না.গঞ্জে দুটি আসনে বিএনপি প্রার্থীদের গ্রুপিং চরমে
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
না.গঞ্জে দুটি আসনে বিএনপি প্রার্থীদের গ্রুপিং চরমে
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারীর প্রথমার্ধে হতে পারে বলে ঘোষণা থাকলে ও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে নানান তামাশা। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা ফেব্রুয়ারী টার্গেট করেই মাঠে নেমেছে। সে দিকে লক্ষ্য রেখে নির্বাচনী নানা কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
এই পর্যায়ে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে দলটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জে একে একে জমে উঠা শুরু করেছে নির্বাচনী পরিবেশ। মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই বর্তমানে মাঠে সরব রয়েছে এবং একের পর এক দলীয় পোগ্রাম বা নিজস্ব পোগ্রামে নির্বাচনী বিষয়ে আলোচনা করছেন। বিএনপি নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ১৮০ দিনের মধ্যে কি কি কাজ করবেন তারেক রহমানের সেই দিকে নির্দেশনা বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা জনগণের মধ্য পৌঁছে দিতে কাজ করছেন।
তা ছাড়া ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনে নির্বাচনী আমেজের মতোই নানান উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই দুই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন ৩ জন ব্যবসায়ী ও ৫ জন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা। যাকে ঘিরে সেই নেতা ও ব্যবসায়ী নেতারা নানাভাবে সভা-সমাবেশ, অনুদান, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুটক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, ওয়ার্ড-ইউনিয়ন, থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা ও মতবিনিময়সহ পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মাধ্যমে এই দুই আসনের নির্বাচনী প্রচারণা চাঙা রেখেছেন।
তা ছাড়া বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনকে ঘিরে নানান সমীকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে (সদর-বন্দর) ৫ আসনে বর্তমানে মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল রাজীব বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হলে ও এই আসনে বর্তমানে আরো দুই ব্যবসায়ী নেতা প্রার্থী হতে চাইছেন। যাদের মধ্যে বর্তমানে চরম আকারে মাঠে রয়েছেন মডেল গ্রুপের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
যিনি বর্তমানে মাঠে রয়েছেন এবং মহানগর বিএনপির কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্যসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নসহ মহানগর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল নেতাদের নিয়ন্ত্রণ তিনি তার হাতে নিয়ে নিয়েছেন। যাকে ঘিরে সংগঠনে সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক গ্রুপিং। তা ছাড়া আরেক প্রার্থী আবু জাফর মোহাম্মদ বাবুল ইতিমধ্যে প্রার্থী হিসেবে নিজে ঘোষণা না দিলে ও বর্তমানে মাঠে নেমেছেন তিনি। আর তিনি ও একটি বিএনপির গ্রুপকে তার পাশে নেওয়ার টানছেন।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বর্তমানে আলোচনায় রয়েছে দুই জন এই আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও অন্যদিকে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ শাহ আলম। এদিকে বর্তমানে ৪ আসনে প্রার্থীতা করতে এরা দুই জন ব্যাপকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন লবিং। তা ছাড়া (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে) এই দুই নেতার ব্যাপক প্রভাব থাকায় তারা যার যার মতো করে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এদিকে গিয়াস উদ্দিন বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নিজের পদচারণা করলে ও বর্তমানে তার মূল চাওয়া নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন।
সেটাকে নিয়েই নিতি কাজ করছেন তা ছাড়া এটাকে তিনি সাজানো বাগান আখ্যা দিয়ে এই আসনে বার বার মনোনয়ন চাইছেন। তা ছাড়া ইতিমধ্যে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে তিনি বাড়িয়েছেন তার পদচারনা, আলোচনা করছেন নেতাকর্মীদের সাথে। তা ছাড়া ইতিমধ্যে ৫ আসনের মতোই ৪ আসনে একজন ব্যবসায়ী সাবেক বিএনপি নেতা বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আলহাজ¦ শাহ আলম নিজের বলয় ভারী করতে বর্তমানে থানা পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা শুরু করেছেন।
ইতিমধ্যে কুতুবপুর ইউনিয়ন ও বক্তাবলী ইউনিয়ন বিএনপি নেতাদের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন নানান আলোচনা। আগামীতে আরো ইউনিয়ন নিয়ে আলোচনা সভা করার প্রস্তুতি করছেন। এভাবে বর্তমানে ধীরে ধীরে আগানোর চিন্তা-ভাবনা করছেন তিনি। কিন্তু ইতিমধ্যে ফতুল্লায় তার আলাদা বলয় থাকলে ও সিদ্ধিরগঞ্জে তিনি পুরোই দুর্বল।
সেদিক দিয়ে গিয়াস উদ্দিন উভয় থানা শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে এই আসনে বিগত দিনের মতো এবার ও নির্বাচন করতে চাইছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, তিনি ও বর্তমানে নানাভাবে নানান কৌশলে ভোটারদের ধারে ধারে যাচ্ছেন। তা ছাড়া বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে চালিয়ে ফেলছেন নির্বাচনী প্রচারণা।
কিন্তু দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক যারা বিগত দিনে রাজপথে কিংবা মিটিং মিছিল বা সক্রিয় রাজনীতি না করলেও বিএনপির বর্তমান সুসময়ে বিএনপির রাজনীতিতে ফায়দা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপি মনা ব্যবসায়ী নেতারা। যা নিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করা বিএনপি নেতারা ফুঁসে উঠেছে।
সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নেমেছেন বেশকজন ব্যবসায়ী নেতা। যদিও এসব ব্যবসায়ী নেতারা অতীতে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি না করলেও রাজনীতির পেছনে তারা ডোনেট করেছেন অঢেল অর্থ। দলের কার্যক্রম সক্রিয় রাখতে তারা অর্থনৈতিকভাবে সহযোগীতা করেছেন সেটাও সত্য। কিন্তু সেই অবদানের সুযোগে বিএনপিতে এসে এমপি মন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে চলে আসছেন সামনের সারিতে। অনেকেই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও অতীতে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে ব্যবসায়িক কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ আলোচনায় আছেন মডেল গ্রুপের মালিক মাসুদুজ্জামান মাসুদ ও প্রাইম গ্রুপের মালিক আবু জাফর আহমেদ বাবুল। এদের মধ্যে মাসুদ এক সময় বিএনপির যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন সেই বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ব্যবসা ঘোছাতে বিএনপির রাজনীতি থেকে সটকে পড়েন। কিন্তু সর্বশেষ ১৫ হাজার মানুষের সাথে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ভূরিভোজের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করার মন্তব্য ব্যক্ত করেন তিনি।
অপর দিকে আবু জাফর আহমেদ বাবুল বিএনপি মনা ব্যবসায়ী নেতা। গত পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ নগরী সহ ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার ফেস্টুন ব্যানারে প্রচারণা চালিয়েছেন আবু জাফর আহমেদ বাবুল। তিনি প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে। দুজনই নির্বাচনের আভাস দিলেও তারা কোন আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সেটা পরিষ্কার করেননি এখনো।
তারা বিএনপির রাজনীতি সরাসরি না করায় রাজপথের নেতাকর্মীরা বিব্রত হচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছে, মনোনয়ন যুদ্ধে এরা বিএনপির হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশা করবেন এটা নেতারা কখেনোই আশা করেনি। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন আগামী নির্বাচনে তিনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পাবেন। ২০০৯ সালে শুধুমাত্র ফতুল্লা এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে করে প্রয়াত অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে পরাজিত হোন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন শাহআলম।
তবে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদে বহাল থাকেন। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় না থাকলেও ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের পুর্ব পর্যন্ত রাজনীতির আলোচনায় ছিলেন শাহআলম। পরবর্তীতে আবারো তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে বিএনপিতে তিনি তার বলয়ের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে নির্দেশনা ও ডোনেশন করলে ও রাজপথে অনেকটাই নিষ্কিয় ভূমিকায় থাকায় শাহ-আলমে ও ক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ী অনেকেই। তা ছাড়া বর্তমানে একে একে তৈরি হচ্ছে নানা গ্রুপিং এতেই সৃষ্টি হচ্ছে নানান বিভাজন।
এদিকে গতকাল নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভেদাভেদ ভূলে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।
ইতিমধ্যে ৩ যোগ্যতা সম্পূর্ণ ব্যক্তিরাই পেতে পারে বিএনপি মনোনয়ন যেখানে উল্লেখ রয়েছে, যাকে মনোনয়ন দিলে সাধারণ ভোটাররা খুশি হবে, এমন প্রার্থীর হাতেই নির্বাচনি টিকিট দেবে বিএনপি। তবে এক্ষেত্রে মৌলিক নীতি অনুসরণ করা হবে। এজন্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি হিসাবে তিনটি যোগ্যতাকে অন্যতম মানদণ্ড হিসাবে সেট করা হয়েছে।
এগুলো হলো-গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই-সংগ্রামে দেশ ও দলের যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন, দ্বিতীয়ত, যিনি সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং এলাকার জনগণের কাছে একজন ভালো মানুষ হিসাবে সুপরিচিত। তৃতীয়ত, ভোটের রাজনীতিতে যিনি তার নির্বাচনি এলাকায় বেশি জনপ্রিয়।
দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এমন মানদণ্ডের কথা নিশ্চিত করেছে। বিএনপির এই ঘোষিত ৩ যোগ্যতা সম্পূর্ণের মধ্য ব্যবসায়ী নেতারা কেউ পরে না তা সুস্পষ্ট। যাকে ঘিরে বর্তমানে হাইকমান্ডে যোগ্যরাই ‘গুড বুকে’ ও কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির কিছু ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের বিভাজনকারী নেতকার্মীরা দলে গ্রুপিং করে সৃষ্টি করতে চাইছেন নানান বিশৃঙ্খলা এমনটাই বলছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতারা।


