Logo
Logo
×

রাজনীতি

জামায়াতে ক্ষুব্ধ বিএনপি

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

জামায়াতে ক্ষুব্ধ বিএনপি

জামায়াতে ক্ষুব্ধ বিএনপি

Swapno

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জামায়াতে ইসলামী ঘটনাটিকে ‘রাজনৈতিক রূপ’ দিয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি নেতারা। এতে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ দলটির নেতাকর্মীরা। যাকে ঘিরে বর্তমানে জামায়াতের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়েত-শিবির কে নিয়ে নানানভাবে তুলোধুনো করছে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।


এ দিকে বিএনপি মনে করছে, মূলত আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ইমেজ ক্ষুন্ন করতে জামায়াত নেতারা পরিকল্পিতভাবে নানান মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে নেমেছেন। একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গত ৫ আগস্টের পর যেখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের ভিত্তিতে সামনে এগোনো দরকার।


সেখানে ইসলামী দু-একটি দল রাজনীতিতে বিভেদ তৈরিতে কাজ করছে। এটি শুভ লক্ষণ নয়। তাই জামায়াতের সঙ্গে এবার ‘নির্বাচনী জোট’ গঠনের পরিকল্পনা না থাকলেও ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখতে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে দীর্ঘদিনের পুরোনো এই মিত্রের কাছ থেকে ‘রাজনৈতিক দলসুলভ’ আচরণ প্রত্যাশা করে বিএনপি।


বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ২৪ বছরের মিত্রতা। দীর্ঘ এই সময়ে সম্পর্কে উত্থান-পতন হলেও জোট ভাঙেনি। আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে ১৯৯৯ সালে চার দলীয় জোট গঠিত হয়। এ জোটের প্রধান দুটি দল ছিল বিএনপি ও জামায়াত। ২০০১ সালে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকার গঠন করে। এরপর আবার বিরোধী দলে যায়।


পরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে চারদলীয় জোট সম্প্রসারণ করে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি, যা পরবর্তী সময়ে ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করে বিএনপি।


তবে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের গতি ও ব্যাপ্তি বাড়াতে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর অনানুষ্ঠানিকভাবে ২০-দলীয় জোট ভেঙে দেয় বিএনপি। পরবর্তী সময়ে জোটের দলগুলো বিভক্ত হয়ে ১২ দলীয় জোট এবং ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ গঠিত হয়। তবে জামায়াত কোনো জোটে ছিল না।


ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন আরম্ভ হলে শুরুতে দু-একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিল জামায়াত। তবে পরে দলটি নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এককভাবে আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিল। এমনকি বিএনপির সঙ্গে তখন জামায়াতও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল।


এরপর গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি ও জামায়াত আলাদা পথে হাঁটতে শুরু করে। দুই দলেরই এখন লক্ষ্য আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করা। এমন অবস্থায় নানা ইস্যুতে দল দুটির মধ্যে প্রায়ই টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে।


জামায়াত জাতীয় এর আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন চাইলেও এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। দলটি আগে জাতীয় নির্বাচন এবং বিদ্যমান ব্যবস্থায় সেই জাতীয় নির্বাচন চায়। এমন টানাপোড়েনের মধ্যে সর্বশেষ মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সম্পর্কের দারুণ অবনতি ঘটে। এদিকে বর্তমানে জামায়েতের বিরুদ্ধে একাট্টা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। বর্তমানে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দেশের পরিস্থিতির বিরল অবস্থা বৃদ্ধমান রয়েছে।


জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেছেন, গত বছর এ দিনগুলোতে স্বৈরাচার থেকে ফ্যাসিস্টে পরিণত হওয়া শেখ হাসিনা দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। আবু সাঈদ পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। কী দুঃসাহসী যোদ্ধা ছিলেন আবু সাঈদ। আমরা ১৯৭১ সালে এই নিরস্ত্র জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লাঠিসোঠা, দা-বটি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।


এবং এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। আবার ৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ্য হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং এরশাদকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।আবার হাসিনা যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন আমরা ১৫ বছর ধরে বলেছি হাসিনা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। একটি অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বলেছি। বলেছি, জনগণ যদি আপনাকে ভোট দেয় তাহলে আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকেন, আমাদের কোন আপওি নাই। কিন্তু সে আমাদের কথা শোনে নাই।


তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন করেছি, প্রতিবাদ করেছি, বিক্ষোভ করেছি, হরতাল করেছি, অবরোধ করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শোনে নাই। তিনি আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে, বিক্ষোভ-মিছিলে বাধা দিয়েছেন, গুলি করেছেন। আমাদেরকে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে কিছু নতুন নতুন দল যারা বিগত দিনে নানাভাবে আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট ছিলো তারা এখন বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে আমরা তা মেনে নিবো না।বিএনপির উপরে কোন প্রকারের আঘাত আসলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পরবো।



মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, দেশে কিছু ইসলামিক দল রয়েছে যারা বিগত ১৫ টি বছর আওয়ামী লীগের সাথে লেজুর ভিত্তিক ওই সরকারকে টিকে থাকার জন্য সহায়তা করেছে। সেই জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোট আজকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিতর্কিত করার জন্য যাতে করে বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র উপহার দিতে না পারে এবং একটি সুখী সমৃদ্ধিশীল বাংলাদেশ গড়তে না পারে তার চক্রান্ত শুরু হয়েছে।


তিনি বলেন, সেই চক্রান্ত হলো তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করা ও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কুচ্ছা রটানো। আজকে তারেক রহমান তো দেশে নাই তার জন্য তারা তাকে টার্গেট করেছে। সেটা পরিস্কার তারেক রহমানের একটাই দোষ সেটা হলো বাংলাদেশের মানুষ তারেক রহমানকে ভালোবাসে। জিয়া পরিবারকে ভালবাসে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভালোবাসে।


তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছে এদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সেই সুষ্ঠ নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দিবে সেই ক্ষমতায় আসবে। যদি আমাদেরকে ভোট দেয় তাহলে আমরা ক্ষমতায় আসব আর যদি ওই সাম্রাজ্যবাদীদেরকে ভোট দেয় তাহলে তারা ক্ষমতায় আসবে।


কিন্তু তারা দেখছে জনগণ তাদের প্রতি কোনো আস্থা ও ভালোবাসা নেই। আর কারো নেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তারা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আর সেই চক্রান্ত দাঁতভাঙ্গা জবাব এই দেশের মানুষ দিবে ইনশাল্লাহ। আমরা চাই এই অন্তবর্তী কালীন সরকার সুন্দর ভাবে দেশ পরিচালনা করুক। এদেশের জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুক। তার জন্য কিন্তু এই সরকারকে আমরা সব ধরনের সহায়তা করেছি।


তিনি বলেন, কিন্তু সেই সহায়তা নিয়ে ওই জামাত ও ইসলামী দলগুলো এবং এনসিপির ওই চিলড্রেন পার্টি গুলো আমাদেরকে দুর্বল মনে করে বিএনপির গাড়ি চেপে বসার চেষ্টা করছে। একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব কিন্তু এমনিতে হয় নাই। এই জুলাই বিপ্লবে বিএনপির সবচেয়ে বেশি অবদান। এটাকে যদি আমরা ১০০ ভাগে ভাগ করি তাহলে ৭০ ভাগই হলো বিএনপির ।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন