শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান
গত ১৯ জুলাই চাষাড়া ও জালকুড়িতে শামীম ওসমান ও তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করার কয়েকটি (ভিডিও) গত বছরের (২৪ আগস্ট) সামাজিক যোগামাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে যা নিয়ে জেলাসহ দেশজুড়ে হৈ চৈ শুরু হয়। এদিকে এমন কয়েকটি (ভিডিও) সুপষ্ট প্রমানের ভিত্তিতে আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা, স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার ছেলে অয়ন ওসমানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে ৫০টির বেশি মামলা হয়। সরকার পতনের পর শামীম ওসমান তার ছেলে অয়ন ওসমানসহ তাদের সহযোগীরা বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
এ দিকে জুলাই আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে হত্যা মামলায় শামীম ওসমানের ছেলে অয়নসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গতকাল বুধবার (৩০ এপ্রিল) তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ট্রাইব্যুনালকে জানান, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তাতে এই ৮ জনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। যদিও ৮ জনের নাম জানায়নি প্রসিকিউটররা। তবে এই ৮ জনের মধ্যে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের নাম রয়েছে। এ দিকে আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর ঘটনায় আরাফাত ও কামরুল নামে আরও ২ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ৫০টির বেশি মামলা রয়েছে।
এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে ‘গণহত্যার’ বিষয়টিকে সামনে এনে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগর সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির কাছে এ অভিযোগ জমা দেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান। যাকে বিগত দিনে ক্ষমতায় থাকতে অনেকেই ‘সিংহ পুরুষ’ হিসেবে অবহিত করতেন। দুর্দান্ত প্রভাবশালী এ ব্যক্তি গত ১৬ বছর কোনো না কোনোভাবে ছিলেন আলোচনায়। ছিলেন সমালোচনায়ও। কখনও কথায়, কখনও কোনো ঘটনা ঘটিয়ে। এদিকে তার সাথে সাথে বিভিন্ন কুকর্মকাণ্ডে ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নকে ও বানিয়েছেন ভাগিদার। শামীম ওসমানের আদরের দুলাল তার একমাত্র পুত্র ইমতিনান ওসমান অয়ন ওসমানীয় রাজত্ব কায়েমে বিশাল এক ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। তারা অধিকাংশই পূর্বে থেকেই সন্ত্রাশী কার্যকলাপ মাদকের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু তাদের অপরাধের পরিমাপ অনুযায়ী তাদের ওসমানীয় রাজত্ব কায়েমের ক্ষমতা প্রদান করেছেন এই অয়ন ওসমান। এদিকে বাবা শামীম ওসমান ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আলোচনায় আসেন তোলারাম কলেজের ভিপি হওয়ার পর থেকে। তার তিনি আলোচনায় আসেন নারায়ণগঞ্জে তার হাতে পালিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ দ্বারা নানান কুকর্মকাণ্ড ঘটিয়ে। এ ছাড়া এই অয়ন ওসমান আওয়ামী লীগের কোনো পদ পদবীতে না থেকেও রাজনীতিতে অনেক প্রভাব ফেলতেন। বিশেষ করে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগকে তিনি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের পদে আসতে হলে তার অনুগত হতে হতো। তার আনুগত্যের বাইরে কেউই ছাত্রলীগের পদে আসতে পারতেন না। সেইসঙ্গে অয়ন ওসমানের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতারা অনেক সময় মূলদলের নেতাদেরও অপমান অপদস্থ করতেন। তাদের কারণে ত্যাগী নেতারাও মূল্যায়ন পেতেন না।
পাশাপাশি অয়ন ওসমানের অনুসারী এসকল ছাত্রলীগ নেতারা বিপুল পরিমাণ টাকার মালিকও বনেছেন। শূন্য থেকে দেশ-বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ছাত্র অবস্থায়ই অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল তাদের হাতে। সবশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় শামীম ওসমান ও তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের অস্ত্রের মহড়ায় তারা অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে তাদের কেউ এখন দেশের বাইরে রয়েছেন কিংবা দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। এদিকে গত ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক জনসমাহারে সেই আন্দোলনের তীব্রতা লক্ষ্য করা যায়। একই দিনে ছাত্রদের এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। যার পরপরই দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে পরে নগরী। আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে পরলে বিকালে শামীম ওসমানের নিদের্শে তার ছেলে অয়ন ওসমান তার পালিত ছাত্রলীগ নিয়ে সেদিন প্রকাশ্যে শহরে ছাত্র-জনতার উপরে হামলা-ভাঙচুর ও এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়েন যাকে ঘিরে আহত হন অনেকেই। কিন্তু গত (১৯ জুলাই) ছাত্র-জনতা আবারো নিজেদের ঘোষিত কর্মসূচি পালনে মাঠে নামলে সাবেক সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে অস্ত্র হাতে মাঠে নেমে পরেন। এবং প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার উপরে তাক করে গুলি ছুঁড়েন।
চাষাড়া থেকে শুরু করে ডিআইটি, ২ নাম্বার গেইট, জিমখানা, মন্ডলপাড়া এলাকা পর্যন্ত ইচ্ছে মতো গুলি ছুঁড়তে থাকেন সেই গুলির আঘাতে অনেকেই আহত হন। পরবর্তীতে চাষাড়া রাইফেল ক্লাব থেকে শুরু করে জালকুড়ি পর্যন্ত গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়ছে যান সেই কুখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান। সেদনি তার সাথে ছিলেন তার ছেলে অয়ন ওসমান। এদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও অয়ন ওসমানের পিএস যুবলীগ নেতা কাউসারের মাধ্যমে পুরো নারায়ণগঞ্জের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, তোলারাম কলেজ নিয়ন্ত্রণ, বিসিক, নিতাইগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জে ঝুট সন্ত্রাসী অন্যদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাফেলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতেন ইন্টারনেট সেক্টর। এমন আরো বেশ কয়েকজনের মাধ্যমে গ্রুপ তৈরি করেই বাবা শামীম ওসমানের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম পরিচালনা করতেন এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী ইমতিনান ওসমান অয়ন।