গাজীর ‘এপিএস-শাসিত’ মন্ত্রণালয়ের ছায়ায় গড়ে ওঠে সন্ত্রাসের সাম্রাজ্য

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

গাজীর ‘এপিএস-শাসিত’ মন্ত্রণালয়ের ছায়ায় গড়ে ওঠে সন্ত্রাসের সাম্রাজ্য
২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী, যিনি রূপগঞ্জে একজন প্রভাবশালী ও বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাঁর মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এমদাদুল হক, যিনি একপর্যায়ে হয়ে ওঠেন “অঘোষিত মন্ত্রী।” দপ্তরের সব ফাইল ও সিদ্ধান্ত এমদাদের অনুমোদনেই নেওয়া হতো। মন্ত্রী এমনকি নীতিনির্ধারণী বৈঠকেও ঘুমিয়ে থাকতেন, যেখানে এমদাদ কার্যত সিদ্ধান্ত নিতেন।
এমদাদের প্রভাবের উৎস ছিল মন্ত্রীর ব্যক্তিগত দুর্বলতা ও গোপন তথ্য—বিশেষত নারীকেলেঙ্কারি ও ভিডিও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ। পাশাপাশি, রূপগঞ্জের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করে এমদাদ গাজীর নির্বাচনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন, যার ফলে বিনা ভোটে এমপি হওয়া সহজ হয়ে উঠেছিল।
মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও বস্ত্রকল পানির দামে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে গাজীর বিরুদ্ধে। এসব বিক্রির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন এমদাদ। কথিত আছে, প্রকল্পের নামে বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যেমন, “প্লাস্টিক বিকল্প প্রকল্পে” ৫৭০ কোটি টাকা বরাদ্দের কোনো বাস্তব কাজ হয়নি; পুরো অর্থ গাজী তুলে নেন।
একই সময়ে রূপগঞ্জে গড়ে ওঠে এমদাদ বাহিনীর ভয়ংকর ত্রাসের রাজত্ব। স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসী শমসের আলী, শেখ ফরিদ মাসুম, আলী বান্দা, তোফায়েল আলমাছ, মামুন মিয়া, রনি মিয়ারা সরাসরি এমদাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক কারবারসহ বহু মামলা, যদিও অনেকেই এখনো পলাতক।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রূপগঞ্জের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, এলাকাবাসী এখনো অতীতের আতঙ্ক স্মরণ করে কেঁপে ওঠেন। রূপগঞ্জ ছাড়াও সিরাজগঞ্জেও এমদাদের প্রভাব ছিল বলেও জানা গেছে—তিনি সেখানে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।