নির্বাচনের আগে টেবিল মনোনয়ন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ক্লিন ইমেজের শতাধিক নেতাকে নির্বাচনি প্রস্তুতির জন্য গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভিডিও কলে অংশ নিয়ে যার যার এলাকায় কাজ করার জন্য নির্দেশ দেন বলেও জানা গেছে। চূড়ান্ত যাচাইবাছাই শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ৩০০ প্রার্থীকেই এ সবুজ সংকেত দেওয়া হবে।
এমন এক সংবাদ প্রচারের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেল্কিবাজি শুরু করেছেন। অনেক প্রার্থীদের চ্যালারা নিজ নিজ বলয়ের প্রার্থীদের নাম ও আসন লিখে সাথে লিখছেন "আলহামদুলিল্লাহ" যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীদের মাঝে। বর্তমানে অনেকেই বলছে কার মনোনয়ন ফাইনাল হলো কে কার পিছনে যাবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
একই সাথে বলয়ে বলয়ে নয়া মেরুকরণ সৃষ্টির আভাস ও পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসন জুড়ে একাধিক প্রার্থী বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলে ও দিন শেষে যোগ্যরাই মূল্যায়িত হবে বলে শোনা যাচ্ছে। তা ছাড়া বর্তমানে যোগ্য প্রার্থীদের মনোবল নষ্ট করতেই সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেল্কিবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন নানা চক্র।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস টার্গেট করে নির্বাচনি প্রস্তুতি পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। ইতোমধ্যে নির্বাচনি চূড়ান্ত কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীদের আমলনামাও পৌঁছে গেছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। প্রাথমিক যাচাইবাছাইয়ের পর তিনি ডিটেইলস তথ্য নিচ্ছেন তাঁদের সম্পর্কে এবং যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া শুরু করেছেন।
দলের হাইকমান্ড অত্যন্ত গোপনে তিন স্তরে যাচাইবাছাই কার্যক্রম চালিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে তিনটি টিম কাজ করেছে বলে জানা গেছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্ব স্ব এলাকায় কার জনপ্রিয়তা কতটুকু তা জানতে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থীসহ আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা ধরে এ জরিপ চালানো হয়। এজন্য প্রার্থীদের অজান্তে অত্যন্ত গোপনে সরেজমিন জরিপ চালান একাধিক জরিপ সংস্থার সদস্যরা।
তা ছাড়া ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের জন্য যাদের প্রস্তুতি ছিল কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে অংশ নেননি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পেয়েছিলেন তাঁদেরও এ জরিপের অংশ করা হয়। তবে যাদের এলাকা ও এলাকার মানুষের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক আছে এবং শিক্ষিত, এনারজেটিক, যোগ্য, ত্যাগী ও দলের জন্য ডেডিকেটেড, বিশেষ করে দেশব্যাপী নতুন ভোটাররা যে প্রার্থীকে বেশি পছন্দ করেন এমন ব্যক্তিদেরই এবারের মনোনয়নে অধিক প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
দলের নীতিনির্ধারক মহল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র আরো বলছে, মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বর্তমান অবস্থানও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যাকে মনোনয়ন দিলে সাধারণ ভোটাররা খুশি হবেন, এমন প্রার্থীর হাতেই এবার নির্বাচনের চূড়ান্ত টিকিট তুলে দেবে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে কতিপয় মৌলিক নীতি অনুসরণ করা হবে। এজন্য দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি হিসেবে তিনটি যোগ্যতা অন্যতম মানদ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে।
সেগুলো যথাক্রমে ১. গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই-সংগ্রামে দেশ ও দলের জন্য যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ২. যিনি সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং এলাকার মানুষের কাছে একজন ভালোমানুষ হিসেবে সুপরিচিত। এবং ৩. ভোটের রাজনীতিতে যিনি তাঁর এলাকায় বেশি জনপ্রিয়। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এমন মাপকাঠির কথা নিশ্চিত করেছেন।
এই যোগ্যতা সম্পূর্নতায় বিএনপির নেতাকর্মীদের হিসেবে চিহ্নিত যারা আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আলোচিতদের মধ্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল রাজীব, সাবেক সাংসদ আবুল কালাম, শিল্পপতি প্রাইম বাবুল এই নামগুলো বর্তমানে আলোচনা উঠছে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে রয়েছে, সাবেক সাংসদ আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ¦ শাহ-আলম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ আলোচনা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ব্যাপক আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান আলোচনায়, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন,
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ইতিমধ্যে জনপ্রিয় মুখে সেই আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন যদি তিনি এই আসনে নির্বাচনে অংশ না নেয় তা হলে রেজাউল করিম ও আজহারুল ইসলাম মান্নান, ইমতিয়াজ বকুল, আপেলের মতো প্রার্থীরা মনোনয়ন যুদ্ধে পা দিবেন। এর বাহিরে যারা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হবেন সকলেই ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়ে লুটপাট ও দখলদারিত্বের টাকার ভার সইতে না পেরে প্রার্থী হয়ে টাকা খরচ করতে আসতে চাইছেন আর কিছুই নয়।
তা ছাড়া গতকাল সামাজিক ফেসবুক জুড়ে গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভেল্কিবাজি করে "আলহামদুলিল্লাহ" নিয়ে উঠছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।


