না.গঞ্জ-৪ আসন আমার সাজানো বাগান, বাকিটা দলের সিদ্ধান্ত : মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
না.গঞ্জ-৪ আসন আমার সাজানো বাগান, বাকিটা দলের সিদ্ধান্ত : মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও জেলা বিএনপির ১নং সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন , আমার নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ-৪। আর নির্বাচনকে ঘিরে মূলত আমি এটা নিয়েই বেশি কাজ করছি। কারণ এই আসনটি আমার সাজানো বাগান। এই আসনের এমন কোন ঘর-বাড়ি নেই, যেখানে আমার শুভাকাঙ্খী নেই। যাকে ঘিরে আমার প্রথম পছন্দই নারায়ণগঞ্জ-৪ আমার নির্বাচনী এলাকা।
এর বাহিরে যেহেতু আমি রাজনীতির সাথে যুক্ত সেখান যে দলের রাজনীতি করি সেই দলের নির্দেশনা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার মতো সক্ষমতা আমার সৃষ্টি হয়েছে। সেই পরিলক্ষিতে দল আমাকে যেখানে দায়িত্ব দিবে, সেখানেই কাজ করার জন্য আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছি, আর দলের সিদ্ধান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত। গতকাল বুধবার (৯ জুলাই) দৈনিক যুগের চিন্তাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংদস্য বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আমার রাজনীতি শুরু হলে ও পরবর্তীতে সমগ্র জেলায় বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর সারা জেলায় রাজনীতি করেছি। তা ছাড়া আমি সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের দুই দুই বারের চেয়ারম্যান ছিলাম, ফতুল্লা থানা ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা-শহর থানা নিয়ে দেশের সর্ব বৃহত্তম সদর উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলাম। পরবর্তীতে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি।
তা ছাড়া এই আসনে রাজনৈতিক ও সামাজিক দুটো কাজই করার চেষ্টা করেছি। যাকে ঘিরে এই আসনের জনগণের সাথে আমার সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে আমার শুভাকাঙ্খী ও পরিচিত জন এবং দলীয় নেতাকর্মী রয়েছে। এদিকে আমি কিছুদিন আগমুহুর্ত্ব পর্যন্ত জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি আবার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যের দায়িত্বে আছি। যাকে ঘিরে শুধু নারায়ণগঞ্জে নয় আমার কর্মক্ষেত্র সারা বাংলাদেশেই।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, আমার রাজনৈতিক উত্থান যার নেতৃত্বে আমি রাজনীতি শুরু করেছি তিনি মরহুম আব্দুল মতিন চৌধুরী সাহেব। তিনি বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির মুরুব্বি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এখন তিনি নেই। যাকে ঘিরে বর্তমানে কোন পরামর্শ ছাড়াই যে যার যার নির্বাচনী এলাকা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। তা ছাড়া বিএনপি যেহেতু রাজনৈতিক একটি বড় সেই দলে প্রতিটি আসনেই একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী রয়েছেন। সেই সাথে সামগ্রিকভাবে জেলার কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে আমি নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচিত করা যায় সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করছি এবং আশা করছি আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে ধানের শীষের কান্ডারীরাই নিবার্চিত ও জয় লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৪ আসনের নির্বাচন এবং পথচলা নিয়ে গিয়াসউদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের পাশ^বর্তী এলাকা সোনারগাঁ এক সময় সিদ্ধিরগঞ্জকে-সোনারগাঁ থানার সাথে সম্পৃক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৩ নির্বাচনী এলাকা গঠন করা হয়েছিলো। সেই সময় আমি সোনারগাঁয়ের প্রত্যোকটি অঞ্চলে সেখানকার বিএনপি নেতাদের সাথে জনগণের ধারে ধারে গিয়েছি। উদ্দেশ্যে হলো এই আসনে আমাকে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটা পরিবর্তন হয়। কিন্তু সেখানে দফায় দফায় প্রচারণার ক্ষেত্রে সকলের সাথে একটি আলাদা সম্পর্ক গড়ে উঠে যাকে ঘিরে সেই আসনের ভোটাররা ও দলীয় নেতাকর্মীরা চায় আমি সেই আসনে নির্বাচন করি।
আর সংবিধান অনুযায়ী বিগত দিনে ৫টি আসনে নির্বাচন করা যেত এখন ৩টি এর মধ্যে করা যায়। যে কারণে আমি সেখানে কাজ করছি আর আমাকে এই আসনের এমপি হিসেবে দেখতে যাদের যাদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তাদেরকে আমি মূল্যায়ন করি এবং সম্মান দেই। এখন আমার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিবে আমাকে নারায়ণগঞ্জ-৩ বা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে কোথায় মনোনয়ন দিবে।
আর সোনারগাঁ একটি ঐতিহ্যেবাহী এলাকা সেখানে যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন এবং নেতাকর্মীদের সম্মান করে, জনগণের সাথে ভালো আচরণ ব্যবহার করে, এলাকায় উন্নয়ন করতে চিন্তা-পরিকল্পনা থাকে এমন ব্যক্তি সেই আসনে জনগণ চায়। আর আগামীতে যে পালামেন্ট আসবে সেখানে যোগ্যরাই বেশি থাকবে বিএনপির কাছে এমনই প্রত্যাশা রয়েছে দেশবাসীর।
সর্বশেষ ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াসউদ্দিন বলেন , যখন আমি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম। সে সময় আমার স্বপ্ন ছিলো (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) পৌরসভায় উন্নীত করবো। সে সময় আমি উদ্যোগ গ্রহণ করলাম। সে সময় ফতুল্লায় আমার যে সকল বন্ধু-সহকর্মী ও কিছু মুরব্বি চেয়ারম্যান-মেম্বারের দায়িত্বে ছিলেন। তারা অনেকেই আপত্তি করলো ফতুল্লাকে ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীনই রাখা হবে তারা পৌরসভার আওতায় আনবেন না। তাদের কড়া যুক্তি হলো পৌরসভা করলে ট্যাক্স বেড়ে যাবে সকলের কষ্ট হবে।
কিন্তু আমি তাদের অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে এটা তো সেবার বিনিময়ে ‘ফি’ নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া পৌরসভার মাধ্যমে যে গ্রামীন উন্নয়ন হবে এটা তো ইউনিয়ন পরিষদ দ্বারা সম্ভব নয়। আর যথনই পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন হবে সে সময় উন্নয়ন অনেকটাই বেড়ে যাবে সেই বিপরীতে ট্যাক্স দিতে হবে কিন্তু কিছুতেই তারা মানলেন না, যাকে ঘিরে আমি ব্যর্থ হলাম। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর সাথে কথা বলে তাদের মানাতে সক্ষম হয়েছি ।
যাকে ঘিরে সিদ্ধিরগঞ্জ এখন সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত হয়ে যায়। আর বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জের মতো ফতুল্লাকেও সিটি কর্পোরেশনের আওতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আনতে আমরা কাজ করছি। কারণ ফতুল্লা শিল্পসমৃন্ধ একটি ব্যবসায়ী এলাকা। তা ছাড়া ঢাকার পাশর্^বর্তী এলাকা। তা ছাড়া জেলা পর্যায়ের সকল কার্যালয় এখানে আর এটাই সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হবে না, এটা তো হতে পারে না।
যাকে ঘিরে আমি সরকারের কাছে দাবী করেছি, লোকাল সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বরাবর লিখছি এবং যোগাযোগ করছি যেন অবিলম্বে ফতুল্লাকে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা জন্য। আর যেদিন ফতুল্লাকে সিটি কর্পোরেশনের অর্ন্তভুক্ত করা হবে সেদিনই ফতুল্লাবাসীর ড্রেনেজ সমস্যা, জলাবদ্ধতার সমস্যা, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। তা ছাড়া আপনারা লক্ষ্য করতে পারবেন বন্দর-সিদ্ধিরগঞ্জ সিটি কর্পোরশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সমস্ত রাস্তা-ঘাট পাকা হয়ে গেছে, কালভাট ব্রিজ করার জায়গা নেই, এখন অন্যান্য উন্নয়নের দিকে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।
আর এই সকল দিক দিয়ে ফতুল্লা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। আর ফতুল্লাকে দ্রুত সিটি অন্তভুক্ত না করলে ১০০ বছরে ও ফতুল্লাবাসীর সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব নয়। আর আমি বর্তমানে নানাভাবে ফতুল্লাকে সিটি কর্পোরেশনের অন্তভুক্ত করতে কাজ করছি আশা করছি দ্রুত আমার এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।


