Logo
Logo
×

রাজনীতি

না.গঞ্জের আ.লীগ অফিসে বিক্রি হচ্ছে বাকরখানি

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

না.গঞ্জের আ.লীগ অফিসে বিক্রি হচ্ছে বাকরখানি

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কয়েকমাস পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় অবস্থিত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি। বর্তমানে সেখানে বসানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাকরখানি তৈরির মেশিন। তৈরিকৃত বাকরখানি বিক্রি হচ্ছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনেই।

Swapno

আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটে, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের নেতারা কেউ দেশ ছেড়েছেন আবার কেউ বা পালিয়ে আছেন। এই অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসটি পরিত্যক্ত অবস্থায় বেশ কয়েকমাস পরে থাকে। কয়েকমাস পরিত্যাক্ত থাকার পর বর্তমানে শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তৈরি হচ্ছে বাখরখানি। বসানো হয়েছে বাকরখানি তৈরির স্বয়ংক্রিয় মেশিন। তৈরিকৃত বাকরখানি পসরা সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়টির সামনেই। তবে এখানেও গুনতে হচ্ছে চাঁদা।



সূত্র জানিয়েছে,  আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা না থাকলেও হাত বদল করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো এখন হকার ও দখলবাজদের নিয়ন্ত্রণে। বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে শহরের চাষাঢ়া থেকে শুরু করে দুই নম্বর রেল গেইট, ডিআইটি, নবাব সিরাজদ্দৌল্লা সড়ক, শায়েস্তা সড়ক, কালীবাজার সড়কসহ বিভিন্ন সড়কগুলো ছিলো হকার ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দখলে।  সেই আওয়ামীলীগ সরকার আমলে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন সড়ক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলত নেতাকর্মীরা। আর এই চাঁদার তিন ভাগের দুই ভাগ পেতেন গডফাদার শামীম ওসমানের আস্থাভাজনরা।



শহরের চাষাড়ার রাইফেল ক্লাব, জিয়া হল, শায়েস্তা খা সড়ক ও ৫নং খেয়াঘাট এলাকায় হকারদের কাছ থেকে চাঁদার ভাগ পেতেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সড়কের চাঁদার একাংশ ভাগ পেতেন মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, চাষাড়া শহীদ মিনার ও ভাষা সৈনিক রোড়ের হকার থেকে কর্মী দিয়ে চাঁদা তুলতেন মহানগর ছাত্র লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সম্রাট। এছাড়া শহরের দুই নম্বর রেল গেইট এলাকায় বিভিন্ন হকারদের কাছ থেকে মাসে চাঁদা নিতেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকদের দিয়ে সেই টাকা উঠাতেন। কিন্তু গত ২০২৪ সালে ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তন হলে তার সাথে পরিবর্তন হয় চাঁদাবাজরা। শহরের বিভিন্ন সড়কে এখন বিভিন্ন দলের নাম বিক্রি করে চলছে চাঁদাবাজি। জায়গা বুঝে প্রতি দোকান থেকে মাসে নেওয়া হচ্ছে ছয় হাজার থেকে শুরু করে পনের হাজার টাকা। এদিকে হকাররা বলছে আগেও টাকা দিতাম এখন টাকা দিচ্ছি। লোক পরিবর্তন হয়েছে। আগে আওয়ামীলীগের লোক নিতো এখন বিএনপির লোক নেয়।



এদিয়ে শহরের দুই নম্বর রেল গেইট এলাকায় সড়কের ফুটপাতে দোকান বসানো নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। কে বড় নেতার লোক, কার দোকান বসাবে, তা নিয়ে প্রতিদিনই চলে ঝগড়া।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের দুই নম্বর রেল গেইট এলাকায় আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে মাসে লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সাব্বির আহমেদ সাগর। পান-সিগারেট, ডিম, চটপটি ও মোবাইলের রিজার্জ এর দোকান সহ বিভিন্ন দোকানে মাসে চাঁদা তুলতেন তারা। কিন্তু ক্ষমতা পরিবর্তনের পরেই সেই চাঁদার টাকা এখন চলে যাচ্ছে বিএনপি নামধারী কিছু চাঁদাবাজদের পকেটে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, দুই রেল গেইট এলাকায় আওয়ামীলীগের অফিসের সামনে সড়ক বন্ধ করে বাকরখানি তৈরি ও বিক্রির দোকান দিয়ে বসেছে বিএনপি নেতা। এছাড়া আর কয়েকজন বিকাশে দোকানসহ ভাজা- পোড়ার দোকান দিয়ে বসেছে। কিন্তু বর্তমানে দোকান বসানোর প্রতিযোগীতার কারনে সেই সড়কের ফুটপাত এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। সেই সড়কের অধিকাংশ  দোকানগুলোর পাশেই রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা।



এদিকে পথচারীরা বলছে, এতো দিন এই সড়কটি আওয়ামী লীগের নেতাদের দখলে ছিলো। তাদের লোকেরা সড়ক দখল করে বিভিন্ন  দোকান বসিয়ে চাঁদা তুলতো। কিন্তু এখন এই মোড়টিতে দোকান আরও বেড়ে গিয়ে। কয়েকটি হোটেলের মালামাল সড়কের ফুটপাত অর্ধেক দখল করে রেখেছে। অনেক সময় এই এখান দিয়ে যাওয়ার পথে হোটেলের রান্নার মসলা চোখে এসে পরে। আমরা চাই যেহেতু দুই নম্বর রেলগেইটের মোড়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ, এই সড়কের আশে-পাশে হকার উচ্ছেদ করা হোক। প্রশাসন যাতে গুরত্বসহকারে এই এলাকাটি নজরদারি বাড়ায়।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন