সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণে ৯ জন দগ্ধ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68ab16a207de8.jpg)
সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণে ৯ জন দগ্ধ
সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী-শিশুসহ একই পরিবারের ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধদের শরীরের ৩০ থেকে ৫৩ শতাংশ অংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। বর্তমানে তারা ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। শুক্রবার (২২ আগষ্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি মুড়ি ফ্যাক্টরির গলি জাকির খন্দকারের টিনশেড বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে কাঁচপুর ও আদমজী ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দু’টি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতরা হলেন, তাহেরা (৬৫), হাসান (৩৭), সালমা (৩০), মুনতাহা (১১), জান্নাত (৪), রাইয়ান (১ মাস), আসমা (৩৫) ,তিসা (১৬) ও আরাফাত (১৩)। ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, হাসানের শরীরের ৪৪ শতাংশ, সালমার ৪৮ শতাংশ, আসমার ৪৮ শতাংশ, তিশার ৫৩ শতাংশ, জান্নাতের ৪০ শতাংশ, মুনতাহার ৩৭ শতাংশ, শিশু ইমামের ৩০ শতাংশ ও আরাফাতের ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। শুধু তনজিল ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তাদের উদ্ধার করে ভ্যান ও অটোরিকশার মাধ্যমে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে তাহেরা বেগমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ৮ জনকে জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
অগ্নিদগ্ধ তাহেরার ছোট বোন মরিয়ম বলেন, তাদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর। সবার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। আমার বোন গত ৩ মাস আগে তার মেয়ের জামাই হাসানের বাসায় বেড়াতে এসেছিল। রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিকট শব্দে ঘরের মধ্যে আগুন ধরে যায় এবং টিনের চালও কিছুটা ছুটে যায়।
স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী এরশাদুল মিয়া তখন পাশের গোডাউনে কলা নামাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দ হলো। দৌড়ে গিয়ে দেখি বাড়ির ভেতরে আগুন আর কান্নাকাটি। কয়েকজন মহিলার শরীর ও কাপড় পুড়ে গিয়েছিল। একটি শিশুর অবস্থা ছিল ভয়াবহ। দৃশ্যটি দেখে শরীর শিউরে উঠেছিল। প্রতিবেশীদের সহায়তায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এরশাদুল মিয়া বলেন, বাড়ির অবস্থা ছিল ভয়ঙ্কর। ওপরের টিন উঠে গেছে। প্লাস্টিকের চেয়ার গলে গেছে। ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল জুতো, বাচ্চাদের খেলনা আর পোড়া আসবাব। আগুনের তাপে প্রায় সব প্লাস্টিক দ্রব্য গলে গিয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহানুর রহমান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় জাকির খন্দকারের টিনসেড বাড়ির তিনটি রুম ভাড়া নিয়ে ১০-১২ জনের যৌথ পরিবার বসবাস করেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার এক ঘরের বাসিন্দা হোসিয়ারি ব্যবসায়ি হাসানের রুমে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন ছড়িয়ে বিকট শব্দে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ হয়। এ সময় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরও দুটি ঘরে। আগুনে দগ্ধ হন হাসান, তার স্ত্রী সালমা, তাদের চার মাস বয়সের শিশু সন্তান রায়হান, চার বছর বয়সী কন্যা সন্তান জান্নাত, আট বছর বয়সের মেয়ে মুনতাহাসহ পরিবারটির পাঁচজন। তাদের পাশের ঘরে প্রতিবেশী পোশাক কারখানার শ্রমিক বিথি ও তার দুই সন্তানও দগ্ধ হন বিস্ফোরণের এই আগুনে। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে পাশের বাড়ির প্রতিবেশী তানজিল আহত হয়। পরে খবর পেয়ে আদমজী ইপিজেড ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নির্বাপন করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মামুন বলেন, অগ্নিদগ্ধ হাসানের শ্বশুর আব্দুর রশিদ এই বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে থাকতো। কিছুদিন আগে রশিদ মারা যান। তার তিন মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনি তিনটি কক্ষে ভাড়া থাকতো। এর মধ্য দুটি কক্ষের সবাই অগ্নিদগ্ধ হয়েছে।
মামুন আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে ফ্রিজের কম্প্রেসারের বিস্ফোরণের কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
আদমজী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মীরন মিয়া বলেন, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে ফ্রিজের কমপ্রেসার বিস্ফোরণের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, ফ্রিজে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে বিকট শব্দ হয় ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে কাঁচপুর ও আদমজী ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দু’টি টিম ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশংকাজনক।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সার্জন ডা. সুলতান মাহমুদ শিকদার বলেন, ‘শিশুসহ দগ্ধ ৯ জন আমাদের এখানে এসেছে। তাদের মধ্যে সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে শুধু তানজিল ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
আগুনে পোড়া টিনশেড ভাড়া বাড়িটি এখন কেবল ধ্বংসস্তূপ। ছাইয়ের মধ্যে পড়ে আছে শিশুদের জুতা, গলে যাওয়া প্লাস্টিকের খেলনা আর পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্র। যেখানে এক সময় সংসারের হাসি-খুশি ছিল, সেখানে এখন শুধু পোড়া দেয়াল আর শোকের নীরবতা।