Logo
Logo
×

রাজনীতি

বিদ্রোহ করে দৈন্যদশায় রেজা-গালিব প্যানেল

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

বিদ্রোহ করে দৈন্যদশায়  রেজা-গালিব প্যানেল

বিদ্রোহ করে দৈন্যদশায় রেজা-গালিব প্যানেল

Swapno

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির (২০২৫-২০২৬) নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মনোনীত বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের প্যানেলের সঙ্গে বিদ্রোহ করে দৈন্যদশায় পরিণত হয়েছে রেজা-গালিব প্যানেল। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পূর্বে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে কল্পকাহিনী সাজিয়ে বিদ্রোহী প্যানেল লিডার রেজা ও গালিব নানান অভিযোগ তুলে এমনকি বর্তমান বিএনপির প্যানেলকে নিয়ে নানা মন্তব্য করে আইনজীবীদের কাছ থেকে বিদ্রোহী প্যানেলটি আস্থা হারায়। যাকে ঘিরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গত (২০ আগষ্ট) প্যানেল লিডার রেজা ও গালিবকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। এর পর থেকেই একে একে সরে দাড়াঁচ্ছেন রেজা-গালিব প্যানেলের প্রার্থীরা। তা ছাড়া এবারের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মোট ভোটার ১১৭৫টি। সকল ভোটার বিএনপির মূল প্যানেল ও জামায়েত প্যানেলের প্রার্থীদের নিয়েই ব্যস্ত সময় পাড় করলে এদের মধ্যে কোনঠাসা হয়ে পরছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্যানেলের প্রার্থীরা। বর্তমানে প্রচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছেন হুমায়ূন-আনোয়ার প্যানেল। এর বাহিরে ও আগামী (২৮ আগষ্ট) নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি রেখেছেন প্যানেলটির সদস্যরা। এর বাহিরে বর্তমানে গ্রহণযোগ্যতায় এতোই শীর্ষে রয়েছে হুমায়ন-আনোয়ার প্যানেল যে বিরোধী প্যানেলের প্রার্থীরা অন্য প্যানেল থেকে সরে এসে তাদের সমর্থন করছেন। একই সাথে কিছুক্ষনের ব্যাবধানে আপ্যায়ন সম্পাদক শামীম মিয়া নির্বাচন থেকে সরে দাড়াঁন।

এমনই একের পর এক ঘটনার নজির লক্ষ্য করা গেছে গতকাল। সংবাদ সম্মেলন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ২০২৫-২৬ সালের বিদ্রোহী প্যানেলের সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী থেকে সরে দাড়ালেন মহানগর বিএনপির সদস্য এ্যাড. আনিছুর রহমান মোল্লা। সেই সাথে সরকার হুমায়ন-আনোয়ার প্যানেলকে সমর্থন জানিয়ে তাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ গ্রহন করার ঘোষনা দেন।

এ ছাড়া তিনি বলেন, আমি মোহাম্মদ আনিছুর রহমান মোল্লা নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী এবং জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচন  ২০২৫-২৬ সালের রেজা-গালিব প্যানেলের সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী। আমি ১৯৯১ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতি পরবর্তীতে মূল দল বিএনপির রাজনীতি করেছি এবং ২০০৩ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় আইন পেশায় নিযুক্ত হয়েছি। ২০০৩ সাল এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার একজন সদস্য এবং আমি দীর্ঘ ২২ বৎসর যাবত আইনজীবী ফোরামের পক্ষে আইনজীবী সমিতির প্রতিটি নির্বাচনে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও আমি বিগত পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, সোনারগাঁও থানার হয়রানী মূলক রাজনীতি মামলায় দলীয় নেতাকর্মী গ্রেফতার হলে বিনা পারিশ্রমিকে আইনী সেবা দিয়ে এসেছি। যেকারনে দিনের বেলায় আদালতে আইনী সেবা দিয়ে রাতের বেলায় লুকিয়ে থাকতে হয়েছে আমাকে। আমি নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ সালের নির্বাচনে আদালত পাড়ায় বিভিন্ন প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসাবে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য নিজেকে ভোটারের কাছে উপস্থাপন করি। দলের নেতাদের নির্দেশে আইনজীবী সমিতির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ করে আনিছ মোল্লা বলেন, আমি মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নারায়ণগঞ্জ শাখার সদস্য আর আমার প্যানেল যেহেতু আইনজীবি ফোরামের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছে তাই আইনজীবি ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এড.জিয়ারউর রহমান, এড. আব্দুল্লাহ্ আল মাহাবুব, এড. মোহাম্মদ আলী আমাকে মোবাইলের মাধ্যমে দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মহানগর বিএনপি সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব এডভোকেট আব্দুল আল ইউসুফ খান টিপু সহ সকলের সাথে আলাপ আলোচনা শেষে আমার প্রানের দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে দলের স্বার্থে আমি আইনজীবী নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ সালের আমার সহ-সভাপতি পদের প্রার্থীতা হতে সরে দাড়ালাম। সেই সাথে আমি নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতিতে আইনজীবী ফোরামে নীল প্যানেল এর ১৭ জন প্রার্থীর বিজয় কামনা করছি। আগামীকাল থেকে আমি আমার নীল প্যানেলের পক্ষে প্রচারনায় অংশ গ্রহণ করিব।

তিনি আরো বলেন, আমি যেহেতু আমি বিএনপি করি এবং বর্তমান মহানগর বিএনপির আহবায়কের কমিটির একজন সদস্য। তাই আমি আমার দলের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন সাংঘর্ষিক কাজ করবো না যাতে দলের বদনাম হয়।দলের সিদ্বান্তে আমি আমার প্রার্থীতার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। তার জন্য আমার প্যানেলের সকলের কাছে অনুরোধ করবো আপনেরা মন খারাপ করবেন না এবং যাদের অনুপ্রেরণা আমার ভোটার তাদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা কষ্ট নিবেন না। আমার এই সিদ্ধান্তে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করবেন।

তা ছাড়া বিদ্রোহী প্যানেলের আপ্যায়ন সম্পাদক পদ প্রার্থী অ্যাড. শাহ আলম শামীম নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে বলেন, “বিগত ২০০২ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতি এবং ২০১২ সাল থেকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাথে জড়িত রয়েছি। আমি এবার নির্বাচনে নমিনেশন পেপার কিনে ছিলাম এবং আপ্যায়ন সম্পাদক পদে তা জমা প্রদান করি। আমাদের মাঝে যে সিনিয়রদের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল, তাদের সঙ্গে আমরা স্যারদের মাধ্যমে বৈঠক করেছি এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে চলব। আমরা যেহেতু জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসী, তাই সকলে মিলে একত্রে কাজ করব। এবং দলের পরিবর্তে কোনো ব্যক্তিগত বা স্বতন্ত্র কাজ করব না।”

তিনি বলেন, আমরা মিলে-মিশে একত্রে যেন হুমায়ুন-আনোয়ার পরিষদের মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচিত করতে পারি, সেই লক্ষ্যে আমি আজ থেকে আমার নমিনেশনে দেওয়া প্রার্থীতা প্রত্যাহার করছি এবং হুমায়ুন-আনোয়ার প্যানেলের সমর্থনে বাকি সময় কাজ করব।

এদিকে ডাকঢোল পিটিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রেজা-গালিব প্যানেলের সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী এভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে অন্য হুমায়ূন ও আনোয়ার প্যানেলকে সমর্থন করাকে ঘিরে রেজা-গালিব প্যানেলের অক্ষমতা লক্ষ্য পায়। তা ছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৭ পদে প্রার্থীতা দেওয়ার যোগ্যতা ছিলো এই রেজা-গালিব প্যানেলের। কোন আইনজীবী তাদের সমর্থন না করায় এরা কিছু সংখ্যক আইনজীবীকে দিয়ে ১৪ পদে প্রার্থী দিয়ে প্যানেল গঠন করেন যা পুরোই নড়বড়ে এবং দুর্বল। তা ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে উঠছে। এদিকে যে কোন সময় নির্বাচনের পূর্বে পুরো প্যানেলবিলীন হয়ে যেতে পারে বলে গুঞ্জন উঠছে। তা ছাড়া গত ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী বিহীন আদালতে পুরো শক্ত অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। যাকে ঘিরে সর্বমহলে এদের একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তা ছাড়া গণঅভুন্থানের ১ বছরে হুমায়ূন-আনোয়ার দায়িত্ব নিয়ে আইনজীবী সমিতির ভোটারদের আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচনায় আসায় এই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে আস্থায় রয়েছে হুমায়ূন-আনোয়ার প্যানেলের প্রার্থীরা। এমতা অবস্থায় দৈন্যদশায় বিলীনের পথে রেজা-গালিব প্যানেল।

নির্বাচন বিষয়ে বিদ্রোহী প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী রেজা খান যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবো। এখন যদি আমাদের বাকি আরো ১২ জন থেকে আরো কেউ নির্বাচন থেকে তাদের চাপে সরে যায় তারপরে ও ২/১ থাকলে ও নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। কোনভাবেই আমাদের দাবিয়ে রাখা যাবে না।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী গোলাম মোর্শেদ গালিব বলেন, ধারণা করি তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে বলেই সরে দাঁড়িয়েছে। যদি নিজ ইচ্ছায় বসতো তাহলে তো আরও আগে সময় থাকতেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতো। প্রত্যাহারের সময় মতো যেহেতু করে নাই তার মানে বোঝা যায় জোরপূর্বক বসানো হয়েছে।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন