সড়ক ও জনপথের অপরিকল্পিত সংস্কারে মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কে ভোগান্তি

লতিফ রানা
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

সড়ক ও জনপথের অপরিকল্পিত সংস্কারে মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কে ভোগান্তি
প্রতি বছরই সংবাদের শিরোনাম হয় নারায়ণগঞ্জ শহর সংলগ্ন বন্দর উপজেলার একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কের সংস্কার সংস্কার খেলা ও জনগণের ভোগান্তি নিয়ে। তবে সেটা কর্তৃপক্ষ কতটা গুরুত্ব দেয় কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিষয়টি নিয়ে গতটা আন্তরিক তা জানি না, তবে বছর শেষে সংবাদ মাধ্যমে যে সেই একই দুর্ভোগ নিয়ে সংবাদ প্রচার করতে বাধ্য হতে হয়, সেই বিষয়টা বন্দরের সাধারণ মানুষের কাছে খুবই দৃষ্টিকটু বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এর আগে নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সংবাদ মাধ্যম দৈনিক যুগের চিন্তা’য়ও বিভিন্ন শিরোনামে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এমনকি ২০২২ সালে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধনের আগেও ’ঘাটতি থাকলে ভোগান্তি বাড়াবে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। যেখানে সওজের পরিকল্পনায় কোন ঘাটতি থাকলে তার জন্য বন্দরবাসীর ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে বলে দাবি করেছিলেন বন্দর প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় সচেতন মহল। তবে বিষয়গুলোকে কোন গুরুত্বই দেননি সড়ক ও জনপথ। উপরন্তু সড়কটির দুই পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট প্রশস্তের নামে এবং খানাখন্দ মেরামতে ৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও জনগণের ভোগান্তি যেই লাউ সেই কদুর অবস্থায়।
২০২২ সালের ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় বন্দরের কয়লার ঘাট-সৈয়দপুর এলাকার তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। এই সেতু উদ্বোধনের আগেই বন্দরের মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কে চলাচল করতো ভারী যানবাহন। যার মধ্যে ছিল বসুন্ধরা সিমেন্ট, আকিজ সিমেন্ট, সিমেক্স সিমেন্ট, সামিট পাওয়ার প্লান্ট, এসিআই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড, মেরিন ইনস্টিটিউট, তিন শতাধিক তুলা কারখানা, খাদ্যগুদামসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। তাই স্থানীয় জনগণসহ বন্দর প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলের দাবি ছিল সড়কটির যতটুকুই প্রসস্ত করা হোক না কেন তা যেন দক্ষ প্রকৌশলীদের মাধ্যমে পর্যালোচনা করে একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সে জন্যই ৫৪ কোটি টাকা ব্যায় করে এই ১২ কিলোমিটার সড়কটির প্রশস্ত ও সংস্কার কাজ করা হয়। কিন্তু সেই কাজ শেষ হতে না হতেই আবারও সড়কের কার্পেটিংয়ে দেখা যায় টিউমার ও গর্তের ফাঁদ। প্রায় সময়ই দেখা যায় রাস্তার মাঝখানের কোন গর্তে আটকে আছে মাল বোঝাই করা বড় গাড়ি। দুই পাশে ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারিতে বসে বিরক্ত হয়ে খিস্তি ছাড়ছে যাত্রীরা।
বন্দরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আমানউল্ল্যাহ যুগের চিন্তাকে বলেন, এই সেতুর নির্মাণ কাজের অনুমোদন থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত দীর্ঘ এক যুগ পার হলেও এত লম্বা সময়েও সড়কটি দীর্ঘস্থায়ী মেরামতের কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি কেন তা প্রশানই বলতে পারবে। তাই সেতু উদ্বোধনের পর রাস্তা সংস্কারের কাজের পরিকল্পনায় ঘাটতি এবং সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক দুর্ভোগ এবং ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই দুর্ভোগ আর ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে এখানকার জনসাধারণ ও যানবাহনকে। সড়কটি ছয়লেনে উন্নীত হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো আশার আলো দেখছে না।
বন্দর নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল কবির সোহেল যুগের চিন্তাকে বলেন, এই সড়কটি বহু বছর যাবতই বছরে দু’একবার মেরামত করতে দেখা যায়। বিষয়টি সওজের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা জানিয়েছিলেন, এই সড়কের কার্পেটের টেম্পার নষ্ট হয়ে গেছে, তাই পুরো রাস্তা খোদাই করে নতুন কার্পেট না করলে কার্পেটিং করে কোন ফল পাওয়া যাবে না। তাই তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধনের পর সড়কটি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা নেওয়া হবে আমাদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু এতো টাকা খরচ করে মেরামতের প্রায় ছয় মাস পর থেকেই আবার সেই পুরানো চিত্র দেখা শুরু হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু থেকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সংযোগ পুরোপুরি চালু হয়নি। আমাদের বন্দরের যানবাহন চলাচলেই এই অবস্থা, সেসব গাড়ি চলাচল করলে কি অবস্থা হবে!