ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনে’র দ্বিবার্ষিক নির্বাচন
ইলেকশন না সিলেকশন !

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনে’র দ্বিবার্ষিক নির্বাচন
# ২১ পদে ২৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা
# ৩ প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চাপ
# সাধারণ ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন নির্বাচন
গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর আশায় বুুক বেঁেধছিল নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। কেননা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর ওসমান পরিবারের কালো থাবায় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো নির্বাচনের বদলে সিলেকশনের মাধ্যমে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হতো। ওসমানরা পালালেও পুরনো রেওয়াজ থেকে বেরোতে পারেনি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের নতুন কমিটি হয়েছে নির্বাচন ব্যতিত। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয় যাতে নির্বাচনের প্রয়োজনই পড়েনা।
বিকেএমইএতে নাম মাত্র পাতানো নির্বাচনের পথে কেননা ৩৫টি পদে সর্বমোট ৩৮ জন প্রার্থী। এরমধ্যে সেলিম ওসমানের অনুগত হিসেবে পরিচিত ঝুটব্যবসায়ী হাতেম প্যানেলেরই ৩৫ জন, এরবাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনজন। যার কারণে নির্বাচন হচ্ছে এটি প্রমাণের চেষ্টা চলছে। হাতেমের ৩৫ জনের প্রার্থীর ২০ জন আগের পর্ষদেও ছিলেন। বিকেএমইএ’কে অনুসরণ করেই যেন প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে আগামী ২৪ মে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস্ এসোসিয়েশনে’র দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনেও। গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ। ২১ পদে মাত্র ২৪ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও সূত্র জানিয়েছে এরমধ্যে পদের বাইরে অতিরিক্ত তিন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে নানাদিক থেকে। সাধারণ গ্রুপ থেকে ১৫ পদে ১৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আর এসোসিয়েট গ্রুপের ৬ পদে ৮ জন মনোয়নপত্র দাখিল করেছেন। সাধারণ গ্রুপের মধ্যে মো. বিল্লাল হোসেন এবং এসোসিয়েট গ্রুপ থেকে কামরুল হাসান ও খায়রুল কবিরকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য নানা দিক থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির একাধিক নেতা এবং সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠদের দিয়েও চাপ তৈরি করা হচ্ছে। অথচ এই সংগঠনটিতে শামীম ওসমানের বন্ধু ও সেলিম ওসমানের ছেলে দাবি করা লিটন সাহা দীর্ঘদিন ধরে অনাচার ও অত্যাচার চালিয়েছে। লিটন সাহা কারাগারে গেলে কো-অপ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সূত্র জানায়, জেনারেল গ্রুপ থেকে একজন এবং এসোসিয়েট গ্রুপ থেকে দুইজনকে সরানো গেলে ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশন নির্বাচনে আর নির্বাচনের প্রয়োজনই হবেনা। এই নির্বাচনে বহু সৎ এবং নেতৃত্বগুনসম্পন্ন ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে আগ্রহী হলেও নানামুখী চাপের কারণে অনেকে প্রার্থী হননি। ২১ পদে মাত্র ২৪ প্রার্থী হলেও এখন তিনজনকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করা হলে আর নির্বাচনের প্রয়োজনই পড়বেনা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জেনারেল গ্রুপের প্রার্থী বিল্লাল হোসেন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এসোসিয়েট গ্রুপের প্রার্থী কামরুল হাসান যুগের চিন্তাকে জানান, নানাদিক থেকে চাপ প্রয়োগের যে কথা শোনা যাচ্ছে, সেটি আমিও শুনেছি। তবে আদৌ আমাকে কেউ চাপ প্রয়োগ করেনি। আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি যাতে নির্বাচনটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে আমি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকবো। ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হলে সংগঠনে গতিশীলতা ও প্রাণচাঞ্চল্য বাড়ে।
এবিষয়ে জানতে এসোসিয়েট গ্রুপের প্রার্থী খায়রুল কবিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গতকাল বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্টস্ এসোসিয়েশনে’র দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে (২০২৫-২০২৭) ২১ পদে ২৪ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সাধারণ গ্রুপ থেকে ১৫ পদে ১৬ প্রার্থী এবং এসোসিয়েট গ্রুপের ৬ পদে ৮ জন মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সাধারণ গ্রুপ থেকে আলহাজ্ব এম সোলায়মান, মোস্তফা এমরানুল হক মুন্না, সঞ্জিত রায়, আলহাজ্ব মো. মজিবুর রহমান, তাজুল ইসলাম টুটুল, সিরাজুল হক হাওলাদার সিরাজ, মো. আকবর হোসেন, মো. আকরাম, গৌতম সাহা, মো. তাইজ উদ্দিন আহমেদ, মো. জোবায়ের আলম ঝলক, মো. সাইদুর রহমান, আব্দুল্লাহ্ আল হোসেন বাপ্পি, মাজহারুল ইসলাম, মো. মাহমুদুল হোসেন লিংকন ও মো. বিল্লাল হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়া এসোসিয়েট গ্রুপ থেকে মোহাম্মদ মুসা, মো. মজিবুর রহমান, মো. মাহফুজুর রহমান খান মাহফুজ, মো. জাহিদ হোসেন, জীবন সাহা, মো. ফয়সাল আহম্মদ দোলন, মো. কামরুল হাসান ও মো. খায়রুল কবীর মনোনয়নপত্র জমা দেন। সাধারণ গ্রুপ থেকে ১৫ জন এবং এসোসিয়েট গ্রুপ থেকে ৬ জন ইসি সদস্য নির্বাচিত হবেন।
নির্বাচন বোর্ডের দায়িত্বে আছেন চেয়ারম্যান হিসেবে, প্রবীর কুমার সাহা, সদস্য হিসেবে মো. হাবিব ইব্রাহিম সদস্য এবং ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান। নির্বাচন আপিল বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে আলহাজ্ব মুহাম্মদ আইউব, সদস্য আলহাজ্ব মো. নিছারউদ্দিন কামাল এবং মো. মকবুল হোসেন দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য যে, গত ৪ মার্চ নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন (২০২৫-২০২৭) এর তফসিল ঘোষণা করা হয়। ৫ এপ্রিল প্রাথমিক ভোটার তালিকা এবং ১৫ এপ্রিল চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। তফসিল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন এবং আগামী ২৪ মে কার্যকরী পরিষদ নির্বাচন (২০২৫-২০২৭) অনুষ্ঠিত হবে।
একটি মহলচাপ প্রয়োগ করে তিন প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা একটি নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।