মানুষের দ্বারে দ্বারে জামায়াত প্রার্থীরা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
মানুষের দ্বারে দ্বারে জামায়াত প্রার্থীরা
আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় আলোচনা সভা করে যাচ্ছে জেলা মহানগর জামায়াতে ইসলামী। তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে এখনও সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যদিও আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা চাইছে সরকারের কাছ থেকে। জামায়াতে ইসলামী শুরুতে নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে দলটির আমির শফিকুর রহমান দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের কথা বলেছেন।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড.ইউনুস এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দেয়ার পরন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করার পর ফেব্রুয়ারিতেও নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করেন। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের সময় নিয়ে এমন অবস্থার মধ্য বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় নিজেদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ‘সংস্কারকে’ বেশি গুরুত্ব দেওয়া দল জামায়াতে ইসলামী।
সেই হিসেবে ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলের ঘোষিত প্রার্থীরা পাড়া মহল্লায় গিয়ে মানুষের সাথে মিশে নিজেদের অবস্থান তৈরী করছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জামায়াতের প্রার্থীরা মাঠে নেমে মানুষের সাথে গণসংযোগ করছেন।
অন্যদিকে দেশে এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কোন রাজনৈতিক দল কত ভোট পাবে, এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে বেসরকারি এক জরিপে। তাতে দেখা গেছে, বিএনপি সর্বোচ্চ ৪১.৭ শতাংশ ভোট পাবে। যদিও তা এখন আরও তলানীতে নেমেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জামায়াতে ইসলামী পাবে ৩১.৬ শতাংশ ভোট। তাদের ভোট ব্যাংক বেড়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
আর ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাবে ৫.১ শতাংশ ভোট। উন্নয়ন গবেষণা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিং বাংলাদেশ পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তবে দীর্ঘ দিন জামায়াতে ইসমালমীর নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর কার্যালয় বন্ধ করে রেখেছিল পালিয়ে যাওয়া দল আওয়ামী লীগ। এমনকি দলটির নিবন্ধন বাতিল করে তাদের কোন ধরনের কার্যক্রম করতে দেয়া হয় নাই। আর এতে করে দলটি প্রকাশ্যে এসে মানুষের মাঝে তেমন কোন কাজ করতে পারে নাই। কিন্তু গত বছরের ৫ আগষ্টের নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে এসে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে পাড়া মহল্লার মানুষকে নিজেদের কাছে টানছেন।
জুলাই আগষ্টে ছাত্র জনতার আহত নিহত পরিবারের পাশে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে সবার আগে জামায়াতে ইসলামী পাশে দাড়িয়েছে। এছাড়া কালিরবাজার দোকান পড়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের পাশে দাড়িয়েছে। ফতুল্লার জলাবদ্ধতা মানুষের চলাচলের জন্য ফ্রি ভ্যানে পারাপারের ব্যবস্থা করে মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। যা অন্য কোন দলের তেমন কেউ করে দেখাতে পারে নাই।
নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা জানিয়ে দেয়ার আগেই জেলার ৫ টি আসনে নিজেদের প্রার্থীদের মেলে ধরতে শুরু করেছে দলটি। বিএনপির সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিপরীতে নিজেদের ধীরস্থির রাজনীতি এবং জনগণের কাছে যাওয়ার প্রবনতা তাদের আলাদাভাবে পরিচিত করিয়েছে।
যেখানে ৫ আগস্টের পর থেকে বি.এন.পি, এন.সি.পি, হেফাজত অভ্যন্তরীণ বিরোধে বিতর্কের জালে জড়িয়েছে, সেখানে নিজেদের ক্লিন ইমেজ ধরে রেখে সকল দলের সাথে ঐক্য জারি রেখেছে জামায়াত। পাশাপাশি মাঠে নেমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রার্থীদের নিজ এলাকায় সংযোগ শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতের কার্যক্রম চলছে একসাথেই। ‘জামায়াতের প্রার্থীরা এখন স্ব-স্ব আসনের সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন। সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন জনগনের কাছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমলে তুলনামূলক বঞ্চিত বা অবহেলার শিকার হওয়া অঞ্চলের বাসিন্দারা সাদরে গ্রহণ করছেন জামায়াতের প্রার্থীদের।
সুত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মহনাগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় সভা করে দলীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি বিগত সময়ে নিজেরা কি পরিমান নির্যাতিত হয়েছে তা তুলে ধরছেন। এছাড়া ইনসাফ ভিত্তিকক রাষ্ট্র গঠনের জন্য যা করনীয় তা তুলে ধরছেন। সেই সাথে তার নির্বাচনী এলাকার ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জের পাড়ামহল্লায় গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলছেন। কোন এলাকার কি সমস্যা তা জেনে সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মঈন উদ্দিন। ইতোমধ্যে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ সদর বন্দর এলাকার তৃনমূল পর্যায়ে ব্যানার পোষ্টার টানিয়ে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের সাথে সভা করছে। সেই সাথে গণ সংযোগ করে নিজেকে মেলে দরছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ড. মো.ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়ার ছবিসহ প্রার্থী পরিচিতির লিফলেট বিতরণ করে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। এছাড়াও অনেকেই জামায়াতের সহযোগী ফরম পূরণ করে জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজনীতি করার অঙ্গিকার করেন। তাছাড়া ইতোমধ্যে তিনি প্রচারণা চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের থেকে। এই ঘটনায় প্রতিবাদ এবং আইনের আশ্রয় নেয়া ছাড়া তেমন কিছুই করেই নাই।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করবেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসাইন মোল্লা। নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে লড়বেন অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা। তিনি দুপ্তারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের সমাজকল্যাণ সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘জামায়াত তার নিজস্ব রাজনৈতিক বুদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। কারও সাথে বিরোধ নয়, সবার সাথে ঐক্য এই মন্ত্রকে সামনে নিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যতিত বাকি সবার সাথেই সুসম্পর্ক রেখেছে তারা। নেতাকর্মীদের ঝুট বাণিজ্য, ঘাট দখল, হাট দখল, রাস্তার ইজারা, মাঠের ইজারা নিয়ে আর্থিক সংঘাতে যাবার প্রয়োজন হয়নি বিএনপি বা অন্য দলগুলোর সাথে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী দলের সমাবেশে নিজেদের শৃঙ্খলা এবং নির্বাচনী রাজনীতিতে নিজেদের পরিচ্ছন্ন রেখে দলের সুনাম ধরে রাখতে পেরেছেন। দল গঠনের পাশাপাশি শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী সেক্টরেও নিজেদের মেলে ধরেছে দলটির প্রার্থীরা।


