রাতের অন্ধকারে এবার আজমেরীর পক্ষে ১৫ আগস্টের পোস্টার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

রাতের অন্ধকারে এবার আজমেরীর পক্ষে ১৫ আগস্টের পোস্টার
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে যায় ওসমান পরিবার। এই পরিবারের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, তার ভাতিজা প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনী থেকে মুক্তি পায় নারায়ণগঞ্জবাসী। দেশের বাইরে পালিয়ে গেলেও গত একবছরের মধ্যে বেশ কয়েকবার রাতের অন্ধকারে নানা পোষ্টার সাঁটিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর মনে ভয় সঞ্চার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের একবছর উদযাপনের আগে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রাতের অন্ধকারে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের পক্ষে শহর ও শহরতলীর নানা জায়গায় পোস্টার টানায় দুর্বৃত্তরা। এবার আসন্ন ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে আবারো শহরের বেশ কয়েক জায়গায় আজমেরী ওসমানের পক্ষে পোষ্টার টানিয়েছে তার সমর্থকরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে পোস্টার সাটিয়ে ভীতি তৈরি করলেও এখনো এইসব ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অথচ এসব পোষ্টার টানানো ব্যক্তিদের সিসিটিভি ফুটেজ দ্বারা সনাক্ত করাও বেশ সহজ।
জানা গেছে, ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে আজমেরী ওসমানের সৌজন্যে তার সমর্থকরা রাতের আধারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের দেয়ালে, সরকারি তোলারাম কলেজের গেটের সামনের দেয়ালে রাতের অন্ধকারে পোস্টার টানিয়ে চলে যায়।
এআগে ৫ আগস্টকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রাতের আঁধারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, চাষাড়া কলেজ রোড ও আশপাশের এলাকায় মুখে মাস্ক পড়ে বেশ কিছু যুবক বিতর্কিত পোস্টার টানিয়েছে। যা নিয়ে সর্ব মহলে সমালোচনা তৈরী হয়েছে। টানানো পোষ্টারে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
এটি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পোস্টার লাগানোর পেছনে মূল ভূমিকায় ছিলেন প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমানের অনুসারীরা।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে ওসমান অনুসারীরা মাথা চারা দিয়ে উঠতে চায় বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আগষ্ট মাসের ১১ দিন সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কেননা ফ্যাসিস্ট দোসররা যে কোন ধরণের অপরাধ ঘটাতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের এই পোষ্টার টানানোর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের বড় ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এরআগেও শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থান ও সরকারি দপ্তরের দেয়ালে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পোস্টারে বড় করে লেখা রয়েছে শেখ হাসিনাতেই আস্থা। অথচ গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জের‘গডফাদার’ খ্যাত শামীম ওসমান ও তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের ছবি দেখা যায়। পোষ্টারে নিচে লেখা ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ।
ওই পোষ্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তখন নিষিদ্ধ এই ছাত্র সংগঠনের এই পোস্টারিং-এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা একত্রে শহরে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন। তারা পোস্টারিং করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন তেমন কোন ব্যবস্থা নেননি।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সনের জুলাই-আগস্টে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন। একই সাথে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুসহ তার অনুসারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী-জনতার উপর অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন। তাদের এই সশস্ত্র হামলার ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গত বছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সাথে নারায়ণগঞ্জে ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানো শামীম ওসমান সহ তার সাঙ্গ পাঙ্গরাও পালিয়ে রয়েছে। কিন্তু গত একবছরের প্রায় সময় তার অনুসারীরা হঠাৎ করে পোষ্টার টানিয়ে আলোচনায় আসেন।