যুবদল-ছাত্রদলে হতাশায় কর্মীরা, বিতর্কে নেতারা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
যুবদল-ছাত্রদলে হতাশায় কর্মীরা, বিতর্কে নেতারা
গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর বিগত দিনে সবচাইতে বড় বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি চলে আসলেই তরুণ রাজনীতি সংগঠন হিসেবে পরিচিত যুবদল-ছাত্রদল বিভিন্ন কৌশলে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের ব্যবসা-বানিজ্যে সবই দখলে নিয়ে কোনঠাসা হয়ে পরে। তা ছাড়া সারাদেশ জুড়েই যুবদল-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে দখলবাজি-চাঁদাবাজিসহ শত শত অভিযোগ রয়েছে। এদিকে একক রাজত্ব কায়েমের লক্ষে জেলা যুবদল করছে না ইউনিট কমিটি ও নিজেদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ।
অন্যদিকে মহানগর যুবদল ইতিমধ্যে কয়েক দফায় ইউনিট কমিটি গঠনের লক্ষ্যে তোড়জোড় করে বিভিন্ন ওয়ার্ড-ইউনিয়নে কর্মী-সভা করে হঠাৎ তারা ও ঝিমিয়ে পরেছেন। যাকে ঘিরে মূল্যায়ন পাচ্ছে না দলের ত্যাগী কর্মীরা। এদিকে কমিটি গত ২ বছরের অধিক সময় পার হলে ও জেলা ও মহানগর যুবদল বারবারই নিজেদের ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, বর্তমানে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব একের অপরের সাথে দ্বন্দ্বে থাকলে ও বর্তমানে উভয়ে যার যার অবস্থান থেকে ব্যবসায়-বাণিজ্যে করে ফুলে ফেঁপে যাচ্ছেন।
একই সাথে নয়া নয়া ব্যবসার চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন জেলা যুবদলের এই দুই নেতা। তারা মাইকে বড় বড় ভূলি গজিয়ে কথা বললে ও কার্যক্রমে তারা দৃঢ়গতি ও দুর্বল। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ৭ দিনের সময় দিলে ১ মাস অতিবাহিত হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গের নেই কোন আভাস। যাকে ঘিরে জেলা যুবদলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তা ছাড়া মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী জানা গেছে, মহানগর যুবদলের সদস্য সচিবের পকেট খালি হলেই তিনি কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তৎপর হয়ে উঠেন।
এমনকি বিভিন্ন সময় নিজেরা বসে সকালে কমিটি করে সেই কমিটির কাগজ বিকালে ছিঁড়ে ফেলার নজির ও সৃষ্টি করেছেন কমিটির সদস্য সচিব। তা ছাড়া কমিটির আহ্বায়ক বারবারই কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় করলে ও ইউনিট কমিটি গঠনের লক্ষে কোন হস্তক্ষেপ নেই সদস্য সচিবের। সদস্য সচিব বিভিন্ন কায়দায় ইউনিট কমিটিগুলোর একাধিক প্রার্থীদের বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োগ দিয়ে তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন। যার কারণে তিনি কমিটি দিলেই সব ছন্নছাড়া হয়ে যাবে সেই লক্ষ্যেই আটকা রয়েছে ইউনিট কমিটিগুলো।
এদিকে নানাকাণ্ড ঘিরে জেলা ও মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা বর্তমানে জড়িয়ে পরেছেন নানা বিতর্কে। অন্যদিকে বর্তমানে বিএনপির ফুরফুরে মেজাসের সময়ে বিতর্ক মাথায় নিয়ে গত ১০ মাস যাবৎ জেলা ও মহানগর ছাত্রদল নেতৃত্বহীন অবস্থায় হয়ে পরেছেন। কয়েক মাস আগেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করলেও এখন পর্যন্ত ১০ মাসে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা হয়নি। এতে হতাশা বাড়ছে কর্মীদের মধ্যে, রাজপথে সক্রিয় ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা হয়ে পড়ছেন উপেক্ষিত।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের ছাত্রদল কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বিলুপ্ত করা হয় উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, কলেজ ও ওয়ার্ড কমিটিসমূহও। ঘোষণার পর থেকেই প্রত্যাশা ছিল দ্রুতই গঠিত হবে নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং সময় গড়ালেও সেই প্রক্রিয়া এখনো অর্ধেক পথেই।
আন্দোলনে অগ্রভাগে, অথচ উপেক্ষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যখন বিএনপি দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রায় নিষ্ক্রিয়, ঠিক তখন রাজপথে ছাত্রদলই ছিল দলের মূল ভরসা। অবরোধ, হরতালসহ কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি নারায়ণগঞ্জে সফল করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পুলিশের গুলি, মামলা, গ্রেপ্তার আর নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করে তারা মাঠে ছিলেন বুক চিতিয়ে। অনেকে কারাবরণও করেন, অনেকে বাড়িছাড়া হয়ে জীবন কাটিয়েছেন।
তবু সেই সাহসী কর্মীরাই এখন দলীয় আনুষ্ঠানিকতা ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ধীরগতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। মাঠের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আন্দোলনের সময় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরাই যেন ভবিষ্যতের নেতৃত্বে আসেন। এটাই তাদের প্রত্যাশা। এদিকে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মীরা বর্তমানে যে যার যার মতো করে ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিচালনা করছে আবার অনেকে করছেন চাঁদাবাজি-লুটপাট। যাকে ঘিরে একের এক বিতর্ক ছড়াচ্ছে ছাত্রদল নেতারা। তা ছাড়া বর্তমানে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজমান রয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদল নিয়ে চারটি বিষয় মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রথমত, ছাত্রদলের রাজনীতির ধরণে আমূল পরিবর্তন আনা হবে, যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে দলটি গ্রহণযোগ্য হয়। দ্বিতীয়ত, ৫ আগস্টের সরকার পতনের আন্দোলনে তরুণদের বিপুল ভূমিকা ছিল। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে ছাত্র রাজনীতিতে তরুণদের সক্ষমতা তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তৃতীয়ত, বিএনপির প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্রদলের অগ্রণী ভূমিকা থাকে। তাই আগামী নির্বাচনেও তাদের ভরসাযোগ্য সংগঠনে রূপান্তর ঘটাতে কেন্দ্র কাজ শুরু করেছে। চতুর্থত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা ছাত্রদলের নেতৃত্বে থাকবেন, তারা যেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও অধিকার নিয়েই রাজনীতি করেন, এমন কাঠামো নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে গত ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলায় সভাপতি হন নাহিদ হাসান ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকু। মহানগরে সভাপতি হন রাকিবুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইসতিয়াক সিকদার। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন সুলতান মাহমুদ, সাগর সিদ্দিকী, আতা ই রাব্বি, জাকারিয়া ভূঁইয়া, আমিনুল ইসলাম, আবু তাহের রিফাত, মেহেদী হাসান দোলন, শাহাজাদা রতন,আজিজুল ইসলাম রাজিব, ওসমান প্রীতম এবং মো. রাসেল।
তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের দেড় বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তা বাতিল করা হয়। এদিকে দীর্ঘদিন নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় দলীয় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এমন মত নেতাকর্মীদের। তাদের দাবি, যারা আন্দোলনে ছিলেন, যারা সত্যিকারের ছাত্র রাজনীতি করেন, তাদের মূল্যায়ন করেই যেন কমিটি হয়।
তাদের মতে, কেবল নামধারী ছাত্র নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও সচেতন যুবদেরকেই সামনে আনলে দল সুসংগঠিত হবে। রাজপথে সাহসী নেতৃত্ব দেখানো ছাত্রদল এখন কেন্দ্রের দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু ছাত্রদলের বিতর্কে থাকা নেতাকর্মীরা ছড়াচ্ছে একের পর এক বিতর্ক। তা ছাড়া বর্তমানে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরছেন তরুণ দুই সংগঠনের পদপ্রার্থীসহ আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা পদবঞ্চিত কর্মীরা।


