এক পশলা বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেল ফতুল্লার লালপুর!

মাকসুদুর রহমান
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

এক পশলা বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেল ফতুল্লার লালপুর
বেশ কয়েকদিনের তীব্র দাবদাহের পর এলো স্বস্তির বৃষ্টি। কিন্তু সেই বৃষ্টি দেখেও আঁতকে উঠে ফতুল্লার বিস্তীর্ণ এলাকার জনগণ। বেশ কয়েক বছর ধরেই জলাবদ্ধতা নামটা শুনলেই প্রথমেই মনে আসে ফতুল্লার লালপুরের কথা। এটা এমন এক জনপদ যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই দীর্ঘ সময়ের জন্য পানিতে তলিয়ে থাকে গোটা এলাকা। গতকালকের মাত্র ঘন্টা খানেকের বৃষ্টিতেই তলিয়ে গিয়েছে ফতুল্লার লালপুর ও তার আশেপাশের এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক। সামনে আসছে বর্ষার মৌসুম। তখন টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পোঁছাবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। কারণ টানা বৃষ্টিতে লালপুর এ ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।
লালপুর এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বসবাস করে থাকেন । তবে এখানে নিম্ন শ্রেনীর লোকেদেরই বসবাস বেশি। তীব্র জলাবদ্ধতায় বিষাক্ত পানির মধ্য দিয়েই হেঁটে কর্মস্থলে যোগদান করেন।কারন দিনমুজর ও শিল্পকারখানার কর্মজীবি মানুষ চাইলেই তারা যানবাহনে যাতায়াত করতে পারে না। তাদেরকে এই নোংরা পানি মাড়িয়েই তাদের কর্মস্থালে যেতে হয়। এছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শ্রমজীবীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষকেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পানি অপসারণের জন্য কয়েকটি বড় মোটর দিয়ে পানি সেচ চলে। তবে এতেও বিরাট বিদ্যুৎ বিলের খড়গ নেমে আসে তাদের উপর। আগের সরকারের সময় এই এলাকার বাসিন্দারা চাঁদা তুলে এই দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করেছেন এবার কী হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা। দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহালেও এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান তারা খুঁজে পাননি।
লালপুর এলাকার কয়েকজন গার্মেন্টসকর্মী জানান, শিল্প-কারখানার বজ্র মিশ্রিত নোংরা কালো পানিতে সয়লাব হয়ে থাকে পুরো এলাকা। এই পানি দিয়ে হেঁটেই প্রতিদিন হাজার হাজার কর্মী নিজের কর্মস্থলে যায়। সকাল-দুপুর-বিকাল মোট ৪ বার এই পানিতে চলাচল করে পায়ে হেটে। এত করে খোসপাঁচড়া রোগ এবং বিভিন্ন রকমের সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি মারাত্মক হুমকি । তবে বর্ষার পূর্বে লালপুর ও আশেপাশের ড্রেনগুলো যদি জনপ্রতিনিধিরা পরিষ্কার করে রাখতো তাহলে এলাকার বাসীর ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমতো বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, ড্রেনগুলো ময়লা আবর্জনা ও পলিথিনে পূর্ণ হয়ে রয়েছে, যার ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত ড্রেন পরিষ্কার ও সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হোক ।
এলাকার সচেতন মহল দাবি করেন, অতিদ্রুত লালপুরসহ আশেপাশের ড্রেনগুলো অতিশিঘ্রই সংস্কার করা উচিত। অন্যথায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়বে কয়েক লাখ মানুষ।
লালপুর এলাকার একজন স্থানিয় বলেন, সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্ত লালপুর এলাকাবাসীর ভাগ্য এখনো পরিবর্তন হয়নি। ১৬ বছর যাবৎ কোনো সংস্কার নেই এ লালপুরের। যত দিন যাচ্ছে সাধারণ মানুষরে ভোগান্তি ততই বাড়ছে । এই এলাকার সংস্কার যে কবে হবে একমাত্র আল্লাহ জানে। এখন আমরা প্রত্যাশা করি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই লালপুরের ড্রেনগুলো ও রাস্তা দ্রুত সংস্কার করে লালপুরবাসীর ভোগান্তি লাঘব হবে।
এদিকে গতকাল ফতুল্লার ডিএনডি অভ্যন্তরীণ ইসদাইরর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণের দাবি জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। গতকার সোমবার দুপুরে ফতুল্লার ইসদাইর উদ্দীপ্ত তরুণ সংঘের নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করে ওই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা জেলা প্রশাসককে জানান, ফতুল্লা ইসদাইর এলাকাটি ডিএনডির অভ্যন্তরীণ এলাকা। এখানপ সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে এলাকার পাটোয়ারী বাড়ি থেকে মিছির আলি মেম্বার বাড়ি হয়ে রেল লাইন পর্যন্ত প্রায় ২৩০ মিটার এলাকায় ড্রেনেজ সমস্যা প্রকট। এ সমস্যা সমাধানে উল্লেখিত স্থানে নতুন ড্রেন নির্মাণের জরুরি। একই সাথে যানজট সমস্যা নিয়েও আলোচনা করা হয়। যানজট নিরসনে নারায়ণগঞ্জ কমলাপুর রেল লাইনের ফতুল্লার ইসদাইরবাজার অস্থায়ী রেল ক্রসিংয়ে ৩ জন ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, পুরো বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।