জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে এড.আব্দুল্লাহ আল-আমিন
হাসিনার পক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছিল তারা এখন না.গঞ্জের বিপ্লবী সাজে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

জুলাই আন্দোলনে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবীতে গতকাল বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নারায়ণগঞ্জ জেলা।
জুলাই আন্দোলনে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নারায়ণগঞ্জ জেলা।
গতকাল শনিবার (২৬এপ্রিল) বিকালে নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে নেতাকর্মীরা চাষাড়া থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দুই নম্বর রেল গেইট এলাকায় গিয়ে শেষ করেন।
এসময় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনসিপির যুগ্ম-সদস্য সচিব ও শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক এড.আব্দুল্লাহ আল-আমিন বলেন, ৩৬ দিনের রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, দুই হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং বিশ হাজার আহত ভাইয়ের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম এই বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টদের বিচার হবে। এই বাংলাদেশে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলব। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, জুলাই বিপ্লবের আট মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের বিচারে তেমন কোন দৃশ্যমান কার্যক্রম এখন পর্যন্ত আমরা দেখি নাই। আমরা দেখেছি এই নারায়ণগঞ্জেই নানাভাবে আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসরদের বিভিন্ন স্থানে বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের ধরিয়ে দিলে দুইদিন তিনদিন বা পাঁচ দিনের মধ্যে তারা জামিনে বের হয়ে আসছেন। আমরা দেখেছি, এই নারায়ণগঞ্জে যারা ওসমান পরিবারের হয়ে বক্তব্য দিয়েছে, ব্যবসায়িক রাজনীতি করছেন, এই নারায়ণগঞ্জে যারা ব্যবসা বাণিজ্য করে ওসমান পরিবারের আশ্রয়ে ছিলেন এবং জুলাই আন্দোলনের সময় যারা ফ্যাসিস্টদেরকে প্রলোভন এবং উস্কানি দিয়েছেন ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য, তারা এখন বিপ্লবের পরে অনেক বড় বিপ্লবী হয়ে গেছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তারা আবার ওসমান পরিবারকে পুনর্বাসিত করছেন। আমরা এই ধরনের নারায়ণগঞ্জ দেখতে চাই না। যারা বিগত ১০বছর ওসমান পরিবারের স্পন্সর হয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক মহল, বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল, বিভিন্ন সাংবাদিকতার মহল, সুশীল সমাজের নামে বিভিন্ন মহলে অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের ব্যপারে অন্য অবস্থান দেখতে চাই। সেই সাথে ফ্যাসিস্টদের ব্যাপারে সরাসরি প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে ক্লিয়ার করার আহ্বান জানাই। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের দোসররা গণহত্যা মামলার আসামীরা নিজ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, নিজ বাসায় ঘুমাচ্ছে। অথচ ছাত্র জনতার এই মুভমেন্টে যারা আহত তারা কাতরাচ্ছে। শহীদ পরিবারগুলো অসহায় জীবন যাপন করছে। এরকম বাংলাদেশ আমরা চাইনি। আমরা প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে চাই, আপনারা জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের এই সরকার।
সরকারকে অবশ্যই জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করতে হবে। যদি আপনারা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা পোষণ করেন। যদি আপনারা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র তাদেরকে স্পেস দেওয়ার চেষ্টা করেন। নারায়ণগঞ্জের ছাত্র-জনতা যে কোনো মূল্যে আপনাদেরকে প্রতিহত করবে ইনশাআল্লাহ। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি স্তরে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করতে হবে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। বিগত ভোট বিহীন গণতন্ত্র কায়েম করার কারণে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ডেভিহান্ট আসামীদের অ্যারেস্ট করা হয়েছিল। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে দেখছি তারা আবার বিভিন্ন তদবিরের মাধ্যমে বের হয়ে আবার আস্ফালন দেখাচ্ছে। এই রকম অবস্থা আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই যেকোন মূল্যে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ফ্যাসিস্ট বিরোধী শক্তি এখানে রাজ করবে। ফ্যাসিস্টদের নারায়ণগঞ্জে বিন্দুমাত্র অবস্থানও হবে না। তাদেরকে আমরা এখন বিপ্লবী রূপে আবার নতুন করে ভোট দিতে চাই না। আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষ সচেতন, আমার অন্ধ নয়, আমরা দেখেছি জুলাই আগস্ট মাসে কার কী অবদান। যারা জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন খুনি হাসিনাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন করে, ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বলেছিলেন, তারা এখন নারায়ণগঞ্জে বড় বড় বিপ্লবী সাজেন। তারা আবার নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী পূর্ণবাসনের চেষ্টা করছেন। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ড দেখতে চাই না।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী, যুগ্ম-মুখ্য সমন্বয়ক তুহিন মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু, নারায়ণগঞ্জ জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক নীরব রায়হান, সদস্য সচিব জাভেদ আলম।