Logo
Logo
×

সংগঠন সংবাদ

‘আমাকে ঝুট বাবা বানানো হয়েছে’

Icon

‘আমাকে ঝুট বাবা বানানো হয়েছে’

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

‘আমাকে ঝুট বাবা বানানো হয়েছে’

সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হাতেমের আক্ষেপ ‘আমাকে ঝুট বাবা বানানো হয়েছে’

Swapno



বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমই) পরিচালক পদের প্রার্থী ঝুট ব্যবসায়ী মোহম্মাদ হাতেম বলেছেন, অনেকে বলেন আমি কেন ঝুট নিয়ে কাজ করছি। কোন কোন পত্রিকা আমাকে ঝুট বাবা কিংবা ঝুট ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করেছে। আমি মনে করি এটা তাদের সীমাবদ্ধতা, তাদের শিক্ষার অভাবে এটা তারা করেছে। আমি যে ঝুটের ব্যবসায়ী নাকি কি ব্যবসায়ী তা এই দেশের সরকার থেকে শুরু করে সকলেই জানে। ব্যবসায়ীরা ভালো করে জানে। গতকাল বুধবার ৭ মে সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে উত্তরে তিনি এই কথা বলেন।


মোহাম্মদ হাতেম পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে একদিন আমার মালের গাড়ি আটকে দেয় পুলিশের এক এসআই। তার নামটা এখন মনে নাই। আমার ড্রাইভার আমাকে জানালো পুলিশ গাড়ি আটকাইছে। আমি তাকে ফোনটা পুলিশকে দিতে বললাম, সেই সাথে তাকে জিজ্ঞেস করলাম আমার মাল কেন আটকাইছেন। তখন তিনি  আমাকে বললেন এটা সিক্স পয়েন্ট ফাইভ। আমি তাকে বল্লাম এটা কি চুরির মাল কিংবা ডাকাতির মাল কি না তা দেখা। এর বাইরে বেশি আপনার দায়িত্ব না। 


ওই এস আই আমাকে বলে আমি এটা মামলায় দিয়া দিব। আমিও তাকে ঠিক আছে তাকে বল্লাম আপনি মামলা দেন আমি আসতাছি। একই সাথে বের হয়ে আমি অতিরিক্ত ডিআইজিকে জানানোর পরে তিনি তার খোঁজ-খবর নেন এবং তাকে যদি আইনের বাইরে থাকে তাহলে আটকে রাখো। কিন্তু তিনি একটু পরেই কাগজপত্র দিয়ে ছেড়ে দেন। 


আমি বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট হয়েও পুলিশের কাছে অত্যাচারিত হই, তাহলে অন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের তারা কি পরিমাণ শিকার। পুলিশ রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে টাকা খাওয়ার জন্য, তাদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এই ভাবে সরকারের বিভিন্ন জায়গায় আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। কাচঁপুর ব্রীজ, সাইনবোর্ড, সানারপাড়, রূপগঞ্জের শরীফ মেলামাইনের এখানে পুলিশ এই কয়েক জায়গায় গাড়ি আটকিয়ে জরিমানা করতাছে। তারা বিভিন্ন সময় মাসে ৫টা জরিমানা করলে ৩০ টা স্যাটেলমেন্ট করে  টাকা খায়।এই ভাবে ব্যবসায়ীরা পুলিশের কাছে প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হচ্ছে।


মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “আমি ওসমান পরিবারের লোক কিনা ঢাকায় এমন প্রশ্ন করেছেন এক সাংবাদিক। আমি বললাম, আমরা আসলে কেউ কারো পরিবারের লোক না। আমি কখনও কোনো রাজনৈতিক দলে ছিলাম না।” তিনি আরও বলেন, “গত সরকারের আমলে গোয়েন্দা সংস্থার থেকে শুরু করে অনেকেই আমাকে সরাসরি বলেছেন, (সাবেক) প্রধানমন্ত্রী আপনাদের মতো কিছু ক্লিন ইমেজের লোক চাচ্ছেন। যদি আপনি সম্মত হন তাহলে আপনার ফাইলটা আমরা প্রস্তুত করবো। কিন্তু আমি কখনই রাজি হই নাই। আমি কখনও কারো লোক ছিলাম না। পোশাক শিল্পই আমার পরিবার।”


বিকেএমইএ’র প্রতিষ্ঠা তার হাতে হয়েছে জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, “বিষয়টা তো এমন না যে, সেলিম ওসমান আমাকে আইনা বিকেএমইএতে ঢুকাইছে। তাহলে আমি হয়তো সেলিম ওসমানের লোক হইতাম। বরং বিকেএমইএ’র জন্মটাই আমার হাতে। বিকেএমইএ’র প্রথম মেম্বারশিপ আমার প্রতিষ্ঠানের নামে।


হাতেম বলেন, সেলিম ভাই নিজেই পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছিলেন, যতদিন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবে আর আমি জীবিত থাকবো ততদিন হাতেম তুমি প্রেসিডেন্ট হইতে পারবা না। মিডিয়ার সামনে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। সুতরাং যারা আমাকে ওসমান পরিবারের বা স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের দোসর বানাবার চেষ্টা করে, তাদের এই দিকটা মনে রাখা উচিত।


এই সময় তার পাশে বসা বিকেএমইএ’র সহসভাপতি মনসুর আহমেদকে দেখিয়ে বলেন, “উনি সেলিম ওসমানের বন্ধু। কিন্তু ’৯৬ সালে বিকেএমইএতে তাকে আমি আইনা প্রথম কমিটিতে ঢুকাইছি। প্রথম কমিটির এই দুইজন এখনো আমরা আছি।”


গত বছরের ৫ আগষ্টের পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের বিরুদ্ধে ‘ওসমান পরিবারের দোসর’ অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি এই কথা বলেন


বিগত সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “সরকার যখন যেই থাকুক না কেন আমাদের তো সরকারের সাথে থাকতে হয়। যেহেতু তারা পলিসি মেকিং এ থাকেন তাই তাদের সাথে থেকেই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পলিসিগুলো বের করে আনতে হয়। সরকারের বিরোধীতা করে তো এইটা করা যাবে না। ব্যক্তিস্বার্থে কোনো সরকারের সাথে ছিলাম না।


সেলিম ওসমানের পদত্যাগের পর চিঠিতে পরবর্তী সভাপতি হাতেমকে করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগের প্রেসিডেন্ট লিখিতভাবে বলেছেন, আমাকে যেন প্রেসিডেন্ট করা হয়। বিগত দিনে এই সেক্টরে আমার অবদান দেখে আমাকে প্রেসিডেন্ট করতে অনুরোধ করেছেন। এইটা ওনার বদান্যতা, উনি ওনার দায়িত্বটুকু পালন করেছেন। উনি যদি সেদিন পরিষ্কারভাবে নিষেধও করে দিতেন, তাহলেও আমি প্রেসিডেন্ট হতাম। কারণ আমি ছাড়া বিকেএমইএতে আর কেউ আছে কিনা সেইটা আপনারাই বলেন।”


তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচন তো আমরা ওপেন করে দিয়েছিলাম। যারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তারা তো নির্বাচনে আসেন নাই। তাদের মধ্যে একজন তো বিকেএমইএ’র মেম্বারশিপ নবায়নও করে নাই এবং ভোটারই হয় নাই। এমনকি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও তারা পাঠিয়েছেন।


মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমি কোন দল করি না, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত বা ইসলামিক কোনো দল করি না। কিন্তু আমাদের ফ্যামিলি ধর্মীয় দৃষ্টিকোনকে প্রাধান্য দিয়ে চলি। আমি আলেম পরিবারের একজন সন্তান। কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তাদের পাশে আগেও যেমন ছিলাম তেমনি ভবিষ্যতেও থাকবো।” এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মনসুর আহম্মেদ, বিকেএমইএ সহ-সভাপতি অর্থ মোরশেদ সারোয়ার সোহেলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন