টানা বৃষ্টিতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে ভোগান্তি চরমে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

টানা বৃষ্টিতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে ভোগান্তি চরমে
নারায়ণগঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম রোড চাষাড়া-পঞ্চবটি সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে চরম অবহেলার শিকার। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ, পাশাপাশি ছোট, মাঝারি ও ভারী যানবাহন চলাচল করে। সড়কটির দুই পাশে রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা। কিন্তু চাষাড়া থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত সড়কটি বর্তমানে এতটাই নাজুক অবস্থায় রয়েছে যে, সেটি দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
টানা বৃষ্টিতে এই ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। পুরো সড়কে বড় বড় গর্ত, খানাখন্দে ভরা। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে তৈরি হয় ছোট ছোট জলাশয়ের মতো অবস্থা, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন নানা দুর্ঘটনায় পড়ছে রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন। পথচারীরাও হচ্ছে ভোগান্তির শিকার।
সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও দুর্ভোগের বিষয়টি বহুদিন ধরেই আলোচনায় থাকলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি স্থানীয় প্রশাসন বা সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে। তবে এবার এই দাবি সাধারণ জনগণের পরিসর ছাড়িয়ে পৌঁছেছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও।
সম্প্রতি এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপি এবং দলের সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে মাসদাইর ও পঞ্চবটি এলাকায় অনুষ্ঠিত পৃথক দুইটি রাজনৈতিক সভায় বক্তারা সড়কটির করুণ অবস্থার চিত্র তুলে ধরে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান। বক্তারা বলেন, "শুধু দলীয় নয়, এটি এখন জনগণের যৌক্তিক দাবি। এই রাস্তা সংস্কার না করলে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতিদিনের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।"
সড়কটি শুধু সাধারণ জনগণের চলাচলের জন্য নয়, দেশের অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত শিল্প-কারখানার পণ্য পরিবহন হয়, যা রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সড়কের এমন দুরবস্থায় শিল্পখাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গতকালও বুধবার সকাল ৬ টা থেকে নারায়ণগঞ্জে একটানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে, যা পথচারী, অফিসগামী এবং খেটে-খাওয়া মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তিতে ফেলেছে। এই লাগাতার বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের প্রধান সড়কগুলোসহ অলিগলিতে পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
কোথাও কোথাও হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় যান চলাচল ধীরগতিতে চলছে। বিশেষ করে নিচু এলাকাগুলোতে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেশি। অফিসগামী যাত্রীরা সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারছেন না। গণপরিবহনের অপ্রতুলতা এবং যানবাহনের দীর্ঘ সারি এই ভোগান্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চাষাঢ়া এলাকার বাসিন্দা এলাহী জানান, ‘আমার অফিস সকাল ১০টায় শুরু হয়। কিন্তু এখনো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনি। ছাতা নিয়ে বের হয়েছি, কিন্তু কোনো বাসে সিট পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে হেঁটেই যেতে হচ্ছে, পুরো ভিজে একাকার।’ তার মতো শত শত মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে ছুটতে দেখা গেছে।
একই সমস্যার কথা জানালেন দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা নঈম হাসান, যিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘টানা বৃষ্টি হচ্ছে, কোনো থামাথামি নেই। এই বৃষ্টির কারণে আমি এখনো আমার দোকানে যেতে পারিনি। বেচাকেনা তো দূরের কথা, দোকান খুলতেই পারছি না।’
টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালকরা। কালিরবাজার এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক রহমত উল্লাহর সঙ্গে। হতাশ কণ্ঠে তিনি জানান, "সকাল থেকে মাত্র ৭০ টাকার ভাড়া পেয়েছি। বৃষ্টিতে যাত্রীই নেই। আবার ভিজে যাওয়ার কারণে অনেকে রিকশাতে উঠতেও চান না। আমরা তো ভিজে ভিজেই রিকশা চালাচ্ছি, কিন্তু ইনকাম হচ্ছে না। বৃষ্টির কারণে তাদের আয়েও টান পড়েছে।