Logo
Logo
×

আদালতপাড়া

৪৭ প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জনকে জয়ের মালা পড়াবেন ১১৭৩ জন ভোটার

বড় ধামাকা নিয়ে ফিরলো না.গঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচন

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

বড় ধামাকা নিয়ে ফিরলো না.গঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচন

বড় ধামাকা নিয়ে ফিরলো না.গঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচন

Swapno

আবারো ফিরে এসেছে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের হারানো জৌলুস। ফ্যাসিস্ট  শেখ হাসিনা সরকার থাকাকালীন গত একদশকের সময় ধরে আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কুক্ষিগত করার প্রক্রিয়া বিদ্যমান ছিল।  জুলাই গণঅভুত্থানের পর আপদকালীন সময়ে এডহক কমিটি দিয়ে এতোদিন চললেও আজ ২৮ আগস্ট হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ২০২৫-২০২৬ সনের নেতা চূড়ান্তকরণ। নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এবারের মতো প্রাণচাঞ্চল্য, উৎসবমুখর আর প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি আইনজীবীদের একটি বড় অংশ অতীতে প্রত্যক্ষ করেনি বলে মত সিনিয়র আইনজীবীদের। এই নির্বাচনে নজর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর। সামনে জাতীয় নির্বাচন। আসন্ন নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রশাসনের জন্য ‘টেস্ট কেইস’ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মাওলানা আবদুল জব্বার। তবে পিছিয়ে নেই বিএনপি নেতারাও। নারায়ণগঞ্জে সকল স্তরের হেভীওয়েট বিএনপি নেতারা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সজাগ চোখ রেখেন।


এবারের নির্বাচনে তিনটি প্যানেলে সর্বমোট ৪৭ জন প্রার্থী ১৭টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ১১৭৩  জন ভোটার। আজ (২৮ আগস্ট) ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আইনজীবী সমিতির ভবনে চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কাজ করছে ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন এবং ৩ সদস্যের আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া। অন্যরা হলেন- এডভোকেট বোরহানউদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, এডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক, এডভোকেট সুমন মিয়া ও এডভোকেট মতিউর রহমান মতিন। ৩ শতদের আপিল বোর্ডের প্রধান হলেন এডভোকেট নবী হোসেন। বাকি দুইজন হলেন এডভোকেট আজিজুল হক হান্টু ও অ্যাডভোকেট মনজুরুল হক খান।


জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত এড. সরকার হুমায়ূন কবীর ও এড. এইচ. এম. আনোয়ার প্রধানের পূর্ণ প্যানেল, জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল মনোনীত এড. হাফিজুর রহমান ও এড. মো. মাইনউদ্দিন মিয়ার পূর্ণ প্যানেল এবং আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী এড. রেজাউল করিম খান রেজা ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. শেখ মো. গোলাম মোর্শেদ গালিবের আংশিক প্যানেলসহ ৪৭ প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন।


সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট এ. হাফিজ মোল্লা, অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবীর, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম খান রেজা; সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট কাজী আ. গাফ্ফার, অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান খোকা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দেওয়ান; সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. সাদ্দাম হোসেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন; সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. মাইনউদ্দিন মিয়া, অ্যাডভোকেট শেখ মো. গোলাম মোর্শেদ গালিব, অ্যাডভোকেট এইচ. এম. আনোয়ার প্রধান; যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট এ.কে.এম. ওমর ফারুক নয়ন, অ্যাডভোকেট আল-আমিন, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মোমেন; কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহাজাদা দেওয়ান, অ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসেন, অ্যাডভোকেট ইস্রাফিল; আপ্যায়ণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন রেজা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন; লাইব্রেরী সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. আলী আজ্জম, অ্যাডভোকেট মুহা. গোলাম সারোয়ার, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান; ক্রীড়া সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. শহীদ সারোয়ার, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. ইমরান হোসেন; সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট নার্গিস পারভীন, অ্যাডভোকেট মো. সারোয়ার জাহান, অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান; সমাজসেবা সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট শাহনাজ পারভীন হীরা, অ্যাডভোকেট রাজিব মন্ডল, অ্যাডভোকেট মো. নূর-ই-আলম; আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মণি গাঙ্গুলী, অ্যাডভোকেট মামুন মাহমুদ মিয়া, অ্যাডভোকেট মো. মাসুদুর রহমান।


এছাড়া ৫টি কার্যকরী সদস্য পদে লড়বেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আনওয়ারুল আজিম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মো. গোলাম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান, অ্যাডভোকেট ফাতেমা আক্তার সুইটি, অ্যাডভোকেট আফরোজা জাহান, অ্যাডভোকেট মো. তেহসিন হাসান, অ্যাডভোকেট দেওয়ান আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট রাকিবুল হাসান, অ্যাডভোকেট আবু রায়হান, অ্যাডভোকেট তাওফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুর রব নির্বাচনে লড়ছেন।


সূত্র জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে কোন প্যানেলই কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। নির্বাচনে ত্রিমুখী প্রচারণায় গোটা আগস্ট মাস আদালতপাড়ায় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোটের পরিবার নির্বিঘ্ন রাখতে সচেষ্ট রয়েছে প্রশাসনও। আজ ভোটগ্রহণের পর জানা যাবে কারা হাসবে বিজয়ের হাসি। ইতিমধ্যে ভোট সুষ্ঠু করতে সবধরণের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন।


প্রসঙ্গত, বিগত সময়ে আওয়ামীপন্থি আইনজীবিরা আদালতপাড়ার আইনজীবি সমিতির নির্বাচনকে কলুষিত করেছে এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার কুলষিত নির্বাচন থেকে বের হয়ে স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন। তাছাড়া অন্যান্য সময়ে আইনজীবি সমিতি নির্বাচনে দুটি প্যানেল থাকায় ভোটারদের হুমকি দিয়ে ভোট আদায় করার অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে।  নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আইনজীবী সমিতিতে ফিরেছে ভোটের আমেজ। সেই সাথে সকল আইনজীবীদের মধ্যেই বিরাজ করছে উৎসবমুখর আমেজ। প্রায় সকল আইনজীবীরাই নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছেন।


আইনজীবী ভোটাররা জানান, এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আইনজীবী সমিতির হারানো দিনগুলো আবার ফিরে আসছে। যা আদালপাড়ার আইনজীবীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ফিরে এসেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে  সিনিয়র আইনজীবীদের সদিচ্ছার কারণে। বিগত প্রায় ১৬ বছরে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরাও স্বস্তিতে থাকতে পারেননি। তাদেরকেও নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়ন অপমান অপদস্থ হতে হয়েছে আইওয়ামী পন্থি আইনজীবিদের হাতে। পাশাপাশি জামায়াত সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আইনজীবীরাও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত থেকেছেন তারা। গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরাও আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘদিন পর রাহুমুক্ত হয় আইনজীবী সমিতি। এবারই দীর্ঘদিন পরে এমন ঘটনা করে নির্বাচন।

 ভোটাররা নতুন নেতৃত্ব কার হতে তুলে দেবেন সেটি ভোট গণনা শেষে বোঝা যাবে। বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, রর নির্বাচনে আইনজীবী সমিতির মোট ভোটার ১১৭৩টি। যার মধ্যে আইনজীবী ফোরামের সদস্য ৪০৯জন, জামায়াত ইসলামীর ১৭৪ জন এবং আওয়ামীলীগ সমর্থিত আছেন ৩৩৯ জন। যেখানে বাকিরা সাধারণ ভোটার। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পন্থী আইনজীবীরা অংশগ্রহণ করেনি এবং আওয়ামীলীগ পন্থী আইনজীবী ভোটারদেরও ভোট প্রদানে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায়নি। কিন্তু এসব ভোটারদের সাথে বিভিন্ন প্যানেল থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। এই ভোট কীভাবে বিভক্ত হয় ফলাফল হাতে পেলে সেটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।  


নির্বাচনে ভালো ফলাফলের ব্যাপারে আশাবাদী তিন প্যানেলের প্রার্থীরাই।


জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সভাপতি প্রার্থী এড. সরকার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর উৎসব্ মুখর পরিবেশে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবি সমিতিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে এত উৎসব মুখরভাবে নির্বাচন হয় নাই। কেননা তারা তখন এককভাবে প্যানেল দিয়ে জোর করে ব্যালট বাক্স ভরে পাশ হয়ে যেতেন। কিন্তু এবারের নির্বাচন অনেক ভিন্ন রকম হতে যাচ্ছে। এবার আইনজীবি পরিষদে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আর এই নির্বাচনে আমরা আইনজীবিদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়ে তাদের আস্থা অর্জন করছি। তাই তারা আমাদের প্যানেলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’


বিএনপির বিদ্রোহী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এড.রেজাউল করীম খান রেজা বলেন, ‘আমাদের প্যানেলে যেই কয়জন রয়েছে তাদেরকে নিয়েই নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকবো। আইনজীবীদের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া  পেয়েছি। আমরা কোন রক্তচক্ষুকে ভয় করিনা। নির্বাচনেরে শুরু থেকে সকল স্তরের মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন আমরা পেয়েছি। আশা করি আমাদের প্যানেলের সকলেই ভালো ফলাফল করবে। নির্বাচনী যেই আমেজ তৈরি হয়েছে এটি আইনজীবী সমিতির সকলের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল।’


জামায়াত সমর্থিত সবুজ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. মঈন উদ্দীন মিয়া বলেন, ‘আমরা আইনজীবিদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি, তারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আশ্বাস দিয়েছে। আশা করি আমাদের প্যানেল জয়ী হবে।’


জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. এইচ এম আনোয়্রা প্রধান বলেন, ‘আমি আইনজীবিদের সাথে দীর্ঘপথ একসাথে থেকেছি। আমি যখন জেল জুলুম নির্যাতন রিমান্ডে থেকে নানা অত্যাচার সহ্য করেছি তখন আইনজীবীরাই আমার পাশে ছিল। এই আইনজীবীরা আমাকে সহ আমাদের পুরো প্যানেলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন