ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68a964dd94f47.jpg)
ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা
# তিনটি প্যানেল থাকায় আইনজীবিদের নির্বাচন জমে উঠেছে
প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবি সমিতিতে তিনটি প্যানেল থাকায় ভোটের মাঠে প্রচারনা জমে উঠেছে। এমনকি গতকাল শুক্রবার ও আজকে ছুটির দিনেও থেমে নেই আইনজীবি সমিতির নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা প্রার্থীরা। প্রত্যেক প্রার্থীই আইনজীবি ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে নির্বাচিত হলে আইনজীবিদের নিয়ে কি ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে তা নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তাছাড়া বিগত এক যুগেও এত উৎসব মুখর নির্বাচনি পরিবেশ দেখা যায় নাই আদালত পাড়ায়। এবারের নির্বাচনে তিনটি প্যানেল থেকে ৪৯ জন প্রার্থী থাকায় আদালত পাড়ায় নিবার্চনের আমেঝ ফিরে এসেছে।
এদিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের এড. হুমায়ুন-আনোয়ার পরিষদের প্রার্থীরা ভোটের ধারে ধারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। অন্্যদিকে তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে পিছিয়ে নেই জামায়াত সমর্থিত সবুজ প্যানেলে এড. হাফিজ-মাইন উদ্দিন পরিষদের প্রার্থীরা। তারাও ভোটারদের মনজয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। এছাড়া বিএনপির আরেকটি অংশ এড. রেজাউল করীম খান রেজা-দুলাল মোর্শেদ গালিব প্যানেলের প্রার্থীরাও ভোটারদের কাছে ছুটছেন। আদালত পাড়ায় এখন ভোটারদেরও গুরুত্ব বেরেছে। তাছাড়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটদানের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় ভোটাররাও খুশি। তিনটি প্যানেলের প্রচারণায় সারাক্ষণ মুখর থাকছে নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়া। দলবদ্ধভাবে মিছিল করেও ভোট চাইছেন তারা।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আইনজীবী সমিতিতে ফিরেছে ভোট। সেই সাথে সকল আইনজীবীদের মধ্যেই বিরাজ করছে উৎসবমুখর আমেঝ। প্রায় সকল আইনজীবীরাই নির্বাচনকে স্বাগত জানাচ্ছেন। সকলেরই প্রত্যাশা যেন নির্বাচন হয় এবং সকলেই যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন। আগামী ২৮ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনটি প্যানেল অংশ নিচ্ছে ৪৯ জন প্রার্থী। যার মধ্যে বিএনপি পন্থী আইনজীভীদের দুইটি প্যানেল এবং জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের একটি প্যানেল। আর এই তিন প্যানেলের লড়াইকে কেন্দ্র করে জমজমাট হয়ে উঠছে আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। আইনজীবিরা জানান, আগে যখন নির্বাচন হতো তখন আদালপাড়ায় একটি উৎসব হতো। সকলেই মিলেই অনেক আনন্দ করতাম। কিন্তু বিগত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তা হােিয় গেছে। তবে এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আইনজীবী সমিতির হারানো দিনগুলো আবার ফিরে আসছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে বিএনপিপন্থী সিনিয়র আইনজীবীদের সদৃইচ্ছার কারণে।
অপরদিকে প্রায় ১৬ বছর নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরা স্বস্তিতে থাকতে পারেননি। তাদেরকেও নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়ন অপমান করে অপদস্থ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াত সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আইনজীবীরাও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। আইনজীবীরা নিরাপদে ভোট দিতে পারেননি। তাদের নির্বাচনের সময় বহিরাগতরা আদালতপাড়ায় এসে শোডাউন দিয়েছেন। আইনজীবীদেরকে হেনেস্তা করেছেন। তাছাড়া ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের আমলে নির্যাতিত অত্যচার সহ্য করা মজলুম দল জামায়াত বিএনপির আইনজীবিরা এখন প্রকাশ্যে নির্বাচন করছেন। যা বিগত সময়ে তাদেরকে করতে দেয়া হয় নাই।
কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরাও আত্মগোপনে চলে যান। তাদের এই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে আসেন বিএনপির আইনজীবীরা। সেই সাথে বিএনপির অন্যান্য আইনজীবীরাও প্রভাব আধিপত্য ফিরে পান। তারই ধারাবাহিকতায় এবার উৎসব মুখর আমেজের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে থেকেই আলাদা আলাদা প্যানেল ঘোষণা হওয়ায় আইনজীবি ভোটারদেরও গুরুত্ব বেরেছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. এইচ এম আনোয়্রা প্রধান বলেন, আমি আইনজীবিদের সাথে দীর্ঘপথ একসাথে থেকেছি। আমি যখন জেল জুলুম নির্যাতন রিমান্ডে থেকে নানা অত্যাচার সহ্য করেছি তখন আইনজীবিরাই আমার পাশে ছিল। এই আইনজীবিরা আমাকে সহ আমাদের পুর্ োপ্যানেলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সভাপতি প্রার্থী এড. সরকার হুমায়ুন কবির বলেন, দীর্ঘ দিন পর উৎসব্ মুখর পরিবেশে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবি সমিতিতে নিব্র্চান হতে যাচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে এত উৎসব মুখর ভাবে নির্বাচন হয় নাই। কেননা তারা তখন একক ভাবে প্যানেল দিয়ে জোর করে ব্যালট বাক্স বরে পাশ হয়ে যেতেন। কিন্তু এবারের নির্বাচন অনেক ভিন্ন রকম হতে যাচ্ছে। এবার আইনজীবি পরিষদে স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আর এই নির্বাচনে আমরা আইনজীবিদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়ে তাদের আস্থা অর্জন করছি। তাই তারা আমাদের প্যানেলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে বিশ্বাসি।
জামায়াত সমর্থিত সবুজ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. মঈন উদ্দীন মিয়া বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোটারদের কাছ থেকে অভিযোগ পাচ্ছি তাদেরকে টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে ভোট না দেওয়ার জন্য। কিন্তু আইনজীবি সমিতি নির্বাচনে হুমকি ধমকি দিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারবে না। বিগত আওয়ামী লীগের পতন মানুষ দেখেছে। একটি প্যানেল একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে জানানোর পরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আমরা আইনজীবিদের থেকে ভালো সারা পাচ্ছি, তারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আশ্বাস দিচ্ছে। আশা করি আমাদের প্যানেল জয়ী হবে।