
এখনও দাঁড়িয়ে আছে শহরের বিষফোড়া রাইফেল ক্লাব
# কলঙ্কের ইতিহাস নিয়ে বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে
বর্তমান অবস্থান থেকে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণাটি ছিল নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে একটি স্বস্তির সংবাদ। কারণ ফ্যাসিস্ট দোসর ওসমান পরিবারের ক্যাডারদের সেফজোন হিসেবে পরিচিত এই ক্লাবটি এখন নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে বিষফোড়া হিসেবে পরিচিত। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে নির্যাতিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকসহ স্থানীয় জনতা এর সেই ফ্যসিস্ট সরকারের সময় থেকেই এই রাইফেল ক্লাব সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরপর জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এবং সমর্থনকারী ছাত্র-জনতাও এই দাবিকে জোরালোভাবে সমর্থন করেন। যার একটি নমুনা দেখা গেছে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় এই রাইফেল ক্লাবে অগ্নি সংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরসহ বিভিন্নভাবে ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনা। তাই এখনও রাইফেল ক্লাব সরিয়ে না নেওয়ার কারণে হতাশ হয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। বিভিন্ন অজুহাতে এই ক্লাবটিকে এখনও সরিয়ে না নেওয়ার পিছনে কোন অজানা রহস্য কাজ করছে বলে সন্দেহ করছেন তারা। কেননা এরা আগে বিভিন্ন সময় এই রাইফেল ক্লাব শীঘ্রই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন থেকে ঘোষণা দেওয়া হলেও এখন সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সমালোচিত এই ক্লাবটি। যদিও ক্লাবটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে লিংক রোড প্রশস্তকরণের পরও শুধুমাত্র এই রাইফেল ক্লাবের কারণে তার সুফল ভোগ করতে পারছে না নারায়ণগঞ্জবাসী। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সম্প্রসারণের সুফল পাওয়ার জন্য এই ক্লাবটি দ্রুত অপসারণ অপরিহার্য বলে মনে করেন সচেতন মহল। এই প্রতিষ্ঠানটি সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন হলেও এবং এর সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক হলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় এই ক্লাবটিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছিল নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ও ক্যাডার পরিবার হিসেবে খ্যাত ওসমান পরিবাররের সদস্যরা। নারায়ণগঞ্জের গডফাদার ও ত্রাস শামীম ওসমান তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এখানে বসেই বিরোধী দলকে দমন করার বিভিন্ন কৌশল ও সিদ্ধান্ত নিতেন বলে জানা যায়। এছাড়াও কিলিং মিশনের গোপন মিটিংসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হতো বরে কথিত আছে। এমনকি এই রাইফেল ক্লাবকে টর্চার সেল হিসেবেও ব্যবহার করা হতো বলে অভিযোগ আছে।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ১৬ বছর আলোচনায় ও সমালোচনায় নানা কারনে ছিল নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব। ওসমান পরিবারের সদস্য এবং তাদের মনোনীত ক্যাডাররা এই ক্লাব থেকেই অলিখিতভাবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই সিন্ডিকেটের বাইরের কোন মানুষ এমনকি ক্লাব সদস্যরাও এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গ ছাড়া ভিতরে প্রবেশ করতে ভয় পেতো। বিশালাকৃতির স্টিলের গেট আর নিরাপত্তা প্রহরী দ্বারা বেষ্টিত ছিল এই ক্লাব। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে সাথে পতন হয়েছে এই রাইফেল ক্লাবের। পতন হয়েছে নারায়ণগঞ্জের একটি অলিখিত সম্রাজ্যের। অথচ এক সময় এই ক্লাবটিই ছিল নারায়ণগঞ্জের একটি ঐতিহ্য। কারণ এই রাইফেল ক্লাবের খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ইভেন্টে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক পদক অর্জন করে নারায়ণগঞ্জের সুনাম অনন্য উচ্চতায় নিয়েছিল। অথচ সেই রাইফেল ক্লাবের ভিতরটা এখন সিএনজি ও অটোরিকশার স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভিতরটা পরিণত হয়েছে ভুতুরে পরিবেশে।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের প্রশস্তকরণ কাজের পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে এই ক্লাবকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ এর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক। সে সময় যুগের চিন্তাকে তিনি বলেন, ‘এখান থেকে রাইফেল ক্লাব সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ চলছে। জায়গাটাতো সেনাবাহিনীর, তাই সড়ক বিভাগের একটি জায়গা আমরা সেনাবাহিনীকে দিচ্ছি। খুব শীঘ্রই রাইফেল ক্লাব এখান থেকে সরানো হবে, এখানে রাস্তা হবে। খুব শীঘ্রই নারায়ণগঞ্জবাসী এর ফলাফল দেখতে পাবে।’ স্থানীয়দের দাবি, রাইফেল ক্লাবটি এখান থেকে দ্রুত সরিয়ে নিলে একদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড প্রশস্তকরণের মাধ্যমে যেমন শহরের যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। তেমনি শহরবাসীর মনে রাইফেল ক্লাবের নামের সাথে যে কলঙ্কে লেগে আছে তা দূরীকরণে সহায়ক হবে।