নারী সংস্কার কমিশন বাতিল না করলে আন্দোলন করা হবে : না.গঞ্জে মামুনুল হকের হুংকার

মেহেদী হাসান
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের গণজমায়েতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
# এমন ফুঁ জানি, আপনাকে ইঁদুর বানিয়ে ছেড়ে দেবো : মাও.জুনায়েদ আল হাবিব
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরবর্তী এই সময়ে, ব্যাপক সংস্কারের একটি পরিবেশ তৈরী হয়েছে। বিগত বছরে সংস্কারের আওয়াজ উঠেনি। গত ৫৩ বছরে সংশোধন হয়েছে সংবিধানের কিন্তু সংস্কার হয়নি। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে দুই হাজারের বেশি প্রাণের বিনিময়ে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের অন্যতম মহতী উদ্যোগ হলো সংবিধান সহ বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ৬টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে ৫টি কমিশনকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। কিন্তু দুঃখ ভরাক্রান্ত মনে বলতে হয়, নারী সংস্কারবাদী কমিশন যে প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে সেটাকে সাধুবাদ জানাবো দূরের কথা আমরা আলেম সমাজ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছি। আমরা কল্পনাও করতে পারিনা অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশে কোরআন বিরোধী কোন ঘোষনা রাষ্ট্রীয় ভাবে উত্থাপিত হতে পারে। এই জঘন্য কমিশন বলেছে, উত্তরাধিকার আইন ও পারিবারিক আইন এটাই নারীদের প্রতি বৈষম্যের কারন। কোরআন ও ইসলামের আইনকে তারা দায়ী করেছে। ড.ইউনুসের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজ থেকে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে, যতদ্রুত সম্ভব এ প্রস্তবনাকে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি মনির হুসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে ও নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও মহানগরের সভাপতি মুফতি হারুনুর রশিদ’র সঞ্চালনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজত ইসলামের গনজমায়েয়ে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মাওলানা মামুনুল হক একথা বলেন।
এসময় মামুনুল হক আরও বলেন, আল্লাহর কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে ভালো হবে না। আগামী ৩ তারিখের মধ্যে নারী বিষয়ক কমিশন প্রত্যাহার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে।
এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের আলেম-ওলামাদের শ্রদ্ধাভাজন, বর্ষীয়ান মুরব্বি আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের এখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো। ইনশাল্লাহ ৩ তারিখের মহাসমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ থেকে সকলের সম্মলিত এক মহা মিছিল নারায়ণগঞ্জ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উদ্দ্যেশে যাত্রা করবে ইনশাল্লাহ। আমাদের সাংগঠনিক কিছু মতপার্থক্য রয়েছে, ইনশাল্লাহ ৩ তারিখে মতপার্থক্যের উর্ধ্বে উঠে সকলের সম্মলিত ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে মহাসমাবেশকে বাস্তবায়ন করবো। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের সকল নেতাকর্মীদের আমার বিশেষ অনুরোধ থাকছে।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, কাকরাইল মসজিদ পার হয়ে যখন এই দিক দিয়ে যাই, তখন দেখলাম রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেট ইউনুস সাহেবকে পাহারা দেয়। তখন আমি মনে মনে ভাবতাছিলাম কয়েকদিন আগে কোর্টের বারান্দায় আমাদের সাথে ঘুরছে। আজকে তাকে পুলিশ চতুর দিকে বেষ্টনি দিয়ে পাহারা দেয়া। ড. ইউনূস সাহেব আমরাই আপনাকে সেই জায়গায় উঠাইছি। তবে আপনাকে সেখানে নেওয়ার জন্যে দুই হাজারের উপরে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। লড়াই মাঠে ময়দানে আমরা করেছি। পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, এমন ফুঁ আমরা জানি ৩ তারিখে পর আপনাকে ইঁদুর বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। ৩ তারিখ পর্যন্ত টাইম, আপনি কি করবেন করে ফেলেন। ৩ তারিখ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে আমরা আপনার দিকে হয়ে ফু দিলে আপনি টিকবেন না। সুতরাং বাংলাদেশে কোরআনের বিরোধীতা করে তসলিমা নাসরিন টিকতে পারে নাই। আজকের কমিশনও টিকতে পারবে না। একটা একটা করে মাটির নিচ থেকে ধরে এনে তাদের চামড়া তুলে ফেলা হবে। শেষ কথা আপনাদের থেকে জানতে চাই, তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মানিক মিয়া এভিনিউতে ২৫০ বাস নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ যোগ দিয়েছে। আপনারা সেই নজির আবারো সৃষ্টি করতে তৈরি আছেন কিনা? আগামী ৩ তারিখে আমরা সকলে ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেবো ইনশাল্লাহ।
এসময় সভাপতির বক্তব্যে জেলার সভাপতি মুফতি মনির হুসাইন কাশেমী বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমাদের মাঝে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সকলে মিলে ঐতিহাসিক ভাবে ৩ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ সফল করার জন্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লম্বা লম্বা মিছিল নিয়ে যোগদান করবো। এসময় গনজমায়েতে আরো বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামীবাদী, কেন্দ্রীয় সহ মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজী, মাওলানা নূর হোসেন, মাওলানা আব্দুল মালেক, খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মহিউদ্দিন খান, তাজুল ইসলাম আবাস, মাওলানা কামাল উদ্দিন দাইমী, মাওলানা ফাতিহ সোলাইমান সহ অন্যান্য আলেম ওলামা ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতৃবৃন্দ।