নাসিকের কার্যালয় দখল করে বিএনপি নেতার ব্যক্তিগত কার্যক্রম পরিচালনা !

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

নাসিকের কার্যালয় দখল করে বিএনপি নেতার ব্যক্তিগত কার্যক্রম পরিচালনা !
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেন শাহ আহম্মেদ দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে র্দীঘ আট মাস ধরে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর অফিস দখল করে দলীয় রাজনীতি ও ব্যক্তিগত কর্মকান্ড পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অবৈধভাবে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর অফিসটি দখল করে রাখার কারনে সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের স্টাফরা। কাউন্সিলর অফিসে নানা কাজের জন্য সেবা নিতে আসা লোকজন বসার জায়গা ও পাচ্ছেনা। ফলে র্দীঘ সময় দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো: নুর কুতুবুল আলম সাবেক কাউন্সিলর শাহেন শাহ আহম্মেদকে তার দখলে থাকা সিটি কর্পোরেশনের অফিস কক্ষটি ছেড়ে দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করে। কিন্তু নোটিশ প্রদানের পর প্রায় দশ মাস পেরিয়ে গেলেও শাহেন শাহ আহাম্মদ কাউন্সির কার্যালয়ের দখল ছাড়েনি।
উল্টো দলীয় প্রভাব বিস্তার করে সিটি কর্পোরেশনের সচিবকে চাপ দিয়ে নানা অনিয়ম করে জন্মও মৃত্যু সনদসহ বিভিন্ন সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর র্পূবপাড়ের সোনাকান্দা, দড়িসোনাকান্দা, মাহমুদ নগর, বেপারী পাড়া, ফরাজিকান্দা, হাজীপুরসহ বেশ কয়েটি এলাকা নিয়ে গঠিত সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে মানুষের সেবা কার্যাক্রম পরিচালনা করার জন্য বন্দরের আলী আহাম্মদ চুনকা সড়কের ( সাবেক সোনাবিবি রোড ) সোনাকান্দা এলাকার সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব মার্কেটের তৃতীয় তলায় কাউন্সিলরের কার্যালয় গড়ে তোলা হয়।
কিন্তু পাচঁ আগষ্টের পর দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র কাউন্সিলরদের অপরসারন করা হলেও তিনি কাউন্সিলর কার্যালয়ের দখল ছাড়েনি। প্রায় সাতশ স্কয়ার ফুটের অফিসের জায়গা জোরর্পূক শাহেন শাহ আহম্মেদ দখলে রেখেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ, রাশেদ মিয়াসহ কয়েকজন জানান, স্থাণীয় সরকার ম›ন্ত্রনালয় প্রায় ১০ মাস আগে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র কাউন্সিলরদের পদ থেকে অপসারন করছে। কিন্তু ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তার কার্যালয় না ছেড়ে সেখানে প্রতিদিন বিচার, সালিশসহ তার ব্যক্তিগত ও দলীয় কার্যক্রম মিটিং, কর্মী সভা পরিচালনা করে আসছে। এতে সেবা নিতে আসা লোকজন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে বিএনপি নেতা শাহেন শাহ সিটি কর্পোরেশনের ২০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় ২০২৩ সালের ৬ আগষ্ট সচিবকে দিয়ে চাপে রেখে তার অনুগত জহিরুল ইসলাম জয়কে নামে এক ব্যক্তি সহকারি সচিব হিসাবে বসিয়ে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে জন্মসদন, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট প্রদানসহ নানা অপকর্ম করেছেন । যা উঠে এসেছে সিটি কর্পোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটিতে।
সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শেখ মোস্তফা আলী নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রির্পোটে বলা হয়, ২০২৩ সালের ২৬ আগষ্ট স্থাণীয় সরকার উপ-পরিচালক সিটি কর্পোরেশনের ২০ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের অথোরাইজড ইউজার ও সিটি কর্পোরেশনের দুইজন জৈষ্ঠ কর্মচারীকে অহেতুক হয়রানির প্রতিবাদে তৎকালিন মেয়রের নির্দেশে ৫ জুলাই থেকে সকল ওয়ার্ডে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে ১৭ জুলাই শুধুমাত্র সংশোধন কার্যক্রমের সুযোগ প্রদান করা হয়।
কিন্তু মেয়রের নির্দেশ অমান্য করে ২০ ওয়ার্ডের সচিব ও তার সহযোগি জহিরুল ইসলাম জয় নতুন জন্মসনদ প্রদান করেন। এমনকি সকল ওয়ার্ডের জন্ম সনদ প্রদান কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও ২০ নং ওয়ার্ডের সহকারি সচিব জয় বিভিন্ন সময়ে ৩, ৪, ৭, ৯,১৪,১৭, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের জন্ম সনদ করেন। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের নজরে এলে ২০ ওয়ার্ডের অথোরাইজড ইউজার শ্যামলী সাহাকে গত ২৩ জুলাই তারিখ হতে ওটিপি প্রদানের জন্য মৌখিক ভাবে নিষেধ করা হয়।
কিন্তু তৎকালিন কাউন্সিলর শাহেন শাহ আহম্মেকে সহকারি সচিবের অপরাধের বিষয়টি জানানো হলেও তিনি আরেকবার সুযোগ দেয়ার কথা বলেন। মুলত তার আসকারাতেই বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করে সিটি কর্পোরেশনের বিদুৎ হেলপার পীর মোহাম্মদ শাওনের মাধ্যমে যোগসাজস করে শ্যামলী সাহার অজ্ঞাতে তার মোবাইল ওটিপি প্রেরন করে জয় ও পীর মোহাম্মদ শাওন জন্মসদন বাণিজ্য করে। তদন্ত রির্পোটে প্রমান মিলে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারি সচিব জহিরুল ইসলাম জয় ও পীর মোহাম্মদ শাওন জন্মনিবন্ধন সদন প্রদানের অনিয়ম ও দুনীতি করে বিপুল অংকের টাকা আত্নসাৎ করেছে।
বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর শাহেন শাহ আহম্মদ সেই দুর্নীতিবাজ সহকারি সচিবকে আবারও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে আসার জন্য গত কয়েকদিন ধরে সিটি কর্পোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তদবির করছেন কবলে সিটি কর্পোরেশনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর কার্যালয় ছেড়ে দেয়ার নোটিশ পেয়েছেন স্বীকার করে বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর শাহেন শাহ আহাম্মেদ টেলিফোনে এই প্রতিবেদকে জানান, নোটিশ পাবার পর সিটি কর্পোরেশনের কাছে লিখিত আবেদন করেছি তিন মাস সময় দেয়ার জন্য। কারন হিসাবে উল্লেখ করেছেন, নারায়ণগঞ্জে মহানগরে বিএনপির কোন দলীয় কার্যালয় নেই। মহানগর বিএনপির নেতারা এখানে এসে বসেন। তাই সিটি কর্পোরেশনের কাছে তিন মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছি।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা (সিও) জাকির হোসেন জানান, সিটি কর্পোরেশন থেকে কাউন্সিলর কার্যালয় ছেড়ে দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রায় নয় মাস হয়ে যাচ্ছে কার্যালটির দখল ছাড়েননি । প্রশাসকের সাথে আলাপ করে আবার তাকে নোটিশ দেয়া হবে কাউন্সিলর অফিস ছেড়ে দেয়ার জন্য। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।