চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপি নেতা রিয়াদ চৌধুরী গ্রেপ্তার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপি নেতা রিয়াদ চৌধুরী গ্রেপ্তার
# বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার, কারাগারে প্রেরণ
দল থেকে বহিষ্কারাদেশের কয়েকঘন্টার মধ্যে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী এয়ারপোর্টে আটক হন। পুলিশের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হায়দার আলীর আদেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান।
যদিও তার আইনজীবী জামিন প্রার্থনা করলে সেটি না মঞ্জুর হয়। সকালে থাইল্যান্ড পালিয়ে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের একটি টিম রিয়াদ চৌধুরীকে তাদের হেফাজতে নিয়ে আসে। এবং ফতুল্লা মডেল থানার এসআই শামীম বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
এরআগে নারায়ণগঞ্জে কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া বিএনপি নেতা রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে থাইল্যান্ডে যাওয়ার পথে বিমানবন্দর থেকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ফতুল্লা অঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রিয়াদকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থী অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য রিয়াদকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রিয়াদের কথোপকথনের একটি অডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অডিও অনুযায়ী, আজাদ হোসেন নামের এক কারখানামালিকের কাছে চাঁদা চেয়েছেন রিয়াদ। চাঁদা না দিয়ে কারখানা খোলায় সেটি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, কারখানার মালিকের উদ্দেশে রিয়াদ বলছেন, ‘আপনি ফ্যাক্টরি খুলছেন কেন? ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরিয়ে দেব। আপনি শেখ হাসিনার কী হন? গুন্ডামি করলেন কয়দিন ধরে। আমি ওই সময় শুধু রানার জন্য আগুন ধরাতে দিই নাই। ফতুল্লায় কত ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরছে আপনারা তো দেখছেন। আপনি ফ্যাক্টরি খুললেন কেন?’ উত্তরে কারখানার মালিক আজাদ বলেন, ‘বাবা, কী করতে হবে বইল। তুমি যেভাবে বলবে সেভাবে করব। আমি কি তোমার কথার বাইরে গেছি বল?’
তখন রিয়াদ বলেন, ‘আপনি টাকা তো কবরে নিয়েযাবেন। আপনেরে টাকাসহ কবরে দিয়ে দেব। আপনি এখন ফতুল্লা আসেন। আপনি এখন আসবেন নাকি ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরিয়ে দেব?’ জবাবে আজাদ বলেন, ‘আচ্ছা আমি তোমার সাথে সাক্ষাৎ করব।’
রিয়াদ প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আমাকে বলেন কখন সাক্ষাৎ করবেন। কখন কবে দেখা করবেন, সেটা বলেন। কালকে রাতে যদি আগুন ফ্যাক্টরি পুড়ে ফেলে তখন বসে থাকতে পারতেন? দুই-চারটা বাড়ি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আগে আগুন ধরায় নাই? ধরছে কি না বলেন? সেলিম ওসমানের ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরছে। আর আপনি তো শামীম ওসমানের ছোট ভাই। আপনি আওয়ামী লীগার মানে আপনি তো বড় আওয়ামী লীগার। আপনি গুন্ডা পালেন মিয়া। আজকে বুধবার, আপনি কী বারে দেখা করবেন? এরপর সামনের বুধবার পর্যন্ত দেখব, তারপর কী করতে হয় করব।’ তখন আজাদ অনুনয় করে বলেন, ‘তুমি আমার বাপ লাগো। আমি তোমার ওপর নির্ভর করে আছি। তুমি বাবা একটু হেল্প কর।’
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, পোশাক কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ করেছিলেন এক ব্যবসায়ী। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপও ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে তিনি আর মামলা করতে রাজি হননি। ফলে ওই অডিও ক্লিপের সূত্র ধরে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।” ফতুল্লা মডেল থানায় রুজু হওয়া এ মামলায় কেবল রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকেই আসামি করা হয়েছে বলেও জানান জেলা পুলিশের শীর্ষ এ কর্মকর্তা।
এদিকে আদালতে রিয়াদ চৌধুরীকে নিয়ে আসার আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আদালতপাড়ায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা নিñিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলেন। কড়া নিরাপত্তা পাহারায় রিয়াদ চৌধুরীকে আদালতে তোলা হয় এবং সেখান থেকে কারগারে পাঠানো হয়।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ব্যবসায়ী ও জেলা বিএনপির সদস্য রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর ফোন আলাপের রেকর্ডকে ‘এডিটেড’ দাবি করেছেন আজাদ ডাইং এর মালিক ব্যবসায়ী আজাদ। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো অফিযোগ নেই। অফিযোগ নেই বলে আমি এসেছি। অডিও রেকর্ড ওইটা আমাদের না। এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়।’ গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘রিয়াদ চৌধুরী আমার ভাগিনা, আমার সম্মন্ধির ছেলে। ওর সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। কি হইছে আমি জানি না কিন্তু এক সাংবাদিক, তাকে আমি চিনি না। ভদ্রলোক গত দুই-তিনদিন আগে আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আপনার সাথে রিয়াদ চৌধুরীর কোন এক কথোপকথন আমার কাছে রেকর্ড আছে। এটা আমি ফাঁস করে দিবো। আমি বললাম, তুমি এটা নিয়ে আগে বাড়িয়ো না, এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার।
রিয়াদ আমার ভাগিনা, আমি তার ফুপা, এটা নিয়ে আগে বাড়িয়ো না। এটা নিয়ে যদি তোমার কোনো কথা থাকে তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে তুমি কথা বইলো। রিয়াদকে নাকি ওইটার প্রেক্ষিতে এখানে আনা হাইসে। এ জন্য আমি এখানে এসেছি যে, আমার সাথে তার কোনো দ্বিধা-দ্বন্ধ নাই।’ রেকর্ডের বিষয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি এটা দেখিনি। তবে এ বিষয়ে শুনে এখানে এসেছি। কল রেকর্ডটি পুরাপুরি সঠিক না। কিছু এডিটিং আছে। এটা দীর্ঘদিনের বিষয়। এটা প্রযুক্তির মাধ্যমে বানানো হইছে।’