Logo
Logo
×

রাজনীতি

শুনানিতে আসন পুনর্বিন্যাসের বিপক্ষে নারায়ণগঞ্জবাসী

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

শুনানিতে আসন পুনর্বিন্যাসের বিপক্ষে নারায়ণগঞ্জবাসী
Swapno

# বন্দরকে দ্বিখন্ডিত না করার বিষয়ে আমরা আশাবাদী : বন্দরবাসী

# শুধু বন্দরবাসী নয়, আমরাও বন্দরকে দ্বিখন্ডিত করার বিরোধিতা করছি : মামুন মাহমুদ

# বন্দরকে দ্বিখন্ডিত করলে তারা খুবই ক্ষতির শিকার হবেন : খোরশেদ
 
আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনের নতুন সীমানার বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধিগণ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন ভবনের অডিটোরিয়ামে প্রস্তাবিত নতুন সীমানার আপত্তির বিষয়ে অনুষ্ঠিত শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে পূর্বের সীমানা বহাল রাখার বিষয়ে নিজেদের যুক্তি ও ব্যখ্যা তুলে ধরেন নারায়ণগঞ্জ-৩, নারায়ণগঞ্জ-৪ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রতিনিধিগণ। এ সময় প্রত্যেক আসনের প্রতিনিধিরাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার মাধ্যমে বন্দরকে দ্বিখন্ডিত করা হবে উল্লেখ করে এতে বন্দরবাসীর ভোগান্তির পরিমান অনেক বেড়ে যাবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সুপারিশের বিষয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম, জামায়াত ইসলামীর মহানগর কমিটির সাবেক আমীর মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমাদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, বিএনপির মহানগর আহবায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামের কন্যা অ্যাডভোকেট শামসুন নূর বাঁধন প্রমুখ।


নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সঙ্গে যুক্ত থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের নয়টি ওয়ার্ড বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সঙ্গে থাকা সদর উপজেলার দু’টি ইউনিয়ন যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

 
স্থানীরা জানান, আমাদের নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনের সীমানা নিয়ে প্রতিটি আসন থেকেই বিভিন্ন প্রতিনিধি কথা বলেছেন। তবে আমাদের বন্দরবাসীর প্রস্তাবনার বিপক্ষে কেউ কোন কথা বলেননি, কিংবা বন্দরবাসীর দাবির বিপরীতে কেউ আপত্তি জানাননি। বরং তারা প্রত্যেকেই তাদের বক্তব্যে বন্দরের আসনটির বিষয়ে স্থানীয় জনগণের প্রতি সম্মান রেখে এবং সহানুভূতি রেখেই কথা বলেছেন। তাই আমরা আশা প্রকাশ করবো নির্বাচন কমিশন বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়েই তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন নিবেন। তাই আমরা আশাবাদী। তাদের মতে নতুন এই সীমানা কার্যকর হলে এই তিনটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বন্দরবাসী। বিশেষ করে বছরের পর বছর অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার এই বন্দরবাসী আরও ভয়ঙ্কর মাত্রায় অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হবে বলেও মনে করেন তারা।
 
 
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, প্রস্তাবিত নতুন সীমানার বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলাম এবং আপত্তি জানিয়েছিলাম। তার স্বপক্ষেই আমাদের যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেছি। আমরা কেন আগের মতোই চাই, সাংগঠনিক, প্রশাসনিক প্রয়োজনসহ কৃষ্টি কালচার সবকিছু মিলিয়ে কেন পূর্বের সীমানাই প্রয়োজন তা উপস্থাপন করেছি। নির্বাচন কমিশন আমাদের কথা শুনেছেন। এখন আমরা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। বন্দরকে দ্বিখন্ডিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বন্দরকে এক রাখার জন্য প্রথম থেকেই বলে এসেছি। সোনারগাঁও থেকে যারা কথা বলেছেন তারাও বন্দরের ভাগ করার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বন্দরকে সোনারগাঁয়ের সাথে মিলিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তাই বন্দরের বিষয়ে যে শুধু বন্দরের লোকজনই বলেছে তা নয়, আমরা দলীয় বিবেচনায়ও বন্দরকে দ্বিখন্ডিত করার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছি। তিনি বলেন, আমার আবেদন ছিল তিনটি আসনের সীমানা নিয়ে তাই আমি তিনটি সীমানার বিষয়েই কথা বলেছি।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন বিশেষ করে বন্দরবাসীকে দিখন্ডিত করা কেন অযৌক্তিক সেই বিষয়টি আমি শুনানিতে উপস্থাপন করেছি। সাধারণ মানুষের চাওয়া এবং বাস্তবতা নির্বাচনে কমিশনে তুলে ধরেছি। এখানকার ইতিহাস, ঐতিহ্য মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনা না করে যেভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে এখানকার সর্বস্তরেরর মানুষ হতাশ হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত এখানকার মানুষ মোটেও পছন্দ করেনি। যখন থেকে সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি সামনে এসেছে আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, জনগণের মতামত এবং সঠিক বিচার বিশ্লেষণ না করে এভাবে সীমানা নির্ধারণ করার বিষয়টি কেউই মেনে নিবে না। আমরা আশা করবো নির্বাচন কমিশন আজকের শুনানির পর সঠিক বিষয়টি অনুধাবন করতে সমর্থ হবে।


নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের আজকের (গতকাল মঙ্গলবারের) শুনানিতে আমাদের উপস্থিত থাকার কারণই হলো আমরা নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনকে পূর্বের সীমানায় রেখেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। অন্যথায় এখানকার জনগণ রাজনৈতিক, সামাজিক ও ভৌগোলিকভাবে বঞ্চনার শিকার হবে। এতদিন যাবত বন্দরের ইউনিয়নবাসী আমাদের শহরের সাথে তাদের সকল প্রশাসনিক, রাজনৈতিক কাজকর্ম চালিয়ে গেছে। এখানকার প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরাও যে এলাকার মানুষদের সাথে (নারায়ণগঞ্জ সদর) কাজ করে অভ্যস্ত এবং যাদের নিয়ে কাজ করার জন্য দীর্ঘদিন যাবত একটি পরিকল্পনা তৈরি করে আসছে, এখন হঠাৎ করে আরেকটি নতুন অঞ্চলের সাথে এলাকাবাসীর কাজ কর্ম করা কিংবা প্রার্থীদের নতুন একটি অচেনা এলাকার মানুষদের সাথে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা একটি বিড়ম্বনা তৈরি করবে। তাছাড়া নির্বাচনী আইনেই আছে যে, কোন প্রশাসনিক এলাকাকে বিভক্ত করা যাবে না। তাহলে একটি এলাকাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে কিভাবে। নতুন এই প্রস্তাবনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনকে পরিবর্তনে বন্দর উপজেলাকে দ্বিখন্ডিত করার মাধ্যমে বন্দরবাসী খুবই ক্ষতির শিকার হবেন বলেও জানান তিনি।

শুনানিতে জামায়াত নেতা মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমাদ ও বিএনপির সাবেক সংসদ রেজাউল করিমও এ বিষয়ে একমত বলে জানান।

বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু বলেন, ‘শুনানিতে আমরা বন্দরের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যমতে পৌঁছে বলেছি, কোনো অবস্থাতেই বন্দরকে সোনারগাঁয়ের সাথে সংযুক্ত করা যাবে না। আমরা আমাদের এই দাবিটা নির্বাচন কমিশনারের কাছে উপস্থাপন করেছি। আশা করছি, বন্দর অবিভাজিত এবং আগের মত থাকবে।”

অ্যাডভোকেট শামসুন নূর বাঁধন বলেন, ‘বন্দরের ইউনিয়নগুলো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিভক্ত করে ৩ আসনের করার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরি।

এর আগে এ দাবির পক্ষে দুই হাজারের অধিক বন্দরবাসীর গণস্বাক্ষর কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত প্রস্তাবিত খসড়ায় নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫ আসনের সীমানা পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়। যেখানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের অন্তর্ভূক্ত বন্দর উপজেলাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের এলাকাকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন (সোনারগাঁও) এর সাথে যুক্ত করা এবং বন্দরের সিটি করপোরেশন (নাসিক) অন্তর্ভূক্ত ৯টি ওয়ার্ডকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাথে নারায়ণগঞ্জ সদরের সাথে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। অন্যদিকে সেই প্রস্তাবনায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাদ দিয়ে সদর উপজেলার গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়নকে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। একই সাথে ইসির সেই প্রস্তাবে নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের নয়টি ওয়ার্ডকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নতুন করে সম্পৃক্ত করা হয়। যেগুলো এতদিন নারায়ণগঞ্জ-৪ এর অন্তর্ভূক্ত ছিল। সেই খসড়া প্রকাশের পর এই বিষয়ে আপত্তি জানানোর জন্য ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেন নির্বাচন কমিশন। এই নতুন সীমানা নির্ধারণের প্রস্তাবনার বিপক্ষে বেশকিছু আবেদন জমা পড়ে। তবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বন্দর এলাকার সীমানা নিয়ে বন্দরবাসীর পক্ষ হতে তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। বন্দরকে দ্বিখন্ডিত করার আপত্তি জানিয়ে আবেদন করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এড. আবুল কালাম, তার মেয়ে এড. সামছুন নুর বাঁধন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. মোহাম্মদ আলম খান, মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এড. মো. শরীফুল ইসলাম শিপলু, বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলের ছেলে ব্যারিস্টার রিদওয়ানুর রহমান রিকু ও আমরা বন্দরবাসী সংগঠনের সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার সাঈদ।
 
গতকাল মঙ্গলবার এই বিষয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন ভবনের অডিটোরিয়ামে নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সকল আবেদনকারী বন্দর এলাকাকে বিভক্তির বিপক্ষে ছিলেন বলে বন্দরবাসীর দাবি। একই সাথে নির্বাচন কমিশনের দেশের বিভিন্ন আসনের অন্যান্য শুনানির কাজ শেষ করে এখানকার প্রতিনিধিদের শুনানির উপর ভিত্তি করে ইসির চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করবেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন