
‘না’ভোট স্বচ্ছ রাজনীতিতে ভূমিকা রাখবে
# ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৫৪ জন এমপি
# একটি নির্বাচন হলে নতুন নিয়মের উপকারিতা বুঝা যাবে : হাজী নূর উদ্দিন
# ক্লীন ইমেজের লোকদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ বাড়বে : তরিকুল সুজন
বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে জনগণের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ আসে। বিশেষ করে আর্থিক লেনদেন বা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দল থেকে অযোগ্য ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগটি দেশজুড়ে একটি প্রবাদ বাক্যের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনেই নির্বাচিত হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
যা মোট আসনের অর্ধেকেরও বেশি। এই এক তরফা নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত নির্বাচন হিসেবে ম্যাজিক বা যাদুর নির্বাচন হিসেবেও পরিচিত। অর্থাৎ নির্বাচন নাই, ভোট নাই, অথচ তারা যাদু বলে দেশের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। আর এসব ফাঁকফোকর বন্ধ করার জন্যই বর্তমান নির্বাচন কমিশন আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘না’ ভোটসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব করেছেন। এই প্রস্তাব চুড়ান্ত হলে দেশের রাজনীতি কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী থাকছে ‘না’ ভোটের বিধান। কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলেও তাকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হবে না; বরং তাকে ‘না’ ভোটের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। যদি ‘না’ ভোট বেশি হয়, তাহলে ওই আসনে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে হবে।
নির্বাচনে সমান ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ না করে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হবে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে, নির্বাচনের পরও তদন্ত করে এমপি পদ বাতিল করতে পারবে কমিশন। নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে একটি, দুইটি অথবা পুরো আসনের ফলাফল নির্বাচন কমিশন চাইলে বাতিল করতে পারবে। এছাড়া ফলাফল ঘোষণার সময় সেখানে সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে স্বশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নতুন এই প্রস্তাবনার বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন যুগের চিন্তাকে বলেন, নির্বাচন কমিশন ‘না’ ভোটের বিষয়টিকে পুনরায় নির্বাচনের সাথে যুক্ত করার যে চিন্তা করছেন, আমরা তাদের এই উদ্যোগকে অত্যন্ত সাধুবাদ জানাই। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তনের কথা ছিল, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের যে একটি গুণগত পরিবর্তনের আকাঙ্খা ছিল, তা হয়নি।
কার্যত রাজনৈতিক দলগুলো আবারও সেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, মাস্তানি ও পেশি শক্তি নির্ভরই রয়ে গেছে। এই পেশি শক্তি নির্ভর রাজনীতিকে বাংলাদেশের মানুষ ৫ আগস্টই প্রত্যাখান করেছে। কিন্তু এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সেখান থেকে কোন কিছু শিক্ষা গ্রহণ করছে বলে আমার মনে হয় না। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষের মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে তার কাছে যদি মনে হয় যে তাদের চাহিদা মতো যোগ্য প্রার্থী নেই।
অর্থাৎ সন্ত্রাস চাঁদাবাজসহ এসমস্ত দখলদাররাই এমপি প্রার্থী হিসেবে দলের প্রতিনিধিত্ব করছে, সেই ক্ষেত্রে জনগণ সেখানে ‘না’ ভোট দিবে, এটা তাদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার। আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেখেছি যেখানে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, এই নতুন নিয়মের কারণে এখন আর সেরকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাশ করার সুযোগ থাকবে না।
এটাকে গণতন্ত্রের বিজয় বলে আমি মনে করি। এই পদ্ধতিটার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা সতর্ক হবেন বলেও আমি মনে করি। এর ফলে ক্লীন ইমেজের লোকদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি। যার ফলে পুরো রাজনীতির মধ্যে একটি আমূল পরিবর্তন আসবে।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের এখনকার নির্বাচনগুলোতে যে ভোটার সংখ্যা বেশি উপস্থিত হন না এটাও ‘না’ ভোটের একটি অংশ। এখন ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে নির্বাচনে একটি পার্সেন্টিজ দেখার সুযোগ হবে। তবে এই ব্যবস্থা নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনি বলা সম্ভব না। আগামী ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই নতুন ব্যবস্থাটা কি ধরণের ফলাফল দেয় দেখি।