Logo
Logo
×

রাজনীতি

বিএনপি নেতারা আতঙ্কে, আমলনামা গোয়েন্দার হাতে

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

বিএনপি নেতারা আতঙ্কে, আমলনামা গোয়েন্দার হাতে

বিএনপি নেতারা আতঙ্কে, আমলনামা গোয়েন্দার হাতে

Swapno

গত ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাসে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে ও দখলদারিত্বে আপোষ করে যেমন বিএনপির বহু নেতাদের উত্থান হয়েছে তেমনই পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে ছাত্র আন্দোলনে পুরো দমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীদের। 


ইতিমধ্যে খালি পকেটে থাকা নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের কেউ কেউ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলে ও বর্তমানে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিএনপি নেতাদের মাঝে। একের একে ফাঁস হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতাদের সকল অপকর্মের আমলনামা গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। 

সূত্র জানায়, পটপরিবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত গত ৮ মাসের নানা অপকর্মের আমলনামা প্রস্তুত থাকায় অনেকটাই চিন্তিত বিএনপি নেতারা। এরই মাঝে গতকাল ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাবশালী নেতা রিয়াদ চৌধুরীকে দলীয় ভাবমূর্তি নষ্টের দায়ে বিএনপির সকল পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার এবং  একই দিনে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। যার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে নেমে এসেছে এক আতঙ্ক। সকলেই বলছে রিয়াদের গ্রেফতার বিএনপি নেতাদের জন্য এক বিশাল সতর্ক বার্তা।


এদিকে পট-পরিবর্তনের পর আলাদিনের চেরাগের মতোই কয়েক মাসের ব্যবধানের কেউ কেউ হয়েছেন গাড়ি ও বাড়ির মালিক। তাছাড়া বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবকিছুই বিএনপি নেতাদের দখলে। নগরীর হাট-বাজার, ঘাট, বাস টার্মিনাল শুধু নয়, বিভিন্ন মালিক সমিতির কমিটি, চেম্বার অব কমার্স, ইয়ার্ন মাচেন্ট এসোসিয়েশন, ট্রাক স্ট্যান্ড, এমনকি বিসিক শিল্পনগরী, বালু মহাল, ড্রেজিংয়ের ব্যবসা ও থ্রি হুইলার স্ট্যান্ড, টেন্ডারবাজি, সরকারি দপ্তর নিয়ন্ত্রণ, থানা নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ স্ট্যান্ড, ফুটপাত, পানি সরবারহ, সরকারি জায়গায় দোকান, জায়গার লিজ বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্যে, 


সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন উপজেলার সকল টেন্ডার। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের অনেকেরে দেশের বাহিরে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠক করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সকল ব্যবসা বাণিজ্যেসহ তাদের দখলে থাকা সবই আপোষের মাধ্যমে বুঝে নিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে ডিস বাবুর ক্যাবল ব্যবসা ভাগ যোগের মাধ্যমে বিএনপি নেতারা নিয়ন্ত্রণ করছেন, অয়ন ওসমানের ইন্টারনেট ব্যবসা এটা ও ভাগযোগের মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। 


বিসিক শিল্পঅঞ্চল যা বিগত দিনে আজমেরী ওসমান ও শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রণে ছিলো সেটা ও বর্তমানে বিএনপি ও যুবদল, স্বেছাসেবক দল, ছাত্রদলের কয়েকগ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। তা ছাড়া ফতুল্লার কুতুবআইল, কাঠেরপুলের সকল গার্মেন্টস ও ডাইং ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদাবাজি, ঝুট নিয়ন্ত্রণসহ ফতুল্লার ৫টি ইউনিয়নের সবই নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপি। এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জের ইপিজেড থেকে শুরু করে ১০ টি ওয়ার্ডে সবই আওয়ামী লীগের সাথে আপোষ করে বিএনপির নিয়ন্ত্রণে। সদর থানার আওতাধীন সকল ব্যবসা বানিজ্যে, বন্দর উপজেলা ও থানার আওতাধীন সবই আপোষের মাধ্যমে বিএনপির নিয়ন্ত্রণে।


তাছাড়া আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপই সাবেক সাংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে আপোষ করে সব নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। রূপগঞ্জ দুই গ্রুপের হাতে সেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী মন্ত্রী গাজী আপোষে। ঠিক একইভাকে সোনারগাঁ নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগের আপোষে বিএনপির ব্যাপক অবস্থান। তা ছাড়া পটপরিবর্তনের পরপরই এই সকল উপজেলা ও থানায় আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও আগুন লাগানোসহ মামলায় ঢুকানোর কথা বলে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা আপোষ করেছেন ব্যবসা-বানিজ্যেসহ দখলদারিত্বে থাকা সবই।


তা ছাড়া ও চারপাশের জানা অজানা সবই বর্তমানে এককভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া গত ৯ মাসে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা ও উপজেলায় ঝুট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জাহাজ কেঁেট হজম, চাঁদা না পেয়ে গার্মেন্টস ও আওয়ামী লীগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুনসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির একাধিক গ্রুপের সংঘর্ষের দৃশ্যমান রয়েছে। যাকে ঘিরে অনেকের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন আবার অনেককে রাখা হয়েছে কেন্দীয় নজরদারিতে তা ছাড়া এর বাহিরে বিএনপির সকল নেতাকর্মীই বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারিতে ও রয়েছে।=


পটপরিবর্তনের বিএনপির নানান অপকর্মের ফল হিসেবে ২০২৪ সালের (১৭ সেপ্টেম্বর) দলীয় নির্দেশনা অমান্যর অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরসহ উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, পৌর, ওয়ার্ড ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করার পর এখন ও যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় দেওয়া হয়নি কোন কমিটি। তার কিছুদিন পরপরই ২৫ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। 


তার যুগের চিন্তার তদন্তের প্রেক্ষিতে বেড়িয়ে এসেছিলো জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের কুকর্ম। তিনি পটপরিবর্তনের পরপরই সন্ত্রাসী মন্ত্রী গাজীর মতো পুরো রূপগঞ্জ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ব্যাপক অপকর্ম চালিয়েছেন হয়েছে শত শত কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে সকল তথ্য গোয়ান্দা সংস্থার নিকট রয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গত (১ জানুয়ারী)  নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষকদলের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিলো। 

তা ছাড়া আওয়ামী লীগে নেতার পরিবারের কাছ থেকে মামলা বানিজ্যের টাকা চাওয়ার রেকডিং ফাঁস হওয়ায় বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণকে শোকজ করেছে নারায়ণগঞ্জ  মহানগর বিএনপি।


তা ছাড়া ও ২০২৪ সালের (২৯ সেপ্টেম্বর) বাস স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির অভিযোগে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আতাউর রহমান গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরবর্তীতে গত ২০২৪ সালের (১৫ অক্টোবর) চাঁদা দাবির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবো পৌর বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান পিন্টুকে গ্রেফতার করেছিলেন যৌথবাহিনী। তা ছাড়া ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ও থানায় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছিলেন চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে।


পটপরির্বতনের পর বহিস্কার হিসেবে রয়েছে , গত ২০২৪ সালের (৫ নভেম্বর) দলের ভাবমূর্তি নষ্টের দায়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য অকিলউদ্দিন ভূইয়া এবং সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন খোকন। 


২০২৪ সালের (১৪ ডিসেম্বর) “দলবল নিয়ে সাংবাদিক মিনহাজ আমানকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ইকবাল হোসেনের কর্মকাণ্ড দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। 


গত (২৩ জানুয়ারী) দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যুবদল নেতা আশরাফ ভূইয়াকে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম নয়ন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বহিস্কার করা হয়। গত (২০ মার্চ) দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রূপগঞ্জ থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম মিয়াকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। তা ছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ের পটপরিবর্তনের পর নারায়ণগঞ্জে ৫০ জনের কাছাকাছি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বহিস্কার হয়েছে বলে জানা গেছে।


বর্তমানে দখল দারিত্বসহ নানা অপকর্মে বিএনপির কারা কারা জড়িত তাদের সকলের তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী যে কোন সময় কঠিন এ্যাকশন জারি হতে পারে বলে যানা গেছে। সেই কঠিন এক্যাশনের ভিত্তি হিসেবে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর রিয়াদ চৌধুরীর গ্রেফতার ও বহিষ্কারাদেশ হচ্ছে বিএনপি নেতাদের জন্য একটি ম্যাসেজ। 


রিয়াদ চৌধুরী পরিচিতি হিসেবে বড় মাপের নেতা। এছাড়া ও নারায়ণগঞ্জে তার বিশাল প্রভাব ও বিশাল কর্মী বাহিনী ছিলো। এই রিয়াদ চৌধুরীর সাথে প্রশাসনের যেমন ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিলো তেমনইভাবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ও রিয়াদ চৌধুরীর সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে রিয়াদ চৌধুরী কোন মতে রেহাই পায়নি। এমনই নারায়ণগঞ্জে যে যে বিএনপি নেতা নানান অপকর্মের সাথে জড়িত অবস্থায় রয়েছেন কেউ রেহাই পাবে না বলে জানিয়েছে বিশস্ত সূত্র।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন