অব্যাহতি কাণ্ডে তুমুল সমালোচনার মুখে ফতুল্লার টিটু-বারী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68ab07c203a0c.jpg)
অব্যাহতি কাণ্ডে তুমুল সমালোচনার মুখে ফতুল্লার টিটু-বারী
# থানা বিএনপি ইউনিয়ন বিএনপির নেতাদের অব্যাহতি দেয়ার এখতিয়ার রাখে : মামুন মাহমুদ
# শোকজের জবাব না দেওয়ায় সাংগঠনিকভাবে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে : মাশুকুল রাজীব
# গত ২৬ মাসে কোন নির্বাহী সভা না ডেকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার তারা কোথায় পেলেন : খন্দকার মনির
ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বারী ভুইয়া সম্প্রতি দলের ইউনিয়ন এর শীর্ষ তিন ত্যাগী নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। জানা গেছে, তারা কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বিল্লাল হোসেন, কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মঈনুল হোসেন রতন এবং এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমনকে অব্যাহতি দেন। এছাড়াও ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি হাসান মাহমুদ পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীরকে এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী, অব্যাহতি বা বহিষ্কারের এখতিয়ার কেবল কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে থাকে। থানা কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক চাইলে কেবল অভিযোগ দায়ের করতে পারেন, কিন্তু অব্যাহতি দেওয়ার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই বলে জানান থানা ও ইউনিয়ন বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ উঠেছে, ফতুল্লা থানা বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব গত ২৬ মাসে একবারও নির্বাহী কমিটির সভা ডাকেনি। অথচ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নির্বাহী সভায় বারবার অনুপস্থিত থাকলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া যায়, কিন্তু অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এ প্রসঙ্গে
ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল। এখানে মতভেদ বা গ্রুপিং থাকতেই পারে, কিন্তু তা দূর করার দায়িত্ব বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। আপনারা ২৬ মাসে কোনো নির্বাহী সভাই ডাকেননি, তাহলে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার পেলেন কোথায়?
তিনি আরও বলেন,বিএনপিতে অব্যাহতি বা বহিষ্কার কেবল কেন্দ্র থেকেই হতে পারে। সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক চাইলে কেবল কেন্দ্রে অভিযোগ জানাতে পারেন। অন্যথায় এসব সিদ্ধান্ত গঠনতন্ত্রবহির্ভূত।
দলের যেসব ত্যাগী নেতা মাঠে-সংগঠনে সক্রিয়, তাদের কেন অব্যাহতি দেওয়া হলো বলে মন্তব্য আসছে তৃণমূল থেকে। দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক নিয়ম ভেঙে এ সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো এ নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
ফতুল্লা থানা বিএনপির তিন ত্যাগী নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ স্থানীয় রাজনীতিতে চলছে সমালোচনার ঝড়। অনেকে মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত ফতুল্লা থানা বিএনপিকে আরও বিভক্ত করবে এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা বাড়াবে
তবে এ ব্যাপারে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক মামুন মাহমুদ। তিনি যুগের চিন্তা প্রতিনিধিকে জানান, ফতুল্লা থানা বিএনপি জেলা বিএনপিকে এ ব্যাপারে অবগত করেছে। তারা প্রথমে শোকজ করেছিল। যেহেতু তারা শোকজের কোন জবাব দেয়নি। তাই ফতুল্লা থানা বিএনপি তাদের অব্যাহতি দেয়ার একটি এখতিয়ার রাখে।
এই বিষয়ে জেলা বিএনপি'র যুগ্ম সম্পাদক মাশুকুল ইসলাম রাজীব যুগের চিন্তাকে জানান, থানা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব যখন আমাদেরকে জানিয়েছে অব্যাহতি প্রাপ্ত নেতারা দলের চেইন অব কমান্ড মেনে তাদের সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে না। তখন আমরা থানা বিএনপিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
সেই প্রেক্ষিতে থানা বিএনপি তাদেরকে প্রথমে শোকজ করেছে। যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে তারা শোকজের জবাব দিতে পারতো। এটাই তো সাংগঠনিক নিয়ম। অপরাধ করুক বা না করুক যখন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠবে তখন সে সেটার জবাব দিবে। যদি জবাব দিত তাহলে হয়তো এই অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতো না। যেহেতু তারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন সেহুতু ফতুল্লা থানা বিএনপি তাদের অধীনস্থ ইউনিয়ন বিএনপি'র নেতৃত্বকে অব্যাহতি দিতে পারে।
তবে অনেকেই বলছেন বিএনপি'র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়ম হচ্ছে, থানা বিএনপির যেকোনো সিদ্ধান্তে থানা বিএনপির কমিটিতে যারা রয়েছেন তাদের অধিকাংশ সদস্যের সম্মতির প্রয়োজন হয়।যখন থানা বিএনপির অধিকাংশ সদস্য উক্ত সিদ্ধান্তের সম্মতি জানাবে তখন থানা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জেলা বিএনপির কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে। তবে তারা নিজেরা এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
এখন দেখার বিষয় এই অব্যাহতি কান্ড ঠিক কোথায় গিয়ে পৌঁছায়।এ নিয়ে চলছে যেন নাটকের চেয়েও নাটকীয়তা।