বিএনপির দুর্বলতা-আ.লীগের উত্থানে টিটুকে দুষছেন কর্মীরা

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

বিএনপির দুর্বলতা-আ.লীগের উত্থানে টিটুকে দুষছেন কর্মীরা
# ফাঁস হওয়া টেলিগ্রাম গ্রুপটি কুতুবপুর ইউনিয়ন আ.লীগের
# টিটুর নিজ ইউনিয়ন হওয়ায় তার নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনার ঝড়
# ঢাকার মিছিলে কুতুবপুরের ডেভিলদের ব্যাপক উপস্থিতি তারই প্রমাণ
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে কুতুবপুর ইউনিয়ন। ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুর নিজ ইউনিয়ন এই কুতুবপুরেই আওয়ামী দোসররা নিরাপদে রয়েছে এমন অভিযোগে এখন সরব রাজনৈতিক মহল। সম্প্রতি ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক মিছিলে কুতুবপুর থেকে যোগ দেওয়া অসংখ্য নেতাকর্মীদের নাম উঠে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। শহিদুল ইসলাম টিটু বিএনপির একজন আলোচিত নেতা। আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিতে গিয়ে চোখে গুলি খাওয়ার পর তিনি আলোচিত হয়ে যান। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়েও তাকে থাকতে হয়েছিল কারাগারে। ফলে তৃণমূলের প্রকৃত কর্মীরা কীভাবে আন্দোলন চালিয়েছেন, কে জীবন বাজি রেখে মাটিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন তা তিনি সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারেননি। এখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে বরং তাদের শোকজ ও অব্যাহতির মাধ্যমে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর যারা বিতর্কিত, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি কিংবা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগে বহুবার আলোচিত, তাদেরকেই সাথে নিয়ে তিনি দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। এছাড়াও কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের টেলিগ্রাম গ্রুপের ভাইরাল স্ক্রিনশট নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ চলছে।
দেশব্যাপী আলোচিত এই টেলিগ্রাম গ্রুপের স্ক্রিনশটে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর নাম। সূত্র বলছে, শক্তি সঞ্চার করছে কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ । এটি কেবল একটি ভার্চুয়াল বার্তা নয়, বরং কুতুবপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অবস্থান ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে এমন ধারণা আরও জোরালো করছে।
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে টিটুকে নিয়ে। ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি নিজ ইউনিয়নেই আওয়ামী আস্ফালন ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপি'র সমর্থকরা বলছে টিটুর নেতৃত্বে কি তবে কুতুবপুরে বিএনপির ঘাঁটি দুর্বল হয়ে পড়ছে? বিএনপির ভেতরেই এখন টিটুর বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে। আন্দোলনে যারা প্রকৃত অর্থে মাঠে ছিলেন, তাদেরকেই শোকজ বা অব্যাহতির মাধ্যমে দলে কোণঠাসা করার জোরালো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও মাদক ব্যবসা, অপকর্ম কিংবা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত আছে এমন ব্যক্তিদের টিটুর সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যায়। গোটা কুতুবপুরেই আওয়ামী সমর্থিত লোকজন নিরাপদে আছে, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে তৃণমূলের সমর্থকরা মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা। সাধারণ কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন টিটুর নেতৃত্বে কি বিএনপির মূল ঘাঁটি কুতুবপুর ভেঙে পড়ছে? এমনকি গোটা ফতুল্লা বিএনপি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে তার হাতেই?
আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ত্যাগী নেতাদের বাদ দেওয়া হলে মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি শক্তি হারাবে বলে মনে করছে না তৃণমূল বিএনপি নেতা কর্মীরা।
রাজনৈতিক নেতাদের মতে, ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে কুতুবপুর সবসময় বিএনপির একটি শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। অথচ এখন যদি এই ঘাঁটিতেই আওয়ামী প্রভাব বাড়তে শুরু করে, তাহলে সেটি বিএনপির জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত। আর এ ব্যর্থতার দায়ভার স্বাভাবিকভাবেই পড়ছে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুর ওপর। তারা বলছেন, কুতুবপুর এখন রাজনৈতিকভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আওয়ামী দোসররা এখানে নিরাপদে আছে এমন অভিযোগের জবাব দিতে হবে টিটুকে। একইসাথে প্রমাণ করতে হবে, তিনি বিতর্কিতদের নয় বরং তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের নিয়েই সত্যিকারের আন্দোলন গড়ে তুলতে চান। অন্যথায় কুতুবপুরের ব্যর্থতা ফতুল্লা বিএনপির জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আর এর দায় সবটুকুই পড়বে বিএনপি নেতা টিটুর উপর।