শেষ মুহূর্তে মাঠ ছেড়েছে বিদ্রোহীরা শক্ত অবস্থানে জামায়েত-বিএনপি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68ac3ce7ccc34.jpg)
শেষ মুহূর্তে মাঠ ছেড়েছে বিদ্রোহীরা শক্ত অবস্থানে জামায়েত-বিএনপি
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির (২০২৫-২০২৬) নির্বাচনের ৪ দিন বাকিকে কেন্দ্র করে শেষ মূহুর্তে প্রচার প্রচারণায় জমে উঠেছে আদালত প্রাঙ্গন। ইতিমধ্যে বিএনপির মূল প্যানেলের সাথে বিদ্রোহ করা রেজা-গালিব প্যানেলের সহ-সভাপতি ও আপ্যায়ন সম্পাদক পদপ্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাড়াঁনোর মধ্য দিয়ে প্যানেলের বাকি ১২ জন প্রার্থীর রষাতলে গেছেন। শেষ মুহুর্ত্বে প্রচার-প্রচারণা বিমুখ হয়ে মাঠ ছেড়েছে প্যানেলটির বাকি সর্বশিষ্ট থাকা প্রার্থীরা। যাকে ঘিরে বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মনোনীত হুমায়ূন-আনোয়ার প্যানেল ও জামায়েত এর মনোনীত হাফিজ-মহিউদ্দিন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদিকে বর্তমানে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন জামায়েত-বিএনপির প্যানেল।
এদিকে গতকাল ২৪ আগষ্ট নির্বাচনের শেষ মুহুর্ত্বের প্রচারণায় মাঠে এককভাবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতপাড়ায় ছিলেন তা ছাড়া জামায়েতপন্থী আইনজীবীরা আজকে প্যানেল পরিচিতি পোগ্রামকে পাদান্ন দিয়ে তারা সেই আয়োজন পরিচালনায় ব্যস্ত থাকলে ও নিজেদের প্রচারনা অবহৃত রেখেছিলেন চেম্বার চেম্বারে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবি সমিতিতে তিনটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ভোটারদের মাঝে উদ্বেগ উদ্বিপনা লক্ষ্য করা গেলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকঢোল পিঠিয়ে প্রচারবিমুখ হয়ে পড়া বিএনপির বিদ্রোহী রেজা-গালিব প্যানেল আস্থা হারিয়েছে ভোটারদের কাছ থেকে। তা ছাড়া এবারের নির্বাচনে উৎসব মুখর আমেজের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন মাইলফলক হয়ে থাকবে। এবারের নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির (২০২৫-২০২৬) সালের নির্বাচনে ১৭টি পদে লড়বেন ৩ প্যানেলের ৪৮ জন ও স্বতন্ত্র ১ জনসহ মোট ৪৯ জন প্রার্থী। এদিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের এড. হুমায়ুন-এড. আনোয়ার প্রধান পরিষদের প্রার্থীরা ভোটের ধারে ধারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে পিছিয়ে নেই জামায়াত সমর্থিত সবুজ প্যানেলে এড. হাফিজ- এড. মাইন উদ্দিন পরিষদের প্রার্থীরা। তারাও ভোটারদের মনজয়ে করতে চেষ্টা করছে। এছাড়া বিএনপির আরেকটি অংশ এড. রেজাউল করীম খান রেজা- এড. গোলাম মোর্শেদ গালিব প্যানেলের প্রার্থীরাও ভোটারদের কাছে ছুটলে ও বর্তমানে নির্বাচনের শেষ মুহুর্ত্বে এসে কোনঠাসা হয়ে পরেছেন। তা ছাড়া এবারের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটদানের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় ভোটাররাও খুশি। বর্তমানে শেষ মুহুর্ত্বে ও জামায়েত-বিএনপির প্যানেলের প্রচারণায় সারাক্ষণ মুখর থাকছে নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়া। দলবদ্ধভাবে মিছিল করেও ভোট চাইছেন তারা।
সূত্র বলছে, দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জৌলুস হারিয়ে গিয়েছিল। আদালত পাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরা স্বস্তিতে থাকতে পারেননি। বিশেষ করে ১৮ সালের নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্যানেল এককভাবে আইনজীবী সমিতির আধিপত্য বিস্তার করেন। সেই সময় নির্বাচনের নামে চলে ছিল খালি তামাশা। নামমাত্র নির্বাচন দিলো জোরপূর্বক ভাবে তারা ফলাফল ছিনিয়ে নিয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। কারণ তখন তৎকালীন সংসদ শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরায় আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছিল। ফলে তারা একক প্রভাব বিস্তার করে আইনজীবী সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। তাদেরকেও নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়ন অপমান করে অপদস্থ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াত সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আইনজীবীরাও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। আইনজীবীরা নিরাপদে ভোট দিতে পারেননি। তাদের নির্বাচনের সময় বহিরাগতরা আদালতপাড়ায় এসে শোডাউন দিয়েছেন। আইনজীবীদেরকে হেনেস্তা করেছেন। তাছাড়া ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের আমলে নির্যাতিত অত্যচার সহ্য করা মজলুম দল জামায়াত বিএনপির আইনজীবিরা এখন প্রকাশ্যে নির্বাচন করছেন। সেই সময় আইনজীবী সমিতির প্রতিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিতা আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় সেই প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের উপরও তারা চড়া হয় এবং তাদেরকে মারধরও করা হয়েছিল। সেই সময় নাজাহালে শিকার হয়েছিল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও এড. আনোয়ার প্রধানসহ বিএনপিপন্থী বেশ কিছু আইনজীবীরা। কারণ তারা বরাবরই আইনজীবী সমিতির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং প্রতিবাদ করেছিলেন। ফলে শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা তাদেরকে টার্গেট করেছিল। সেই সময় নির্বাচনে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে হুমকি ও ছেলেকে জিম্মি করা হয়েছিল এবং আনোয়ার প্রধানকেউ হুমকি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। এতকিছু করার পরও কিন্তু তাদের কণ্ঠকে রোধ করতে পারেনি।
এদিকে ২০২৪ সালের (৫ আগষ্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরাও আত্মগোপনে চলে যান। তাদের এই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে আসেন বিএনপির আইনজীবীরা। সেই সাথে বিএনপির অন্যান্য আইনজীবীরাও প্রভাব আধিপত্য ফিরে পান। সেই সাথে হুমায়ূন ও আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে গত ১ বছর শক্ত অবস্থানে থেকে আইনজীবীদের সকল চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ করেছেন এবং বৈষম্য দূর করতে কাজ করায় আদালতপাড়া জুড়ে আইনজীবীদের আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচনায় এসেছেন হুমায়ূন-আনোয়ার প্যানেল। তারই ধারাবাহিকতায় হুমায়ূন ও আনোয়ারের মারফতে এবার উৎসব মুখর আমেজের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সহ অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে থেকেই আলাদা আলাদা প্যানেল ঘোষণা হওয়ায় এবার ব্যাপক উদ্দিপনা দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তা ছাড়া এবারের নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পাশে সরাসরি প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন।
বিএনপিপন্থী এই প্যাণেলকে সমর্থন করছেন, নারায়ণগঞ্জ-১ আসন রূপগঞ্জ থেকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও কাজী মনিরুজ্জামান মনির। নারায়ণগঞ্জ-২ আসন আড়াইহাজার থেকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক দুইবারের সাংসদ সদস্য আতাউ রহমান আঙ্গুর, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন সোনারগাঁও থেকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাবেকমন্ত্রী রেজাউল করিম। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে সাবেক সাংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ¦ শাহ আলম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন (সদর-বন্দর) আসন থেকে বিএনপির এই প্যানেলকে সমর্থন করছেন, সাবেক সাংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এরা বর্তমানে বিএনপির প্যানেলকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। তা ছাড়া গতকাল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও বিএনপির নিবার্হী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান আইনজীবীদের একটি পোগ্রামে প্যানেল পরিচিতির মাধ্যমে প্রকাশ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মনোনীত প্যানেলকে সমর্থন করেন। তা ছাড়া মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রকাশ্যে আদালত প্রাঙ্গনে থেকে মিছিল-মিটিংয়ে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করে সমর্থন দিয়ে হুমায়ূন-আনোয়ার প্যানেলকে চাঙ্গা রেখেছেন।
তা ছাড়া বিএনপির বাকি নেতাকর্মীরা দূর থেকে বিএনপির প্যানেলের প্রচারণায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তা ছাড়া জামায়েত ইসলামীর সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে হাফিজ মোল্লাহ ও মহিউদ্দিনের পক্ষে নানাভাবে ভোট চাইছেন। যাকে ঘিরে বর্তমানে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বড় দুই দল জামায়েত-বিএনপি বর্তমানে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে গর্জে উঠতে যাচ্ছে। তা ছাড়া শেষ মুহুর্ত্বে জামায়েত-বিএনপির মাঠ গর্জনে আগামী ২৮ আগষ্ট উৎসবমুখর পরিবেশে আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।