Logo
Logo
×

স্বাক্ষাৎকার

যুগের চিন্তার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে

শহর-বন্দরে উন্নয়ন করেছে বিএনপি : সাবেক এমপি এড. কালাম

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

শহর-বন্দরে উন্নয়ন করেছে বিএনপি : সাবেক এমপি এড. কালাম

তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আবুল কালাম

Swapno


# ’৭৫ এর আগে আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েমে ব্যস্ত ছিল। ’৯৬ আভ্যন্তরীন কোন্দলে হয়নি কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন। বাকি সময় ছিল জাতীয়পার্টি। বিএনপি উন্নয়নের তালিকায় আছে বুক ফুলিয়ে বলার মতো অনেক কিছু।

 
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির খুবই পরিচিত মুখ এবং তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আবুল কালাম বলেছেন, বিএনপি সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর এলাকায় (নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন) বিএনপির সময় কোন উন্নয়ন হয়নি বলে আওয়ামী লীগ নেতারা যে প্রচারণা চালিয়েছেন তা সর্বৈব মিথ্যে। বরঞ্চ আওয়ামী লীগের সময়ই তারা কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। ১৯৭১-৭৫ মেয়াদে বাকশাল কায়েমে এবং ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আভ্যন্তরীণ কোন্দলেই সময় কেটেছে তাদের। এর বাইরেতো তারা এখানে কোন এমপিই দিতে পারেনি। তাই এখানকার সকল উন্নয়ন আওয়ামী লীগ করেছে বলে তাদের নেতারা যে প্রচারণা চালিয়েছে তা একেবারেই মিথ্যে। গতকাল রবিবার দৈনিক যুগের চিন্তাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন ৯০ দশকে বিএনপির মাঠ কাঁপানো জনপ্রিয় নেতা এবং বিএনপি থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এডভোকেট আবুল কালাম। এ সময় তার রাজনীতিতে আসা, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জনগণের জন্য বিএনপির দৃশ্যমান উন্নয়নের চিত্র, বিএনপির তখনকার এবং এখনকার রাজনীতির মিল অমিল এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন প্রপাগাণ্ডা নিয়ে কথা বলেন।
 
সাবেক এই এমপি বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। সে সময় তারা দেশের কল্যাণ করবে দূরের কথা, দেশের বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে দেশের জনগণকেই বঞ্চিত করেছে তাদের অধিকারকে হরণ করেছে। এরপর এরশাদ সরকারের ৯ বছরের শাসন। ’৯১ এর নির্বাচনেও আসতে পারেনি ক্ষমতায়। তাই এই দীর্ঘ সময় তাদের কোন উন্নয়নের সুযোগই ঘটেনি। এরপর ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও এই সময়ে বন্দর বা নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকায় তাদের দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন তারা দেখাতে পারবে না। তখনকার এই আসনে আওয়ামী লীগের যে এমপি ছিলেন (এসএম আকরাম) যদিও ওনি আমার প্রতিপক্ষ ছিলেন, কিন্তু আমার জানামতে ওনি অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু ওনার সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওনার দলীয় নেতাদের আভ্যন্তরীণ বিরোধিতা থাকার কারণে ওনি কোন কাজ করতে পারেননি। এরপর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে পরিণত হওয়ার পর জাপানের (জাইকা) অর্থায়নে কিছু উন্নয়ন হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ সরকারের কোন হাত নেই। ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে আমাদের দলীয় প্রধান তৎকালীণ প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কল্যাণে এই অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমি সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার অবদানে কি করতে পেরেছি বা কি করতে পারিনি তা জনগণই খুব ভালো জানে।
 
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন শীতলক্ষ্যা নদীর কারণে দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় আমার পিতা হাজী জালাল উদ্দিন জনপ্রতিনিধি থাকাবস্থায় শহর এলাকায় জিয়া হলের প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০ শয্যা হাসপাতালের (বর্তমানে ৫০০ শয্যা হাসপাতাল) ভিত্তিপ্রস্থর করেন। তারপর বাস টার্মিনাল, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, গণবিদ্যা নিকেতন স্কুল, বন্দরের হাজী সিরাজউদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল, বিভিন্ন মাদরাসাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডগুলো বিএনপি সরকারের আমলেই হয়েছে। বিএনপি সরকারের প্রচেষ্টায় আমরা ’৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বন্দরের মাটিতে হাসপাতাল (বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) কদম রসুল সরকারী কলেজ, কদম রসুল পৌরসভা আমাদের বিএনপি সরকারের আমলেই নির্মাণ করা। বন্দরে গ্যাস সাপ্লাই এবং মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কটিও আমাদের সরকারের আমলেই পাকা করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হয়। আমরা যদি ২০০৬ সালের পর আবারও ক্ষমতায় আসতে পারতাম তাহলে এতদিনে অবশ্যই বন্দরবাসীর আকাঙ্খিত সেই শীতলক্ষ্যা সেতুও তৈরি হয়ে যেতো। আমরা ধারাবাহিকভাবে সেই প্রক্রিয়াও শুরু করেছিলাম। কাইকারটেক এলাকা থেকে সাবদি বাজার রাস্তাটিও বিএনপির সময় করা। যা এখন বন্দরের পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে তিনটি বড় বড় ব্রিজও নির্মাণ করা হয়েছে আমাদের সময়। আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আমাদের এই এলাকায় যেসব উন্নয়ন হয়েছে তা লুকানো কোন কিছু নয়, দৃশ্যমান এবং এর সুফল ভোগ করছে এই এলাকার জনগণ। আমি এর কৃতিত্ব নিতে চাই না, এর কৃতিত্ব আমার দলের, আমার নেত্রীর।
 
প্রবীণ এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের মহান রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শে নতুন রাজনীতি শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে আসার পূর্বে এদেশ থেকে গণতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে সকল প্রকার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছিল। তখন থেকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে দেশের মাটিতে যখন একটি নতুন ধারার সৃষ্টি হয়, তখন জনগণের মধ্যে একটি জোয়ারের সৃষ্টি হয়ে যায়। জিয়াউর রহমানের ঘোষিত সেই দলীয় কমিটির একজন অন্যতম সদস্য ছিলেন আমার পিতা (প্রয়াত) হাজী জালাল উদ্দিন (জালাল হাজী)। তিনি ছিলেন সেই সরকারের একজন এমপি। তাই পারিবারিকভাবেই আমরা রাজনীতির সাথে জড়িত।
 
বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের ৯ বছরের যে শাসনামল ছিল, তা পতনের গণআন্দোলনের প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ওনার নেতৃত্ব, জনসমর্থন ও জনপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করেই সেই আন্দোলনের ফলাফল এসেছিল। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি জনগণের সেই আস্থা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে আমরা আরও একটি স্বৈরাচার সরকারের সময় পার করেছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের সময় আমাদের (বিএনপির) উপর যে জুলুম নির্যাতন হয়েছে, সাধারণ জনগণও তার ভূক্তভোগী হয়েছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী ও জনসাধারণ বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্য, এমনকি ঘর-বাড়ি পরিত্যাগ করে নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমাদের যে যাত্র শুরু করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যার ধারাবাহিকতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মধ্যে বিকশিত করেছিলেন। আজকে তাদের যোগ্য সন্তান তারেক রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে এদেশের জনগণ গণতন্ত্র ফেরৎ পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। আমার বিশ্বাস আগামী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এবং এই ১৬ বছরের সকল অনিয়ম নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন