোন ফায়দা হয়নি।
এসব অবৈধ স্ট্যান্ড উঠিয়ে দেওয়ার দাবিতে এবং রাস্তায় অযথা দাঁড়িয়ে যাত্রী না নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসিসহ বিভিন্ন সচেতনমূলক সংগঠন। দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছেন এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। অথচ আমাদের জনপ্রতিনিধিগণ এবং স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে এসব অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে বিশাল পরিমানের চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ আসে বছর জুড়ে। যা তাদের নিজেদের বিভেদে তারাই প্রকাশ করে দেন। অন্যদিকে এসব সমস্যা নিরসনের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণও কোন এক অজানা কারণে এসব সমস্যা নিরসনে নেননি কোন কার্যকরি পদক্ষেপ। তাই বর্তমান জেলা প্রশাসকের বেশ কিছু জনমূখী কর্মকাণ্ডে এবং যানজট নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের কারণে শহরবাসী এসব সমস্যা সমাধানে অনেকটাই আশাবাদী বলে আবারও সোচ্চার হয়েছেন বলে তাদের দাবি।