Logo
Logo
×

রাজনীতি

তারুণ্যের ছাত্রদল-যুবদলে বাড়ছে হতাশা

Icon

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

তারুণ্যের ছাত্রদল-যুবদলে বাড়ছে হতাশা

তারুণ্যের ছাত্রদল-যুবদলে বাড়ছে হতাশা

Swapno

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর বিগত দিনে সবচাইতে বড় বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি চলে আসলেই তরুণ রাজনীতি সংগঠন হিসেবে পরিচিত যুবদল-ছাত্রদল বিভিন্ন কৌশলে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের ব্যবসা-বানিজ্যে সবই দখলে নিয়ে কোনঠাসা হয়ে পরেছেন। তা ছাড়া সারাদেশ জুড়েই যুবদল-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে দখলবাজি-চাঁদাবাজিসহ শত শত অভিযোগ রয়েছে। এদিকে একক রাজত্ব কায়েমের লক্ষে জেলা যুবদল করছে না ইউনিট কমিটি ও নিজেদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ। অন্যদিকে মহানগর যুবদল ইতিমধ্যে কয়েক দফায় ইউনিট কমিটি গঠনের লক্ষ্যে তোড়জোড় করে বিভিন্ন ওয়ার্ড-ইউনিয়নে কর্মী-সভা করে হঠাৎ তারা ও ঝিমিয়ে পরেছেন। যাকে ঘিরে মূল্যায়ন পাচ্ছে না দলের ত্যাগী কর্মীরা। এদিকে কমিটি গত ২ বছরের অধিক সময় পার হলে ও জেলা ও মহানগর যুবদল বারবারই নিজেদের ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া জেলা ও মহানগর যুবদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা গ্রুপিং বলয় ভিত্তিক রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করায় নারায়ণগঞ্জ থেকে যুবদলের রাজনীতি গতি হারিয়েছে।


এদিকে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের একাধিক হুঁশিয়ারী, দফায় দফায় কর্মী মূল্যায়নের লক্ষ্যে দ্রুত ইউনিট কমিটি ও নিজেদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে একের পর এক নির্দেশনা থাকলে ও কোন প্রকারের কর্ণপাত করছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর পরবর্তীতে বিভিন্ন চাপে নিজেদের কমিটি বিতর্ক এবং যোগ্যদের সমন্বয়ে গঠন করলে ও ইউনিট কমিটি গঠনে নেই কোন প্রকারের ভূমিকা। এদিকে গত রমজানে লোক দেখানো ওয়ার্ড-ইউনিয়ন কমিটিতে কর্মী সম্মেলন করলে ও গত ৬ মাসে পারেনি কমিটি গঠন করতে। যাকে ঘিরে অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে নেতাকর্মীরা, পাচ্ছে না রাজনৈতিক পরিচয়। তা ছাড়া ইতিমধ্যে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কসহ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একের পর এক অভিযোগ ঘুরপাক খাচ্ছে যা নিয়ে উঠছে নানান সমালোচনা। তা ছাড়া দিনে ২০২৩ সালের সালের ২৯ আগস্ট  যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে দায়িত্ব দেয়া হয় আহবায়ক পদে সাদেকুর রহমান সাদেক, যুগ্ম আহবায়ক খাইরুল ইসলাম সজীব ও সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনিকে। কিন্তু ২২ মাসেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি এই তিন মাথার নেতা। কমিটির নেতাদের এমন অবহেলাপূর্ন আচরণে রীতিমত বিরক্ত হয়ে আহবায়ক ও সদস্য সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছিলো যুবদল। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন এক চিঠিতে ৭ দিনের মধ্যে ৫১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। নির্দেশ তামিলে ব্যর্থ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। ৩০ জুনের মধ্যে সেই ডেডলাইন ছিলো তাদের জন্য। এরপরেও কমিটি বাতিল বা সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ধরেই নেয়া যায় জেলা যুবদলের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা পালন করেছেন। বর্তমানে অপেক্ষায় আছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য। এদিকে বর্তমানে আলোচনা উঠছে কোন কারণে যুবদল নেতারা কর্মীদের স্থান দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন তা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। তা ছাড়া গত ১ বছর যাবৎ জেলা ও মহানগর ছাত্রদল নেতৃত্বহীন অবস্থায় হয়ে পরেছেন। কয়েক মাস আগেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করলেও এখন পর্যন্ত ১ বছরে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা হয়নি। এতে হতাশা বাড়ছে কর্মীদের মধ্যে, রাজপথে সক্রিয় ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা হয়ে পড়ছেন উপেক্ষিত। তা ছাড়া গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের ছাত্রদল কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বিলুপ্ত করা হয় উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, কলেজ ও ওয়ার্ড কমিটিসমূহও। ঘোষণার পর থেকেই প্রত্যাশা ছিল দ্রুতই গঠিত হবে নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং সময় গড়ালেও সেই প্রক্রিয়া এখনো অর্ধেক পথেই। আন্দোলনে অগ্রভাগে, অথচ উপেক্ষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যখন বিএনপি দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রায় নিষ্ক্রিয়, ঠিক তখন রাজপথে ছাত্রদলই ছিল দলের মূল ভরসা। অবরোধ, হরতালসহ কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি নারায়ণগঞ্জে সফল করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পুলিশের গুলি, মামলা, গ্রেপ্তার আর নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করে তারা মাঠে ছিলেন বুক চিতিয়ে। অনেকে কারাবরণও করেন, অনেকে বাড়িছাড়া হয়ে জীবন কাটিয়েছেন। তবু সেই সাহসী কর্মীরাই এখন দলীয় আনুষ্ঠানিকতা ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ধীরগতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। মাঠের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আন্দোলনের সময় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরাই যেন ভবিষ্যতের নেতৃত্বে আসেন। এটাই তাদের প্রত্যাশা।


এদিকে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মীরা বর্তমানে যে যার যার মতো করে ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিচালনা করছে আবার অনেকে করছেন চাঁদাবাজি-লুটপাট। যাকে ঘিরে একের এক বিতর্ক ছড়াচ্ছে ছাত্রদল নেতারা। তা ছাড়া বর্তমানে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজমান রয়েছে।এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদল নিয়ে চারটি বিষয় মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রথমত, ছাত্রদলের রাজনীতির ধরণে আমূল পরিবর্তন আনা হবে, যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে দলটি গ্রহণযোগ্য হয়। দ্বিতীয়ত, ৫ আগস্টের সরকার পতনের আন্দোলনে তরুণদের বিপুল ভূমিকা ছিল। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে ছাত্র রাজনীতিতে তরুণদের সক্ষমতা তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, বিএনপির প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্রদলের অগ্রণী ভূমিকা থাকে। তাই আগামী নির্বাচনেও তাদের ভরসাযোগ্য সংগঠনে রূপান্তর ঘটাতে কেন্দ্র কাজ শুরু করেছে। চতুর্থত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা ছাত্রদলের নেতৃত্বে থাকবেন, তারা যেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও অধিকার নিয়েই রাজনীতি করেন, এমন কাঠামো নিশ্চিত করা হবে।


এদিকে গত ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলায় সভাপতি হন নাহিদ হাসান ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকু। মহানগরে সভাপতি হন রাকিবুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইসতিয়াক সিকদার। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন সুলতান মাহমুদ, সাগর সিদ্দিকী, আতা ই রাব্বি, জাকারিয়া ভূঁইয়া, আমিনুল ইসলাম, আবু তাহের রিফাত, মেহেদী হাসান দোলন, শাহাজাদা রতন,আজিজুল ইসলাম রাজিব, ওসমান প্রীতম এবং মো. রাসেল। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের দেড় বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তা বাতিল করা হয়। এদিকে দীর্ঘদিন নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় দলীয় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এমন মত নেতাকর্মীদের। তাদের দাবি, যারা আন্দোলনে ছিলেন, যারা সত্যিকারের ছাত্র রাজনীতি করেন, তাদের মূল্যায়ন করেই যেন কমিটি হয়।


তাদের মতে, কেবল নামধারী ছাত্র নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও সচেতন যুবদেরকেই সামনে আনলে দল সুসংগঠিত হবে। রাজপথে সাহসী নেতৃত্ব দেখানো ছাত্রদল এখন কেন্দ্রের দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু ছাত্রদলের বিতর্কে থাকা নেতাকর্মীরা ছড়াচ্ছে একের পর এক বিতর্ক। তা ছাড়া বর্তমানে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরছেন তরুণ দুই সংগঠনের পদপ্রার্থীসহ আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা পদবঞ্চিত কর্মীরা। এদিকে কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ নানা উত্তেজনা থাকলে ও শেষ পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতি হারিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ থেকে। এদিকে অভিযোগ উঠছে, নারায়ণগঞ্জে সকল ছাত্রদলের পদপ্রার্থীদের নামে একে একে নানান অভিযোগ রয়েছে যাকে ঘিরে আগামীতে বিএনপির ক্লিন ইমেজের রাজনীতিতে ছাত্রদলে স্থান দেওয়ার নেতা সংকট রয়েছে নারায়ণগঞ্জে।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন