নিবার্চনের পর নিজেদের কার্যালয় পুনরুদ্ধার করতে চান নেতারা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
নিবার্চনের পর নিজেদের কার্যালয় পুনরুদ্ধার করতে চান নেতারা
নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করতে গত ২০১৭ সালে বহুতল ভবন তৈরি করতে জেলা ও মহানগর বিএনপি কার্যালয়টি ভেঙে দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। এরপর নানান নাটকীয়ভাবে ভবন তৈরি হলে ও কার্যালয় করতে দেওয়া হয়নি কোন ফ্ল্যাট। যাকে ঘিরে প্রায় ৮ বছরের অধিক সময় ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির স্থায়ী কোনো ঠিকানা তথা কার্যালয় নেই।
অস্থায়ী কিংবা নামকাওয়াস্তে ব্যক্তিগত কার্যালয় দিয়েই চলছে তাদের কার্যক্রম। সেইসঙ্গে মূল দলের কার্যালয় না থাকায় অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোও অস্থায়ী অবস্থায়ই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তা ছাড়া গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পরে দেশ ত্যাগ করলে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে নিশচিহ্ন হয়ে পরে আওয়ামী লীগ। যাকে ঘিরে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যাঙের ছাতার মতো গড় তোলা বহু দলীয় অফিস ফেলে রেখে গেলে বর্তমানে সেগুলো দখলে নেয় ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তা ছাড়া ইতিমধ্যে থানা ও উপজেলা ভিত্তিক অফিস ও ইতিমধ্যে একে একে হতে শুরু করেছে। কিন্তু জেলা ও মহানগর বিএনপির সেই পুরনো কার্যালয় পুনরুদ্ধার বা স্থান পরিবর্তন করতে নতুন অফিস তৈরির কোন পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। যা নিয়ে বিএনপির বহু নেতাকর্মীদের ক্ষোভ থাকলে ও বিএনপির নেতাকর্মীরা তা নিয়েই এখন প্রায় চুপ। সকলেই দাবি করছেন নির্বাচনের পূর্বে জেলা ও মহানগর বিএনপির কোন অফিস হবে না। দল যদি দেশের জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসে তাহলে এরা কার্যালয় পুনরুদ্ধার বা স্থান পরিবর্তন করে কার্যালয় করবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসলেও নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কোনো স্থায়ী কার্যালয় করতে পারেননি দলের সেই সময়ের এমপি-মন্ত্রীরা। ২০০৯ সালে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃত্বে আসার পর তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে দোকান হিসেবে ইজারা নিয়ে ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় বিএনপির একটি কার্যালয় করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওই কার্যালয়েই বিএনপির কার্যক্রম চলে। তৎকালীন দায়িত্বে থাকা নেতারা সেই কার্যালয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। সেইসঙ্গে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকতো কার্যালয়টি।
পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কার্যালয় নিয়ে মামলায় হেরে যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১০ মার্চ বিএনপির কার্যালয় ভবন ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নতুন করে আর কার্যালয় নিতে পারেনি। এরইমধ্যে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বিদায় নেন।
জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্বে আসেন সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। একইভাবে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম এবং সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল। তা ছাড়া তাদের এই কমিটির মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কার্যালয়ের বিষয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা পরিলক্ষিত হয়নি। মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শহরের চারারগোপ এলাকার ফ্রেন্ডস মার্কেটে তার নিজ বাসার একটি ফ্লোরকে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। তবে জেলা বিএনপির শহরে বসার মতো কোনো কার্যালয় ছিল না।
এদিকে, কার্যালয় না থাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরমুখী হয়ে পড়েন। দলীয় কোনো কর্মসূচিতেই তাদের রাজপথে দেখা মিলতো না। এরপর নেতাকর্মীদের রাজপথে ফেরাতে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন। আর এতে আহ্বায়ক করা হয় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে এবং সদস্য সচিব করা হয় অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে। অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘর থেকে বের হয়ে রাজপথে ফেরেন। কিন্তু অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্ব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর ওই কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সদস্য সচিব করা হয় গোলাম ফারুক খোকনকে। সেইসঙ্গে চলতি বছরের ১৭ জুন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম ফারুক খোকনের নাম ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে কোনো কার্যালয় নেই।
এর ফলে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এসব বিবেচনা করে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় অস্থায়ীভাবে জেলা বিএনপির কার্যালয় করা হলে ও বেশির ভাগ নেতাকর্মীই সেখানে যেতে রাজি না থাকায় এটা প্রায় বিলুপ্ত। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে জেলা বিএনপির সেই কমিটি বিলুপ্ত করে অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে আহ্বায়কসহ ৩৩ সদস্য বিশিষ্টি উন্নতি কমিটি হলে জেলা বিএনপির সেই সিদ্ধিরগঞ্জের অস্থায়ী কার্যালয়বিলীন হয়ে পরে।
তা ছাড়া মহানগর বিএনপি তাদের নিজস্ব চেম্বারের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। নয়া কার্যালয়ে নেই কোন উদ্বেগ। কার্যালয় বিষয়ে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ হলে তারা বলেন নির্বাচনের আগে তারা কোন কার্যালয় খুলবেন না। নির্বাচনের পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় কার্যালয় তৈরির উদ্বেগ ও উদ্ভোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তা ছাড়া গত ৫ আগষ্টের পর গত ৮ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় অবস্থিত সেই সিটি করপোরেশনের বিল্ডিংয়ে বিএনপির নতুন কার্যালয় স্থাপনের কাজ চলমান দেখা যায়।
এ সময় কার্যালয়ের সামনে জাকির খানের ছবি দিয়ে ব্যানার টাঙানো হয় সেখানে লিখা রয়েছে জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়। তা ছাড়া দলীয় নানান পোগ্রাম ও সেই বিল্ডিংয়ে নিজে করে থাকেন জাকির খান বলয়ের নেতাকর্মীরা। যাকে ঘিরে অনেকের মাঝে প্রশ্ন উঠছে বিএনপির এই পুরনো অফিস কি জাকির খান এককভাবে নিজ দখলে নিয়েছেন না তো।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কার্যালয় নিয়ে কথা বলেছি আমরা শীগ্রই কার্যালয় নিয়ে আলোচনা করবো কিভাবে আমাদের ডিআইটির এই পুরনো কার্যালয় পুনরুদ্ধার করা যায়।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, নির্বাচনের পূর্বে আমরা দলীয় অফিস নিয়ে ভাবছি না। বর্তমানে আমরা সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি নির্বাচনের পর দলীয় কার্যালয় পুনরুদ্ধার বা নতুন অফিস করা যায় নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষেই হবে ইনশাআল্লাহ।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা বর্তমানে দলীয় সাংগঠনিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। এ সময় কোন সাংঘাত হোক বা দলের নাম খারাপ হোক তা আমরা চাই না। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বর্তমানে ব্যক্তিগত অফিসেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ইনশাল্লাহ নির্বাচনের পর দলীয় অফিস পূর্ণউদ্ধার বা স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে ভালো একটি স্থায়ী জায়গায় আনার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব যুগের চিন্তাকে বলেন, শহরের প্রানকেন্দ্রে আমাদের সেই পুরনো অফিস পূর্ণউদ্ধারের কাজ চলছে। আমরা আমাদের পুরনো এই ঐতিহ্যেবাহী অফিসই জেলা ও মহানগর কার্যালয় নতুন করে গঠন করবো ইনশাআল্লাহ।
জেলা বিএনপির ১নং সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন যুগের চিন্তাকে বলেন, গত ২০২২ সালে জেলা বিএনপির দায়িত্বে আসার পর আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন ঘোষণা দিয়েছিলেন দ্রুত আমরা একটি জায়গা ব্যবস্থা করে জেলা বিএনপির কার্যালয় করবো। এর মধ্যে নানান সময় নানান আন্দোলন চলমান থাকা ছিলো। পরবর্তীতে জুলাই-আগষ্টের অভ্যুত্থান হলে এর পরে আমরা দুইজন মিলে ডিসিশন নেই।
আমাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলেই আমরা জাগয়া দেখে অফিসে খুলে তা উদ্ভোধন করবো। কারণ এখন তো আল্লাহর রহমতে কোন বাধা নেই। কিন্তু এর পরপরই কমিটি ভেঙে দেওয়া হলো। যাকে ঘিরে সেই কার্যালয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। এখন বর্তমান জেলা বিএনপিতে যারা দায়িত্বে রয়েছেন এরা কি পুরনো সেই ডিআইটির অফিস পুনরুদ্ধার করবেন নাকি নতুন আলাদাভাবে জেলা বিএনপির অফিস করবেন সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।


