শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

 ট্রেন বন্ধ তবুও যানজটে নাকাল

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০২৩  



# ট্রেন চলাচল ছিল অজুহাত আসলে গাফিলতি প্রশাসনের : রফিউর রাব্বি


# হকার-অবৈধ স্ট্যান্ড- অবৈধ পরিবহনই মূল কারণ : এড. মাসুম


# ধূলাবালির কারণে যানজট বেড়েছে : টিআই করিম


# ইজিবাইকের সংখ্যা বেশে তাই যানজট : এডি. এসপি (ট্রাফিক)


 
নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজটের একাধিক কারণ থাকলেও অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হতো শহরের মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচলকে। ট্রাফিক বিভাগের মতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে দিনে ১৬ বার যাওয়া এবং ১৬বার আসা, সব মিলিয়ে ৩২ বার প্রতিটি লেভেল ক্রসিং এলাকায় পার করতে হয়।

 

 

তাই শহরের ১নং রেলগেট, ২নং রেলগেট এবং চাষাঢ়া রেলগেট এলাকায় ৩২ বার করে সিগন্যালে আটকাতে হয়। এছাড়াও নন্দীপাড়া, গলাচিপা এবং বালুর মাঠ রেল লেভেল ক্রসিংয়েও সিগন্যালে আটকাতে হয়। সবমিলিয়ে এই ট্রেনের সিগন্যালকে নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো।

 

 

তবে প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় যাবত ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেন যোগাযোগ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ আছে। তারপরও কেন যানজটের কমছে না বিষয়টি এখন নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে আলোচনা চলছে। তাই অনেকেই মনে করছেন ট্রেন চলাচলকে যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল প্রশাসনের একটি অজুহাত মাত্র।
 


এই বিষয়ে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহবায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, আমরা যেটা মনে করতাম যে, নারায়ণগঞ্জের যানজটের অন্যতম কারণ ট্রেন চলাচল, এখন প্রমাণিত হয়েছে সেটা সঠিক নয়। যানজট মূলত পরিবহন সিন্ডিকেটের অরাজকতার কারণে।

 

 

বিআরটিএ যে রাস্তায় অনুমোদনহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো চলাচল করতে দিচ্ছে, সেটাও একটি কারণ। জেলা প্রশাসনও এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এই সব অরাজকতাই মূলত আমাদের যানজটের অন্যতম কারণ। তাছাড়া ফুটপাতসহ রাস্তার অর্ধেক হকাররা দখল করে থাকে।

 

 

কিন্তু এগুলো দেখভালের কেউ নাই, এগুলো আমাদের যানজটের কারণ। এর বাইরেও আমাদের এখানে যে পরিমান ট্রাফিক পুলিশ দরকার তার চেয়ে সংখ্যায় অনেক কম আছে। তাই খুব জনবল নিয়ে তাদের কাজ করতে হয়। সব কিছু মিলিয়ে প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এখানকার যানজট হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
 


নাগরিক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট সৃষ্টি হওয়ার কারণ অনেক। তবে অন্যতম একটি কারণ হলো হকার। এখানে মৌমিতা, বাধনসহ অনুমোদনবিহীন গাড়িগুলোর উল্টাপাল্টা চলাচল যানজটের আরেকটি অন্যতম কারণ।

 

 

তবে যাটজটের সবচেয়ে বড় কারণ হলো জেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা। আমরা এতো করে বলার পরও সে কোন কাজ করে না। আমি মনে করি জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিলেই এই যানজট অর্ধেক কমে যাবে। এছাড়াও যত্রতত্র গড়ে উঠা অবৈধ স্ট্যন্ডের কারণেও যানজট সৃষ্টি হয়।

 

 

শহরের বিভিন্ন জায়গায় এসব অবৈধ স্ট্যান্ড রাস্তার বড় একটি অংশ দখল করে রাখে। এখানে অদক্ষ ট্রাফিক পুলিশের অপরিপক্কতাও যানজটের কারণ। আমাদের দাবি এসব বিভাগগুলো একটু সক্রিয় হবে। এগুলে সক্রিয় হলেই শহরের যানজট কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
 


 
চাষাঢ়া পুলিশ বক্সের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) করিম যুগের চিন্তাকে বলেন, এখন আগের তুলনায় যানজট অনেকটা কম আছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের লোকবল কম থাকায় এবং শহরের রাস্তাঘাটে প্রচুর ধুলাবালি থাকার কারণে আমাদের ট্রাফিক পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমাদের কাজে কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

এই রাস্তার উপর কিছু সময় থাকলে নাকের মধ্যে যে ধুলাবালি প্রবেশ করে তা খুবই সমস্যার সৃষ্টি করে। এখানে রাস্তার উপর যদি সকাল বিকাল ঠিকমতো পানি  দেওয়া হতো তাহলে আমাদের ভোগান্তি অনেকটা কমে যেতো। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
 


নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন বলেন, আমি মাত্র গতকাল (শনিবার) এখানে এই দায়িত্বে যোগদান করেছি। তাই বিষয়টি বুঝতে আমার একটু সময় লাগবে। তবে একদিনের অভিজ্ঞতায় যেটুকু বুঝেছি এই শহরে ইজিবাইকের সংখ্যা অনেক বেশি।

 

 

একই সাথে রাস্তার উন্নয়নে বিভিন্ন জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে হয়তো সেটাও একটা কারণ হতে পারে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্প নগরী হওয়ায় এখানে লোকসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। তবে বিষয়টি কিছুদিন স্টাডি করলে হয়তো এর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বলতে পারবো। এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর