প্রচারণার সাথে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াচ্ছে জামায়াত

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রচারণার সাথে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াচ্ছে জামায়াত
আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে দলীয় কর্মসূচির পাশা পাশি পাড়া মহল্লায় আলোচনা সভা করে যাচ্ছে জেলা মহনাগর জামায়াতে ইসলামী। তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে এখনও সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যদিও আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা চাইছে সরকারের কাছ থেকে।
জামায়াতে ইসলামী শুরুতে নির্বাচনের তাগিদ না দিলেও মাস খানিক আগে দলটির আমির শফিকুর রহমান দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের কথা বলেছেন। তবে সম্প্রতি ইংল্যান্ডের সফর শেষে এসে জামায়াতে আমীর ডা.শফিকুর রহমান স্থানীয় নির্বাচনর আগে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের বিপরীতে গিয়ে বিএনপি সরকার পতনের পর থেকে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়ে আসছেন।
দিকে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের দিন-তারিখ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা আসেনি। যদিও অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের সময় নিয়ে এমন অবস্থার মধ্য বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় নিজেদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে শুরু করেছে ‘সংস্কারকে’ বেশি গুরুত্ব দেওয়া দল জামায়াতে ইসলামী।
সেই হিসেবে ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের প্রার্থী ঘোষনা করেছে। তারাও পাড়া মহল্লা গিয়ে মানুষের সাথে মিশে নিজেদের অবস্থান তৈরী করছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জামায়াতের কয়েকজন প্রার্থী মাঠে নেমে মানুষের সাথে গণসংযোগ করছেন। এছাড়া রমজান মাস জুরে পাড়া মহল্লায় ইফতার সামগ্রি বিতরণ করছেন দলটির পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে দেশে এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কোন রাজনৈতিক দল কত ভোট পাবে, এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে বেসরকারি এক জরিপে। তাতে দেখা গেছে, বিএনপি সর্বোচ্চ ৪১.৭ শতাংশ ভোট পাবে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জামায়াতে ইসলামী পাবে ৩১.৬ শতাংশ ভোট। আর ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাবে ৫.১ শতাংশ ভোট। উন্নয়ন গবেষণা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিং বাংলাদেশ পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তবে দীর্ঘ দিন জামায়াতে ইসমালমীর জেলা মহানগর কার্যালয় বন্ধ করে রেখেছিল পালিয়ে যাওয়া দল আওয়ামী লীগ। এমনকি দলটির নিবন্ধন বাতিল করে তাদের কোন ধরনের কার্যক্রম করতে দেয়া হয় নাই। আর এতে করে দলটি প্রকাশ্যে এসে মানুষের মাঝে তেমন কোন কাজ করতে পারে নাই। কিন্তু গত বছরের ৫ আগষ্টের নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে এসে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে পাড়া মহল্লার মানুষকে নিজেদের কাছে টানছেন। জুলাই আগষ্টে ছাত্র জনতার আহত নিহত পরিবারের পাশে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে সবার আগে জামায়াতে ইসলামী পাশে দাড়িয়েছে। এতে করে মানুষের আস্থা অর্জন করে যাচ্ছে তারা।
তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা জানিয়ে দেয়ার আগেই জেলার তিনটি আসনে নিজেদের প্রার্থীদের মেলে ধরতে শুরু করেছে দলটি। বিএনপির সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিপরীতে নিজেদের ধীরস্থির রাজনীতি এবং জনগণের কাছে যাওয়ার প্রবনতা তাদের আলাদাভাবে পরিচিত করিয়েছে। যেখানে ৫ আগস্টের পর থেকে বি.এন.পি, এন.সি.পি, হেফাজত অভ্যন্তরীন বিরোধে বিতর্কের জালে জড়িয়েছে, সেখানে নিজেদের ক্লিন ইমেজ ধরে রেখে সকল দলের সাথে ঐক্য জারি রেখেছে জামায়াত। পাশা পাশি মাঠে নেমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রার্থীদের নিজ এলাকায় সংযোগ শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতের কার্যক্রম চলছে একসাথেই। বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলটির জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা কাজ করছেন একসাথে। সাংগঠনিক কাজের সাথে সমানতালে চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। দলের ভেতর অভ্যন্তরীন বিরোধ কিংবা নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা না থাকায় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চলছে জোড়েশোড়ে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ তিনটি আসনে প্রার্থীদের পোস্টার ফ্যাস্টুন টানিয়ে মানুষের মাঝে নিজ প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে দলটি। যেখানে পিছিয়ে আছে বিএনপি, এনসিপি সহ অন্যান্য দলগুলো।
রাজনৈতিক সচেতন মানুষরা বলছেন, ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে এতদিন নারায়ণগঞ্জবাসী যা দেখেছে তার তুলনায় ভিন্ন পরিচয় দেখাতে সক্ষম হয়েছে জামায়াত। দলের সমাবেশে নিজেদের শৃঙ্খলা এবং নির্বাচনী রাজনীতিতে নিজেদের পরিচ্ছন্ন রেখে দলের সুনাম ধরে রাখতে পেরেছেন। বিভিন্ন স্থানে দলাদলি বা বিরোধ তৈরি হলেও নারায়ণগঞ্জে এমন চিত্র দেখা যায়নি। উল্টো সবার সাথে সুসম্পর্ক রেখে রাজনীতিতে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। দল গঠনের পাশাপাশি শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী সেক্টরেও নিজেদের মেলে ধরতে শুরু করেছে দলটির নেতারা।
সূত্র বলছে, ‘জামায়াতের প্রার্থীরা এখন স্ব স্ব আসনের সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন। সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন জনগনের কাছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমলে তুলনামূলক বঞ্চিত বা অবহেলার শিকার হওয়া অঞ্চলের বাসিন্দারা সাদরে গ্রহণ করছেন জামায়াতের প্রার্থীদের।
সুত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মহনাগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় সভা করে দলীয় কার্যক্রমের পাশা পাশি বিগত সময়ে নিজেরা কি পরিমান নির্যাতিত হয়েছে তা তুলে ধরছেন। এছাড়া ইনসাফ ভিত্তিকক রাষ্ট্র গঠনের জন্য যা করনীয় তা তুলে ধরছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মঈন উদ্দিন। ইতোমধ্যে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ সদর বন্দর এলাকার তৃনমূল পর্যায়ে ব্যানার পোষ্টার টানিয়ে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের সাথে সভা করছে। সেই সাথে গণ সংযোগ করে যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩, সোনারগাঁ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ড. মো. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়ার ছবিসহ প্রার্থী পরিচিতির লিফলেট বিতরন করে প্রচার প্রচারনা চালিয়েছেন। এছাড়াও অনেকেই জামায়াতের সহযোগী ফরম পুড়ুন করে জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজনীতি করার অঙ্গিকার করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘জামায়াত তার নিজস্ব রাজনৈতিক বুদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। কারও সাথে বিরোধ নয়, সবার সাথে ঐক্য এই মন্ত্রকে সামনে নিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যতিত বাকি সবার সাথেই সুসম্পর্ক রেখেছে তারা। নেতাকর্মীদের ঝুট বাণিজ্য, ঘাট দখল, হাট দখল, রাস্তার ইজারা, মাঠের ইজারা নিয়ে আর্থিক সংঘাতে যাবার প্রয়োজন হয়নি বিএনপি বা অন্য দলগুলোর সাথে।